আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ : দিল্লী থেকে অমৃতসর ... স্বর্ণমন্দির ছুঁয়ে একটি ঝটিকা সফর - ৪র্থ পর্ব

মোমার্ত

১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব মন্দির বেরোতে বেরোতে ১১টা বেজে গেল। অমৃতসরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য আমাদের হাতে মাত্র ৬ ঘন্টা আছে । কারণ সন্ধ্যার আগে আগে বেশিরভাগ স্থান বন্ধ হয়ে যায়। শহর দেখা শুরু করার আগে আমাদের ফেরাটা নিশ্চিত করতে দিল্লীগামী বাসের টিকেট কেটে ফেল্লাম। অমৃতসরে দেখার অনেক কিছুই আছে।

কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে আমরা মাত্র তিনটা জায়গা দেখবো বলে ঠিক করলাম - স্বর্ণমন্দির, ওয়াগা বর্ডার ও জালিওয়ানওয়ালাবাগ। বার বার স্বর্ণমন্দিরের কথা বলছিলাম দেখে আমাদের ড্রাইভার ও গাইড যশওয়ান্ত মিয়া ধরে নিল আমরা বোধহয় শহরের সব মন্দিরস্থাপনাগুলো দেখতে আগ্রহী। প্রথমে নিয়ে গেল ছোট একটা মন্দিরে। নাম লাল দেবী মাতা মন্দির। হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য হলেও সন্তান কামনায় এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ এসে থাকেন।

এরপর নিয়ে গেল দূর্গা দেবী মন্দিরে। ওখানে প্রবেশ করে প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটাই বুঝি স্বর্ণমন্দির। কারণ স্বর্ণমন্দিরের যে ছবি দেখেছিলাম দূর্গামন্দিরটা হুবহু সে রকম। পরে অবশ্য ভুল ভেঙ্গেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এই মন্দিরের ডিজাইন শিখ স্বর্ণমন্দিরের একটা দূর্বল অনুকরণ।

স্বর্ণমন্দির দুটো জায়গা দেখতেই আমাদের ২ ঘন্টা খরচ হয়ে গেল। যশওয়ান্তকে দিলাম ঝাড়ি ... সিধা সরন্ মান্দির চল্ যাও। সাথে বাংলায় যোগ করলাম ... ডাইনে বাঁয়ে যাবাতো খবর আছে। যথারীতি সরল হাসি দিয়ে অটো টান দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমাদের কাংখিত স্বর্ণ মন্দিরে।

পূর্বদিকের প্রধান গেইট দিয়ে প্রবেশ করে এর বিশালত্ব দেখে অবাক হলাম। ১৫৭৪ সালে ৪র্থ শিখ গুরু রামদাশ স্বর্ণমন্দির ও অমৃতসর শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এর জন্য জমি দান করেছিলেন সম্রাট আকবর। ১৫৮৮ সালে মন্দিরটা পূর্ণাঙ্গরূপে নির্মিত হয় ৫ম গুরু অর্জুন দেব কর্তৃক। মজার ব্যাপার, নতুনরূপে নির্মিত মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত করেন অর্জুন দেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেসময়ের লাহোরের এক বিখ্যাত মুসলিম সাধক হযরত মিয়া মির।

সরোবরের মাঝে অবস্থিত দুইতলা মন্দিরটির প্রথম তলা মার্বেল পাথরে তৈরী। দোতলার বাইরের দেয়াল ২৪ ক্যারেট সোনার পাত দিয়ে মোড়ানো। ১৮৩০ সালে পাঞ্জাবের মহারাজা রনজিত সিং ১০০ কেজি সোনা এ উদ্দেশ্যে দান করেন। ১৯৯৯ সালে পুরোনো সোনার পাতগুলো পরিবর্তন করে নতুন স্বর্ণপাত দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়। মন্দিরে দানকৃত স্বর্ণালংকার থেকে এই বিপুল পরিমাণ সোনা সংগ্রহ করা হয়।

মন্দিরের চারদিকে চারটি প্রবেশপথ আছে। এর মানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সবদিকে দিয়ে এখানে প্রবেশ করতে পারবে। প্রবেশের সময় খালি পায়ে মাথা ঢেকে রাখার নিয়ম। ভিতরে এ্যালকোহল, ধূমপান বা যে কোন ধরণের মাদক ব্যবহার এবং মাংস ভক্ষণ সম্পূর্ণ নি্ষিদ্ধ। সকাল ৬টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে।

সারাদিন কাটিয়ে দেয়া যায় এরকম একটা জায়গা এই স্বর্ণমন্দির। ঠিক করলাম, ম্যাক্সিমাম সময় এখানে থাকবো। দরকার হলে আর কোথাও যাবো না। চলবে ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।