আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা

সৃষ্টির মাঝেই স্রষ্টার রহস্য।

বাংলাদেশ সরকারের “খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কার্যক্রম” নামে একটা প্রকল্প আছে। দেশের হতদরিদ্র জনগন খাদ্যের বিনিময়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবে, এই হল উদ্দেশ্য। শিশুরাও খাবারের জন্য স্বেচ্ছা-প্রনোদিত (নাকি প্ররোচিত) হয়ে স্কুলে আসবে। উদ্যোগ মহৎ, সন্দেহ নাই।

কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম যখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটি সেমিনারে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে ছাত্রদের প্রথম (এবং সম্ভবত একমাত্র) প্রশ্ন, “খাওয়াইবো নাকি?” প্রতু্ত্তরটা হতে পারে, “আব্বে হালা, প্রাইভেট ভার্সিটি পড়স, তোর কি টেকা এতই কম নাকি যে খাওয়া কিনা খাইতে পারস না?” কি নিয়ে সেমিনার? কারা আসবেন? আলোচনার বিষয়বস্তু কি? ... এইসব নিয়া কোনই মাথাব্যাথা নাই। প্রোগ্রামিং কনটেস্টগুলোতেও এর প্রবল প্রতাপ বিদ্যমান। প্রবলেমসেটার, সলিউশন, এমনকি স্যোশাল নেটওয়ার্কিং-এর চেয়েও বড় আলোচনার বিষয়, “খাবারের স্বাদ/মান”। প্রায়ই শুনি, “চু** কি খাওয়াটা দিলো, কিছু হইছে.. ফাউল কনটেস্ট, নেক্সট টাইম এইখানে হইলে আর আমু না” আমাদের অডিটোরিয়ামে একটা সেমিনার হয়েছিল। বিষয়টা ছিল খুব সম্ভবত, স্তন ক্যান্সার নিয়ে জনসচেতনতা তৈরী।

আমি কিছুই জানতাম না (জানার কথাও না)। সিএসই ফ্লোরের করিডোরে বসেছিলাম। উদাসীন ভাব ধরে ভাবছিলাম ‘বিশ্বমানবতার মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, রক্ষণশীল পরিবারগুলোতে এর প্রভাব এবং এই বিষয়ে সুশীল সমাজের করণীয়’ নিয়ে (আতেল গ্রুপের সদস্য কিনা)। এমন সময় হাতে কিছু লিফলেট নিয়ে একটা বড় আপু আমার সামনে এসে দাড়ালেন এবং আমাকে একটা দিলেন। না দেখেই সেটা নিলাম (আফটার অল আপু বলে কথা)।

হাতে নিয়ে পড়ে দেখতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল, টাং করে তার দিকে তাকালাম .. আপু কি আমাকে অন্য কিছু মনে করল! আমি কিছু বলার আগেই আপু বলতে শুরু করলেন, “আপনাদের অডিটোরিয়ামে আমাদের আজ একটা সেমিনার হবে। কিছু রিফ্রেশমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছেলে-মেয়ে সবাই আমন্ত্রিত”। আমি আশ্বস্ত হয়ে বললাম, “হুম” পাশে শিমুল ছিল। আপু তাকেও লিফলেট দিলেন।

এবং বললেন, “আপনাদের অডিটোরিয়ামে ...। সেমিনার শেষে রিফ্রেশমেন্ট ...। ” তারপর ছিল ইপ্সিতা আপু। তাকেও দেয়া হল লিফলেট। “....।

আমরা কিন্তু রিফ্রেশমেন্টের ...” শিমুলকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “সমস্যা কি রে ভাই?” সে একটা স্মিতহাস্য দিল। ইমাজিন কাপ নামের একটা কম্পিটিশন হতে যাচ্ছে মাইক্রোসফটের ব্যানারে। যার অ্যাডটা এমন, Bangladeshi Students? Change the world? Yes you can! Poverty. Hunger. Education. Environment. Health. There are many challenges facing our world today, but did you ever imagine you could help solve them? It's true বুঝতে চাইলে অনেক কিছুই বোঝা যায়। আমরা অনেক কিছু বুঝি না তো, তাই বুঝতে পারি না। আমাদের চিন্তাচেতনায় “দারিদ্র্য” এবং “অভাব”-কে অন্তর্নিবিষ্ট করা হয়েছে।

অবস্থা অনেকটা এমন যে, টাকা থাকলেও আমরা গরীবই থাকব, খাবার থাকলেও আমরা ক্ষুধার্ত হব। সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের “চিন্তাচেতনা-র দারিদ্র্যের কারনে”। বড় কিছু করতে গেলে বড় স্বপ্ন থাকতে হয়। খাদ্যের অভাবের ভয়ে আমরা স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাই। সাক্ষীগোপাল হয়ে থাকতে পারলেই আমরা নিরাপদ বোধ করি।

পুতুলনাচের সুতা যেদিন ছিড়ে ফেলতে পারব, সেদিন থেকেই হবে নতুন দিনের শুরু, এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ..

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.