আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেলানীর পরিণতি ক্ষমা প্রার্থনায় সীমাবদ্ধ নয়!

তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু; তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, হাসি বিনিময় করে চলে যায় উত্তরে দক্ষিণে; তুমি যেই এসে দাঁড়ালে - কেউ চিনলো না, কেউ দেখলো না; সবাই সবার অচেনা।

বর্ডার কিলিং, বি.এস. এফ., বি.ডি.আর, ফেলানী - সময়ের আলোচ্য বিষয়। ব্লগে ব্লগে আলোচনা, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি এবং এরই মাঝে আমাদের (বাংলাদেশী) প্রতিবাদ কার্যক্রম। একজন কিশোরীর নির্মম মৃত্যু সম্মুখে উদ্ভাসিত করেছে অতীতের আরো নির্মমতাকে। যার ফলশ্রুতিতে নির্বিচার সীমান্ত হত্যার বিচারের দাবি, প্রতিরোধের দাবি উঠে এসেছে।

এসকল দাবি ছাপিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমা প্রার্থনা-ই এখন মুখ্য, আর মুখ্য তদন্তপূর্বক বিচারের আশ্বাস! সেই তদন্তও আবার হবে ভারতে! পূর্বে এরকম কতবার আমরা আশ্বাস পেয়েছি, তা পর্যালোচনা করলে এটাই প্রতীয়মান যে, আবারো একজন ফেলানী সময়ের তলে হারিয়ে যাবে এবং ব্লগসহ আলোচনায় হয়তোবা নতুন বিষয় হাজির হবে। ভারতের দেয়া এ আশ্বাস যে কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিম্নোক্ত লিঙ্ক দেখলে বোঝা যায় -- এবার অপহরণের শিকার কিশোর! যেদিন একদিকে ভারত আশ্বাস দিচ্ছে পুনর্বার ভুল না করার, ঠিক সেদিনই আর একজন নির্মমতার শিকার হতে চলেছে হয়তো! বাহ! আর আমরা আশ্বাসের মূলা নাকের সামনে রেখে ভুল ক্ষমা করার এক মহান দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি! অনেকেই আবার বলছেন, সীমান্তে অবৈধভাবে প্রবেশ না বন্ধ করলে বি. এস. এফ- এর দোষ কি?! দুটি দেশের মধ্যবর্তী সীমান্তে কোনরূপ অবৈধ অনুপ্রবেশ থাকবে না- এরকম মুখোশধারী আদর্শবাদী চিন্তা শুধুমাত্র বোধহয় দাদা-দের পক্ষেই করা সম্ভব! তাই বলে ভাববেন না, আমি তা সমর্থন করছি। সেই অবৈধ হারটা কমিয়ে আনা সকলেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু বি.এস.এফ শুধুমাত্র সীমান্ত রক্ষায় মানুষ খুন করছে নাকি পৈশাচিকতার স্বাদে উন্মত্ত হয়ে নিরস্ত্র মানুষ খুন করছে; তা বোঝা যায় নিহত প্রাণের সংখ্যা হিসাব করে! বছরে গড়ে ১৩০-১৪০ বাংলাদেশী সীমান্ত হত্যার শিকার! ২০১০-এ এ সংখ্যা ছিলো ১০৫ জন! ২০১১-এ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত, দুই সপ্তাহে ৭ জন বাংলাদশী হত্যার শিকার, ৮ম কিশোর অপহৃত! অথচ ভারত থেকে পাচারকৃত ফেনসিডিল, মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক সরঞ্জাম বন্ধ করার ক্ষেত্রে বি.এস.এফ নীরব! অবশ্য তাদের সীমান্ত রক্ষার নমুনা বা ধরনই এরকম। [তথ্য:: বাংলাদেশ নিউজ 24x7] আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তেও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ে আমেরিকার হাতে! কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মতো নির্মম পরিণতির শিকার তারা নয়।

শাস্তি এবং দেশের কাছে হস্তান্তরে তা সীমাবদ্ধ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলতে চায়, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ... ! বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা ভুল বছরে ১৪০ বার ঘটে!!! বোধহীন তারা? নাকি মানবতাহীন পশু? অথচ আমরা চুপ! আমরা উল্লসিত কারণ ভারত ক্ষমাপ্রার্থী! বি.এস.এফ-এর এই নৃশংসতা যেখানে আন্তর্জাতিক চিন্তার বিষয় (কানাডা পর্যন্ত বি.এস.এফ এর নৃশংসতায় তাদের ভিসা দিতে নারাজ। ), সেখানে বাংলাদেশের চামচাদের কাছে তা আশ্বাসের জন্য অনুরোধের বিষয়! পেত্তম আলোয় সীমান্ত হত্যা শেষ পাতায়! প্রথম পাতায় ঠাঁই নাই! বছরের পর বছর হত্যাযজ্ঞ চললেও কেন সরকার ব্যবস্থাগুলো আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দাবি করছে না, তা ভাববার বিষয়! কেন রাষ্ট্র বি.এস.এফ কে দায়ী করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ICC) মামলা করছে না সেটাও চিন্তার বিষয়!! নাকি প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখার জন্য বছরে ১০০ প্রাণ আমরা খাজনা দিয়ে চলেছি ... ?! বহির্দেশীয় সুসম্পর্ক রাখতে মানবতাকে উপেক্ষা করছি!? হয়তোবা তাই ... কিন্তু এতক্ষণের বাগাড়ম্বরের কারণ হলো, রাষ্ট্রব্যবস্থার উপর আশ্বাস হারিয়ে কোন মানবাধিকার সংস্থার দৃষ্টিগোচর হওয়া। মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি তোলা, বি.এস.এফ-কে দায়ী করা। এতেও হয়তো কোন কাজ হবে না কিন্তু বিশ্ব জানুক, ভারত সরকার জানুক; বাংলাদেশের জনগণ তাদের সরকারব্যবস্থার ন্যায় পুতুল নয়, ভীত নয়; জনগণের প্রতিবাদ করার সাহস আছে।

সরকারব্যবস্থার দুর্বলতা অতিক্রম করে তারা আঘাত হানতে জানে .....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.