আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিঠিটা... (শেষ পরিচ্ছেদ)

হিজিবিজি

আগের পর্ব: চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ১) চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ২) চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৩) চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৪) একে একে সবাই আসতে লাগল। ইয়াসিন "কবিয়াল" তার স্বরচিত কবিতা শোনানোর স্বভাবটা ছাড়তে পারেনি। মাঝে মাঝে সত্যিই ভাল লেখে ছেলেটা। কিন্তু যখন তখন ওর এই জবরদস্তি কবিতা শোনানোর স্বভাবটা ওকে সবার বিদ্রুপের পাত্র করে তুলেছিল। সবাই যখন ওকে নিয়ে খোরাক করছে তখন আমার অস্থির চোখ খুঁজছে অন্তরাকে।

এখনো কেন এলনা! কাউকে জিজ্ঞাসাও করতে পারছিনা, আওয়াজ খাবার ভয়ে। অবশেষে যখন আমরা সমাবর্তন স্থলে আচার্যের ভাষণ শুনছি তখন ও এল। শুরু হল নতুন অস্বস্তি। চোখাচোখি করতে লজ্জা লাগছিল। ও নিশ্চয় আমার চিঠি পড়েছে।

কি ভাবছে! ওর উত্তর জানতে মন ব্যাকুল। কিন্তু আরও কয়েক ঘন্টার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সন্ধ্যেবেলা আমাদের ব্যাচের পার্টিতে যদি ও সেই প্রথমদিনের আকাশি নীল শাড়িতে আসে তাহলে উত্তর - হ্যাঁ; নয়তো... এটাই লিখেছিলাম চিঠিতে। কারণ আমার প্রশ্ন নিয়ে ওর সামনা-সামনি দাঁড়ানোর মেরুদন্ড নেই আমার। এটাই সহজ পন্থা।

তাই সমাবর্তন শেষ হতেই তাড়াতাড়ি দুরে সরে যাই অন্য বিভাগের বন্ধুদের দিকে। এড়িয়ে থাকি, দূরে থাকি। অনেকটা স্বস্তি লাগছে এখন। ও ভাল আছে, এটাই যথেষ্ট। *** বিকেলেও সকালের মতই আমরা কয়েকজনই তাড়াতাড়ি পৌঁছেছিলাম।

যদিও আমার আগে পৌঁছানোর আলাদা কারণ ছিল। কিন্তু যথারীতি অন্তরা এবারও দেরি করছিল। দুপুরে ঘুমিয়ে আমিও বেপরোয়া। এবার এস্পার-ওস্পার করেই ছাড়ব। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনেই আয়োজন হয়েছে।

ক্যান্টিনের এককোনে সুমন তার রসের গল্প নিয়ে আসর জমিয়ে বসেছে। সময় কাটানোর জন্য ওখানেই গিয়ে বসলাম। অনুজ এসে আমার পাশে বসল। জনান্তিকে জিজ্ঞাসা করল, "কি রে? কি অবস্থা?" একমাত্র অনুজই জানত আমার চিঠির কথাটা। কিন্তু আমারই মত অনুজও ভিনরাজ্যে ছিল এই ক'মাস।

তাই ওর কাছে আমাকে দেবার মত কোনো খবর ছিল না। কাষ্ঠহাসি হেসে বললাম, "দম দেওয়া বেলুনের মত অবস্থা। হাওয়া ছেড়ে দিলে উড়ে যাব। চাপ দিলে ফেটে যাব। " কিছু না বলে ও আমার পিঠে আলতো আশ্বাসের চাপড় দিল।

কতক্ষণ সময় কেটে গেছিল জানিনা। হঠাৎ ক্যান্টিনের দরজার দিকে চোখ যেতেই পাথর হয়ে গেলাম। অন্তরা ঢুকছে। পাশে বিকাশ। অসাধারণ সেজেছিল ও।

