আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাণের মাঝে আয়

গান শুনি তন্ময় হয়ে .. ... ..গাই গুন গুন করে যদি কেউ শুনে ফেলে .. ..

রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনের ছোট্ট জমগাছটা কতো বড় হয়েছে জানি না। পাশের কৃষ্ণচুড়া গাছ কতোটা বুড়ো হয়েছে অনেকদিন দেখা হয়নি। অথচ এদের শেকড় থেকে ডালপালা পর্যন্ত এক সময় আমার মুখস্ত ছিল। কৃষ্ণচুড়া গাছের জেগে ওঠা শেকড়ের ওপর বসে কতো ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছি তার হিসাব নেই। অথচ নরম সোফায় কিছুক্ষণ বসলে অধৈর্য হয়ে পড়ি।

হলের চার তলায় দিনে ছয় / সাতবার দৌড়ে ওঠা ছিল মামুলি ব্যাপার। আর এখন চার তলায় লিফটে উঠেও হাপাতে থাকি। কত সহজেই যে মানুষের বয়স বেড়ে যায়। মনের বয়স কি সবার বাড়ে? বোধ হয় না। না হলে সে সব দিনকে এমনভাবে মিস করি কেন? ছবি, আন্না কেমন আছিস তোরা? এক সপ্তাহের জন্য বাড়ি এলে কেঁদে বুক ভাসাতিস।

এখন কতো বছর দেখা নেই, খারাপ লাগে না তোদের? লিনা, তোর কি একবারও মনে পড়ে না আমার চিকেন পক্সের সময় তুই কিভাবে সেগুলো পরিষ্কার করে আমাকে নিমপাতা বেটে গোসল করাতিস? যেমন ভুলিনি সাবিনা ইয়াসমিন, মাহরুফা আনজুম, জাকিয়া বুলবুল, আম্বিয়া আর তানিয়ার কথা। আমরা তো ছিলাম একই সুতোয় গাঁথা। কখনো ভাবিনি তোদের ছাড়া থাকতে পারব, অথচ দেখ তোদের ছাড়াও দিব্যি ভালো থাকি। আম্বিয়া আর সাবিনা দেখা হলে মেরে হাড্ডি গুড়া করিস না। তোদের এসব নাম বলার জন্য আর এক জনের নামা মনে পড়ছে।

সে বিলকিস আপু। কতদিন যে তোমার খাওয়ার সময় কাশি দিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। অনেক অত্যাচার সয়েছো আমার। তোমার ঐ পঁয়ত্রিশ কেজি শরীরে একবেলা না খেয়ে থাকা আমার জন্য আসলেই ক্রাইমের পর্যায়ে পড়ে। লেখাটা যদি ছাপা হয় জানি তুমি আমার বাসায় এসে বলবে, আমাকে বিলকিস আপু বলে ডাকা এর চেয়ে বড় ক্রাইম।

ময়না আপু, আমাদের নিয়ে লেখা তোমার কবিতাটা হারিয়ে ফেলে এখনো মন খারাপ করি। মন খারাপ করি আমার বার্থডেতে এখন এক কাদি কলা নিয়ে কেউ উইশ করে না বলে। ফয়েজুল ভাইয়ের স্নাক্সে ইচ্ছামতো আড্ডা হয় না বলে। প‌্যারিস রোডে গগনচুড়ার ছায়ায় হাটতে পারি না বলে। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে লাইব্রেরীর বারান্দায় জড়োসড়ো হয়ে বসে বাদাম খাওয়া হয় না বলে।

সুখের দিনগুলো বোধ হয় এমনই ক্ষণস্থায়ী হয়। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে অথবা একাকী বিকেলে সিনেমার মত চোখের সামনে সব কিছু দেখতে পাই। ক্যান্টিনে চা খেতে খেতে হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে কাপসহ রুমে চলে আসা। কম্বল মুড়ি দিয়ে টিভি রুমে টিভি সিক্স চ্যানেল দেখতে যওয়া। অন্যের গরম পানি নিয়ে গোসল করে তারটায় ঠান্ডা পানি মিশিয়ে রাখা।

কেউ চায়ের পানি গরম দিলে এক কাপ পানি বেশী মিশিয়ে দেয়া যাতে আমারটা কম না পড়ে। আম খাওয়ার হুড়োহুড়িতে আমার প্রথম হওয়া। এক সঙ্গে বেশী খেতে না পারলে স্কার্টের পকেটে চালান করে দেয়া। সব কিছু খুব মনে পড়ে আর খুব মিস করি তোদের সবাইকে। তাই তো এখনো মাঝে মধ্যে আপন মনে গেয়ে উঠি - আয়া আর একটি বার আয়রে সখা প্রাণের মাঝে আয় মোরা সুখের দুঃখের কথা কব প্রাণ জুড়াবে তাই .. .. .. . ।

** আমার এ লেখাটি "মৌচাকে ঢিল" এর "ফুল" সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। ব্লগের সবার সাথে শেয়ার করলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।