আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ২)

হিজিবিজি

আগের পর্ব: চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ১) আমাদের পাঠক্রমের অন্তর্গত ছিল বাৎসরিক field trip। মানে বছরে একবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে পাথরের পাঠ। এতে শারীরিক ধকল ছিল ষোলোআনা। কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল বেড়াতে যাবার মজা। তবে যেকোনো জিনিসই প্রথমবার একটু সমস্যার।

অজানার ভয়। আমার যেমন ভয় ছিল, 'এতগুলো মেয়েও আমাদের সঙ্গে যাবে?! আমরা একসাথে রাত কাটাবো???' কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। তবে উত্তর পেতে দেরি হয় নি। আমার এক সহপাঠিনীর বাবা এলেন আমাদের প্রধান অধ্যাপকের সাথে দেখা করতে। রাশভারি চেহারা।

-"দেখুন আমাদের একটু রক্ষণশীল পরিবার। আমার মেয়ে আগে কখনো বাড়ির বাইরে রাত কাটায়নি। এখানে এতগুলো ছেলের সাথে...Field-এ না গেলে কোনো অসুবিধা আছে?" অধ্যাপকের ঠান্ডা গলায় উত্তর ছিল, "আমাদের এখানে সব ভদ্রঘরের ছেলেরা পড়তে আসে, সঙ্গে দুজন শিক্ষক থাকবেন, তা ছাড়া প্রতি বছরই আমরা যাই। আজ পর্যন্ত্ কোনো সমস্যা হয়নি। এরপরও আপনি যদি আপনার মেয়েকে না পাঠান তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, শুধু যে যে বছর আপনার মেয়ে যাবে না সে সে বছর ও পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।

কারণ field trip বাধ্যতামূলক। " সেই যে ভদ্রলোক গেলেন, তারপর ওনাকে দেখলাম আমাদের যাত্রার দিন ষ্টেশনে; মেয়েকে ছাড়তে এসেছিলেন। Field-এ আমাদের ছোট ছোট চারজনের দলে ভাগ করে দেওয়া হত। ঐ দল একসাথে মাঠে-ঘাটে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যেবেলা report বানাতে হত। তারপর রাতে বাকিদের সাথে মিলে হত ফুর্তি।

নিয়তির লিখন ছিল কিনা জানি না, প্রথমবারই আমি আর অন্তরা এক দলে পড়েছিলাম, যা কিনা পরের দুবছরও বজায় ছিল। এভাবেই আমরা পারস্পরিক নির্ভরতার সিঁড়ি বেয়ে প্রথমে সখ্যতা ও পরে গভীর বন্ধুত্বে উপনীত হয়েছিলাম। আমাদের এই সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে অনুঘটকের কাজ করেছে আমাদের সহপাঠীরা। বিশেষ করে সুমনের কথা মনে পড়ে। স্বভাব রসিক ছেলেটা আমাদের সম্পর্কের প্রাথমিক আড়ষ্টতার বরফ গলাতে সাহায্য করেছিল।

মনে আছে first year field-এর গোটা সময়টা ও যতক্ষণ জেগে থাকত, একটা রোদচশমা পরে কাটিয়েছিল যার ডানদিকের কাচটা ছিলনা। অন্তরা একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল," তুই এরকম sunglass কেন পরিস রে? একটা ভাল sunglass পরলেই তো পারিস। " সুমনের ঝটিকা উত্তর ছিল,"তাহলে তো আর এই অসাধারণ কেতটা মারা যাবে না। দিনের বেলা বামদিকের রঙিন কাঁচ দিয়ে দেখি আর রাতে ডানদিকের ফাঁকটা দিয়ে। দুটোই এক চোখে।

" -"এক চোখে দেখতে অসুবিধা হয় না?" -"কি যে বলিস! মেয়েদের চোখ মেরে মেরে চোখ সেট হয়ে গেছে। " আমরা তিনজনেই হেসে গড়িয়ে পড়েছিলাম। field থেকে ফিরেও আমাদের একসাথে পড়াশোনা করার অভ্যাসটা থেকে যায়। আমাদের সাথে অনুজও পড়ত - কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে, কখনো প্রধান পাঠাগারে, কখনো ক্লাসের শেষে ফাঁকা ঘরে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চলত হালকা হাসি, টুকরো কথা আর খুচরো খুনসুটি।

(চলবে...) পরের পর্ব: চিঠিটা... (পরিচ্ছেদ - ৩)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.