কিন্তু একি!! সেই নীল শাড়িটা কোথায়? এতো লাল-হলুদ - আগুন রঙা শাড়ি!! কি ভীষণ প্রতিকী!! ঐ আগুনে আমার হৃদয় যেন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সুমন হাঁক ছাড়ল, "এই যে দ্যাবা-দেবী এসেছেন!" ওরা হেসে অন্যদিকে চলে গেল। অনুজ আমার হয়ে ন্যাকা সেজে জিজ্ঞাসা করল,"কি ব্যাপার?" সুযোগ পেয়ে সুমন তারিয়ে তারিয়ে বলতে লাগল অন্তরা আর বিকাশের ঝোড়ো প্রেমকাহিনী। কিভাবে আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন পর সবাই মিলে সিনেমা দেখতে গিয়ে বিকাশ নাটকীয় ভাবে অন্তরাকে প্রেম নিবেদন করে। কি ভাবে অন্তরা সেটা স্বীকার করে ইত্যাদি, ইত্যাদি।

গরম সীসার মত কানে ঢুকছিল কথাগুলো। তখনি বাড়ি চলে আসতাম; অনুজ চেপে ধরে রাখল। কারণ এভাবে হঠাৎ করে চলে গেলে সবার নজরে আসবে ব্যাপারটা। তারপর বাইরে মাঠে নিয়ে গিয়ে বোঝাতে লাগল, "দেখ তুই ওকে তোর মনের কথা বলেছিস। এবার যে কোনো কারণেই হোক ওর তোকে পছন্দ হয়নি।

ঠিক আছে। ভুলে যা। সবচেয়ে বড় কথা, তুই এমন কাউকে হারালি যে তোকে ভালবাসত না। ও কিন্তু এমন একজনকে হারালো যে ওকে ভালবাসত। ক্ষতিটা কার?" এত কষ্টেও হাসি পেল।

ম্লান হেসে বললাম, "কেতাবি বাণী তো ভালই ঝাড়তে শিখেছিস। তবে হ্যাঁ, মোক্ষম যুক্তি দিয়েছিস। অন্ততঃ আমি চেষ্টা করেছিলাম। এটাই আমার সান্তনা। " মুখে বললাম বটে তবে মন কি মানে? সারারাত ঘুম হল না।

খালি মনে হচ্ছিল, কেন? কেন?? কেন??? আর বারবার মনকে প্রবোধ দিচ্ছিলাম আমার মনের ভাবটাতো অন্ততঃ ওকে বলেছি। এবার ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান দিতেই হবে। *** পরের দিন আমার ফিরে যাবার ছিল। বিকেলে ট্রেন। মা তাই সকাল থেকে আমায় তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিল।

তাতে একটা সুবিধা হচ্ছিল। চিন্তা করারই সময় পাচ্ছিলাম না। দুপুরে স্নানে যাবার আগে আমার পড়ার টেবিল গোছাতে গেলাম। প্রয়োজনীয় আর অপ্রয়োজনীয় দুইভাগে সব বইপত্র ভাগ করছিলাম। টিনের সুটকেসটা থেকে সব ভাঙ্গা রং পেন্সিল ফেলে দিলাম।

কলেজের কালো ব্যাগটার অবস্থা খুবই করুণ লাগল। ফেলেই দিচ্ছিলাম তাও একবার পরম মমতায় হাতে তুলে নিলাম। হঠাৎ মনে হল ব্যাগের ভেতর কি যেন একটা আছে! চেনটা খুলে ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেখি অন্তরাকে লেখা আমার সেই চিঠিটা!! এক মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। শেষ পরীক্ষার দিন বই থেকে চিঠিটা বাসের মধ্যে বারবার বের করছিলাম আর ঢুকিয়ে রাখছিলাম। সেই সময়ই কোনো ভাবে ওটা ব্যাগের মধ্যে পড়ে যায়।

তাই অন্তরা শুধু বইটাই পায়; চিঠিটা নয়। তাই ও কোনোদিন জানতেই পারেনি আমার মনের কথা। বিধাতা, এটাই বাকি ছিল?!! চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছিল। একছুটে বাথরুম। শাওয়ারের জল আর চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।

(শেষ)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.