আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যি সেলুকাস,বিচিত্র এই দেশ!!!!!!!



কয়েক মাস আগে ভারতীয় ছবি আমদানি নিয়ে দেশে একরকম তোলপাড়ই হয়ে গেল। চলচ্চিত্র শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রবল চাপ এবং রাজনৈতিক কারণে সরকার শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয়। হল মালিকেরা হলে ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের ব্যাপারে একটা সময় পর্যন্ত অনড় থাকলেও সরকারের ইচ্ছার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। ভারতীয় ছবি আমদানির ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মূল আপত্তির বিষয়গুলো হচ্ছে হলে ভারতীয় ছবি চললে দেশীয ছবি হুমকির(প্রতিযোগিতা) মুখে পড়বে (প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিযোগিতা কি খারাপ?),দেশে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন হবে(তা হতে কি আর বাকি আছে কিছু? উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের প্রত্যেকের মোবাইলেই এখন নানা আপত্তিকর জিনিস পাওয়া যাবে। বড়দের কথা না হয় বাদই দিলাম।

বিবাহপূর্ব/বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক তো এখন ডালভাত!! ),দেশে চলচ্চিতত্রের বাজার নাকি ভারতীযদের দখলে চলে যাবে.......ইত্যাদি। অথচ টিভিতে রাতদিন ভারতীয়,ইংরেজি নানান চ্যানেলে চরম আপত্তিকর নানা অনুষ্ঠান, ছবি,গান,বিজ্ঞাপন চললেও তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সেদিন টিভিতে নতুন মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবি‌ ‌‍‌‌‌‌তিস মার খান এর গান শীলার যৌবন দেখতে গিয়ে মনে হলো দেশের চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ঠ মহল এবং সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কি ঘুমিয়ে আছে? ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির বিরুদ্ধে দূর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা সেই মানুষগুলো এখন কোথায়? সেন্সর ছাড়াই ঐসব চ্যানেলে এধরনের নানা কিছু প্রচার হচ্ছে,আর আমরাও সেগুলো মজা!! করে দেখে যাচ্ছি । এখন কথা হচ্ছে এভাবে অবাধে চলতে না দিয়ে যদি একটি নিয়ম-কানুনের মধ্যে এগুলো দেখার ব্যবস্থা করা হয়,তাহলে সমস্যা কি? অর্থাৎ হলে যদি ভিনদেশী ছবি চলত(অবশ্যই প্রয়োজনীয় সেন্সর করে) তাহলে এগুলো একটা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকত । আর ভিনদেশী ছবি যদি হলে গিয়ে দেখার সুযোগ থাকত,তাহলে টিভিতেও এত চ্যানেলের দরকার পড়ত না।

সরকার তখন নির্দিষ্ঠ কিছু চ্যানেল রেখে বাকি চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিতে পারত। এর ফলে পাইকারী হারে আপতিতকর জিনিস দেখার সুযোগ থাকত না কারও,বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্র ঘরানার মানুষেরা যে আমার এই প্রস্তাবের সাথে একমত হবেন না তা সহজেই অনুমেয়। কারণ ভিনদেশী চলচ্চিত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করার মতো সাহস ওনাদের নেই। কারণ ওনাদের মাথা থেকে তো বড়লোকের ছেলে/মেয়ে বনাম গরিবের ছেলে/মেয়ে ছাড়া তো আর কিছু বেরোবে না।

অবশ্য আরও একটা জিনিসও ওনারা ভালো পারেন। সেটা হচ্ছে হিন্দি,দক্ষিণি,ভারতীয় বাংলা চবির নকল। কি দারুণ মজার ব্যাপার!!,যেসব ছবি হলে দেখাতে ওনাদের প্রবল আপত্তি, সেই সব ছবিই ওনারা আবার নকল করে আমাদের গেলান। আমাদের রাজ্জাক-ফেরদৌস সাহেবরা তো প্রচুর ভারতীয় বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন যেগুলোতে অনেক আপত্তিকর জিনিস খুঁজে পাওয়া যাবে। মূলত আমাদের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা চান এদেশের হলগুলোতে ওনাদের তৈরী বস্তাপচা ছবিগুলোই রাজত্ব করুক।

ভিনদেশী ভালো ছবির কাছে রাজত্ব হরানো ওনারা বরদাস্ত করবেন কেন!? টিভিতে যা ইচ্ছা-খুশি চলুক,কিন্তু হলে চললেই সমস্যা!!! চল্লিশ বছরেও আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্বমান তো দূরে থাক,ভারতীয় মানের কাছেও পৌছতে পারল না। কিন্তু তা নিয়ে ওনাকে কোনো মাথাব্যথা নেই। ওনারা আছেন শুধু শাক্বিব খানকে নিয়ে। ছবি বানিয়ে দু-পয়সা কামানোর শর্টকাট রাস্তা আর কি!! তাতে দেশীয় চলচ্চিত্রের মান বাড়ল কি কমল তা চিন্তা করার কি দরকার!! আসলে মান থাকলে তা সর্বত্রই সমাদর পায়। পশ্চিমবঙ্গে কি বাংলা ছবি চলছে না অন্য অনেক ভাষার ছবির সঙ্গে লড়াই করে? আমাদের দেশেরই মাটির ময়না,মনপুরা,থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার,মনের মানুষ কি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়ে পুরষ্কার পায়নি? তাহলে আমাদের এত ভয় কিসের যে,দেশে ভিনদেশী চলচ্চিত্র আসলেই দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

আর ভিনদেশী চলচ্চিত্র হলে না চললেই কি সেগুলো দেখা থেকে আমরা বিরত আছি/থাকব!? তাই সরকার এবং সংশ্লিষ্ষ্টদের কাছে আবেদন জানাই, দেশে ভালো মানের ভিনদেশী চলচ্চিত্র আসতে দিন। আমাদেরকে হলে গিয়ে ভালো ভালো ছবি দেখার সুযোগ করে দিন। এর মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে,ভিনদেশীয় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন রোধ হবে। আর সর্বোপরি হলে গিয়ে ছবি দেখার সেই সংস্কৃতি ফিরে আসবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.