আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ -৩)

হিজিবিজি

আগের পর্ব: চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ১) চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ২) বাস থেকে নেমে, অভ্যাসমত অজিতের গুমটির দিকে এগিয়ে যাই। সিগারেট ধরিয়ে ঘুরে দেখি সুমন ডাকছে বিশুর চায়ের দোকান থেকে। -"ওস্তাদ! চা হবে?" -"বল, এক দাগ। " -"আরে, মুখ এত শুকিয়ে গেছে কেন রে? পরীক্ষা তো আমরাও দিচ্ছি!" -"নাঃ, এই কদিন ধরে রাত জেগে একটু বেশি পড়ছি, তাই হয়ত..." আমার সাবধানী উত্তর। সুমন আরো কিছু বলছিল হয়ত, কিন্তু আমি আবার অন্য মনস্ক হয়ে পড়লাম।

*** দ্বিতীয় বর্ষের field trip থেকে ফিরেছি মাস খানেক হল। Study Leave-এর কিছুদিন আগে common room-এর সামনের অশ্বথ গাছের ছায়ায় বসে অনুজ আমায় প্রশ্নটা করল। - "তুই কি অন্তরাকে ভালবাসিস?" হকচকিয়ে গেছিলাম। কারণ এর আগে বিষয়টা নিয়ে ভেবে দেখিনি। ও বলার পর মনে হল, তাইতো! আমরা তো প্রেমীযুগলের মতই ঘুরে বেড়াই! অথচ আমি ভাবতাম আমরা শুধু ভাল বন্ধু! মুখে বললাম, "যাঃ কি যে বলিস? Just friends!" -"শুধুই বন্ধু? তাহলে একদিন অন্তরা কলেজে না এলে তুই ওরকম ঝিমিয়ে থাকিস কেন? বন্ধুরা সবাই একসাথে থাকলে তুই সবসময় ওর পাসেই থাকিস কেন? ক্লাসে তো আরো সাত সাতটা মেয়ে আছে।

তাদের কারোর পোষাকের ব্যাপারে তোকে কোনোদিন কোনো conpliment দিতে দেখলাম না কেন?" -"দাঁড়া দাঁড়া। এত প্রশ্ন? একে একে উত্তর দিই। ..." -"লাভ নেই। তোর ঐ একটা অস্বীকার, প্রশ্নের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে। প্রশ্নের তোড়ে ভেসে যাবি রে পাগলা!" স্বীকার করতেই হল এই সম্পর্ক শুধুমাত্র বন্ধুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

সেই সঙ্গে এটাও বললাম যে বন্ধুত্বের বাইরে এর আগে আর কিছু ভাবিনি। এখন যদিও ভাবছি কিন্তু জানি এটা ভাবনাই থেকে যাবে। প্রথমতঃ আমাদের দুজনের মধ্যে আছে সেই চিরন্তন আর্থসামাজিক ব্যবধান। অন্তরার বাবা একজন সফল শিল্পপতি। সেখানে আমার হল মধ্যবিত্ত পরিবার।

এছাড়া ও পড়াশোনায় আমার থেকে ঢের ভাল। ওর ভবিষ্যৎ যেখানে চকচকে সেখানে আমার চূড়ান্ত অনিশ্চিত। হৃদয় উজাড় করে সব বলে ফেললাম অনুজকে। আপাত শুকনো খেজুর গাছের মত আমার মনে, অনুজের ক্ষুরধার প্রশ্নের আঘাতে ঝরঝর করে আবেগ বেরিয়ে এল। অনেকক্ষণ দুজনে চুপ করে বসে রইলাম।

-"তা এখন যখন জানলি, এবার কি করবি ঠিক করেছিস?" -"কি আবার! বললাম তো তোকে, সম্ভব নয়। যেমন চলছে আপাতত তেমনি চলবে। কোর্স শেষ হলে, আর কখনো দেখা না হবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে, যে যার নিজের পথ ধরব। " -"বাঃ! তুই তো আধুনিক দেবদাস হয়ে গেলি রে!! এভাবে কেউ হাল ছাড়ে? একবার শেষ পর্যন্ত তো দেখ! নিজেকে ওর যোগ্য করার চেষ্টা তো কর!" অনুজের প্রেরণাতেই দুজনে মিলে একসাথে প্রচন্ড পরিশ্রম করে MBA-এর প্রস্তুতি। ছ'মাস অন্য কোনদিকে জ্ঞান ছিল না।

কাউকে বলিনি। যদি না হয়? মুখ দেখাতে পারব না। এমনকি অন্তরার সাথেও বেশি কথা বলতাম না বলে ও অনুযোগ করত, "তোর কি হয়েছে রে? একেবারে গোমড়াথেরিয়াম হয়ে গেছিস যে রে!" কাষ্ঠ হেসে বলতাম, "এটাই শেষ বছর তো, তাই আপ্রাণ চেষ্টা করছি যাতে ফার্স্ট ক্লাসটা থাকে। " MBA প্রবেশিকা ভালই হয়েছিল। ঘর ছাড়তে হবে।

যেতে হবে ভিনরাজ্যে। আর তা যেতে হবে, এই ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবার দুদিনের মধ্যে। তাই আজকের এই দিনটা এই গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে আর অন্তরার সাথে দেখা হবে না। সেই সমাবর্তনে আবার দেখা হবে।

ছয়মাসের প্রতিক্ষা। (চলবে...) পরের পর্ব: চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৪)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.