আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউনিপে ২ ইউ এবং বাংলাদেশের বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশ।



আমার এক বন্ধু সৌদি আরব প্রবাসী, এখানে সে ভালো মানের বেতন পেতেন। অনেক দিন প্রবাস জীবনে থেকে এক রকম বিরক্ত হয়েই চিন্তা করলো দেশে ব্যবসা করে মা স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাকি জীবনটা কেটে দিবে, সে সৌদিতে একটা দোকানে চাকুরী করতো। তার ইচ্ছা ছিল দেশে গিয়ে সুপার মার্কেটের মতো মাঝারি ধরনের দোকান দিবে, তার কাছে ঐ রকম ব্যবসায় বিনিয়োগ করার মতো টাকাও ছিল। সে ভালো মানের ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নিয়েই সৌদি আরব ত্যাগ করে। কিন্তু দেশে যাওয়ার পর দেশের পরিস্থিতি তাকে ভাবিয়ে তুলে, সে দেশে যাওয়ার পর পর আওয়ামী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে ।

তার ভাবনা অনুযায়ী সুপার মার্কেট করতে গেলে কত প্রকারের ঝামেলা আসতে পারে সব চিন্তার শেষে একটা কন জুমার কোম্পানির থানা পর্যায়ে এজেন্ট নেয়, তার মোটামুটি আয় ও হচ্ছে। কিন্তু দোকান গুলোতে মাল দেওয়ার পর টাকা উঠিয়ে আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়। যে দোকানের মালিক ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করে, তার কাছে টাকা চাওয়াটাও মাঝে মধ্যে অপরাধ হয়ে দাড়ায়। তারপরও সে থেমে থাকছে না, যে ভাবে পারছে মানিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করতেছে, কিন্তু এই ব্যবসায় সে তার সব টাকা বিনিয়োগ করতে পারেনি। অবশিষ্ট টাকা সে তার এক নিকট আত্মীয়কে দেয় এবং তার ঐ আত্মীয় জমি বেচা কেনার ধান্দা করে , কিন্তু বছর শেষ হয়ে গেলেও সে যা মানুষের কাছে শুনে ঐ রকম লাভের কোন অংশ তার আত্মীয় থেকে পায়না।

নিজের পরিবার থেকেও তেমন শান্তি পাচ্ছেনা, সে মনে করতেছে তার পরিবারের অশান্তির কারণ হচ্ছে মোবাইল ফোন এবং টিভি মিডিয়া বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের টিভি মিডিয়া, তার ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের দয়ামায়া কমে গেছে, নৈতিক শিক্ষা নেই বললেই ছলে এবং সবাই টাকার পিছনে ছুটছে। একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ইউনিপে ২ ইউ এর ওয়েব সাইটটি দেখার জন্যে, এবং বিস্তারিত বলে যে তারা নাকি অনেক লাভ দিচ্ছে, আমি তাকে বলি, ভাই প্রথম কথা হচ্ছে এইটা মনে হয় সুদের পর্যায়ে পড়ে। সে আমাকে বলে তারা বলেছে যে এইটা একটা ব্যবসা, গোল্ডের ব্যবসা, ব্যবসা তো সুদ নয় এবং লাভও কম না। ইন্টারনেটে সে নিজে দেখতে পারবে তার ব্যবসায় কত লাভ এসেছে। আমি ওয়েবে দেখি তাদের ব্যবসা শুধু বাংলাদেশে না অন্য আরও কয়েকটি দেশে আছে।

তারপর আমি তাকে বলি যেহেতু কোম্পানিটি নতুন এবং অবিশ্বাস লাভ দিচ্ছে সেহেতু ভাবতে হবে, এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা কতটা নিরাপদ। বর্তমান সরকার কি তাদের কে বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্যে লাইসেন্স দিয়াছে কিনা তা জেনে নিন। সে বলে লাইসেন্স না দিলে তারা কি ভাবে চিন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করে। সে বলে তাদের ঐ খানেও মিটিং করেছে অনেক নামি দামি লোকরাও বিনিয়োগ করতেছে, তাদের টাকা মেরে খাওয়া যেহেতু সহজ না, সেহেতু তার টাকাও মাইর যাওয়ার সম্ভাবনা কম। জানিনা বন্ধুটি বিনিয়োগ করেছে কি না।

আমি আমাদের প্রবাসীদের কথা বলবো। আমরা বিদেশে আসি জমি জমা বিক্রি করে। নিজের জীবনের অনেক বড় একটা অংশ শেষ করে কিছু টাকা কামাই করি এবং যখন দেখি নিজের বয়স হয়ে গেছে চল্লিশ থেকে পাঁচ চল্লিশ , তখন নিজের জীবনের হিসাব কসতে গেলে সব কিছু এলোমেলো দেখায়। দেখাযায় বিয়ে করেছে দশ পনের বছর কিন্তু স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিন কেটেছে ছয়মাস কিংবা বছর। তখন নিজের প্রবাস জীবনের কি মূল্য ঐ চিন্তা করতে করতে দেশে কিছু করার লক্ষ নিয়ে প্রবাস থেকে বিদায় নেয়।

বর্তমানে দেশে ছোট খাটো ব্যবসা করাও অনেক ঝামেলা। টেক্স দিতে হয় পাতি নেতা থেকে রুই কাতলা পর্যন্ত। হরতাল সন্ত্রাস ভাংচুর এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নৈতিক শিক্ষার অভাব থাকায়, হারাম হালালের চিন্তা না করায়, শান্তি মতো ব্যবসা করাওটাও বিশাল সমস্যা। দেশে বিনিয়োগের সুস্থ পরিবেশ না পেয়ে, হয়তো হায়হায় কোম্পানির হাতে প্রতারণায় শিকার হতে হয়। আর না হয়, না বুঝে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারিত হতে হয়।

যে খানে মানুষ নিজ পরিবার, নিজ দেশের সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে নিরাপদ নয়, এই অবস্থায় মানুষ কোথায় যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.