আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিআইবির খানা জরিপ : বিচার বিভাগে সর্বাধিক দুর্নীতি

© এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের। তাই লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোন প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যবহার না করার অনুরোধ রইল...
সেবাখাতের মধ্যে দেশের বিচার বিভাগ সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত। ৮৮ শতাংশ খানা এ খাতের দুর্নীতির শিকার। শুনানি দ্রুত করানো কিংবা শুনানির তারিখ পেছানো, মামলার রায়কে প্রভাবিত করা, ডকুমেন্ট উত্তোলন বা গায়েব করতে ঘুষ বা বিধিবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়েছে তাদের। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগের দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার ছিল ৪৭.৭ শতাংশ খানা।

সে হিসাবে এ খাতে দুর্নীতির হার বেড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। এরপরই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও ভূমি প্রশাসন। গতকাল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত ‘সেবাখাতের দুর্নীতি : জাতীয় খানা জরিপ ২০১০’-এ এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮৪.২ শতাংশ খানাকে সেবা নিতে গিয়ে কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছে। দুর্নীতির কারণে বছরে প্রায় ৯,৫৯১.৬ কোটি টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ প্রদান করতে হয়েছে।

সেবাখাতের মধ্যে ঘুষ আদায়ের শীর্ষে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা। এরপর ভূমি প্রশাসন ও বিচার বিভাগ। ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১০ সালে বিচার বিভাগ, ভূমি প্রশাসন ও বিদ্যুত্ খাতে দুর্নীতি ও হয়রানি বৃদ্ধি পেলেও পুলিশ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কমেছে। তবে ২০০৭ সালের তুলনায় ২০১০ সালে সার্বিকভাবে দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা বেড়েছে বলে জরিপে তথ্য প্রকাশ করা হয়। জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, এটি দুর্নীতির সার্বিক চিত্র নয়, এটির ব্যাপকতা আরও অনেক বেশি।

নিম্ন পর্যায়ে যে দুর্নীতি হচ্ছে জরিপে তা প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতির সার্বিক চিত্র দেখতে হলে উচ্চ পর্যায়ে যে দুর্নীতি হয় তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু মানুষের ধারণা এ বিভাগে দুর্নীতি বেড়েছে। জরিপের তথ্য বিচার বিভাগের সংশোধনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিচারকরা কাজের ব্যাপারে নিষ্ঠাবান হলেও বিচারক স্বল্পতা যেমন রয়েছে, তেমনি তাদের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধাও কম দেয়া হয়। তাই এ বিভাগের আমূল পরিবর্তন নিয়ে ভাবতে হবে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম. হাফিজ উদ্দিন খান। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ, অধ্যাপক এম. কবির। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং সিনিয়র ফেলো মো. ওয়াহিদ আলম।

টিআইবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১০ সালের ৯ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ১৭টি তথ্য সংগ্রহকারী দলের মাধ্যমে ৬ হাজার খানায় জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ৩,৪৮০টি খানা (৫৮%) পল্লী এবং ২,৫২০টি খানা (৪২%) নগর এলাকায় অবস্থিত। জরিপে ১৩টি সেবাখাতের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার বিভাগ, কৃষি, ভূমি প্রশাসন, বিদু্যুত্, আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক, ব্যাংকিং, বীমা ও এনজিও। অন্যান্য সেবাখাতের মধ্যে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস, মানবসম্পদ রফতানি এবং পাসপোর্ট অন্যতম।

জরিপে ২০০৯-এর জুন থেকে শুরু করে ২০১০-এর মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের খানাগুলো বিভিন্ন খাত থেকে সেবা নিতে গিয়ে যে দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জরিপ কাজে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক কাজী সালেহ আহমেদ, অধ্যাপক ড. এম. কবির, অধ্যাপক সালাহউদ্দীন এম. আমিনুজ্জামান, অধ্যাপক পিকে মোহাম্মদ মতিউর রহমান এবং অধ্যাপক মো. শোয়ায়ব। জরিপে খানা বলতে পরিবারের যে ক’জন সদস্য একই চুলায় রান্না করা খাবার গ্রহণ করে তাকে বোঝানো হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট পরিবারে কমপক্ষে ৩ মাস অবস্থান করে থাকেন, তবে তিনি খানার সদস্য বলে গণ্য হয়েছেন। জরিপের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিচার বিভাগে দুর্নীতির মাত্রা ছিল সর্বাধিক। বিচার বিভাগের দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়েছে ৮৮ শতাংশ খানা।

২০০৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪৭.৭ শতাংশ। অর্থাত্ ২০০৭ সালের তুলনায় বিচার বিভাগে দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। বিচার বিভাগের সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে ৫৯.৬ শতাংশ খানাকে। ৬৮.৯ শতাংশ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে, ৫৮.৪ শতাংশ জজকোর্টে, ৭৩.৬ শতাংশ খানাকে হাইকোর্টে ঘুষ দিতে হয়েছে। অনিয়ম ও হয়রানির ক্ষেত্র হিসেবে ৪১ শতাংশ মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতাকে হয়রানি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া বিচারপ্রার্থী খানার মধ্যে উকিল কর্তৃক ৩৯.৭ শতাংশ, আদালতের কর্মচারী কর্তৃক ২৪.৫ শতাংশ, ১৬.৯ শতাংশ মুহুরী কর্তৃক, দালাল কর্তৃক ২.৭ শতাংশ হয়রানির শিকার হয়েছেন। রায় বা আদেশের কপি বা কোনো কাগজপত্র উত্তোলনে ৯.১ শতাংশ এবং ৩.৯ শতাংশ প্রতারণা, নোটিশ বা সমন না পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হয়েছেন। আবার ৫৬.৩ শতাংশ খানা শুনানি দ্রুত করানোর জন্য, ৬.৩ শতাংশ খানা শুনানির তারিখ পেছানো, ৩২.৭ খানা মামলার রায়কে প্রভাবিত করতে, ২২.২ শতাংশ ডকুমেন্ট উত্তোলন, ১ শতাংশ নথি গায়েবের জন্য এবং অন্যান্য কারণে ৮.৯ শতাংশ খানা ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছে। দুর্নীতির মাত্রায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো (৭৯.৬%) ও ভূমি প্রশাসন (৭১.২%) খাত। এরপর দুর্নীতিগ্রস্ত সেবাখাতের মধ্যে রয়েছে কর ও শুল্ক (৫১.৩%), বিদ্যুত্ (৪৫.৯%), কৃষি (৪৫.৩%), স্থানীয় সরকার ( (৪৩.৯%), স্বাস্থ্য (৩৩.২%), বীমা (১৯.২%), ব্যাংকিং (১৭.৪%), শিক্ষা (১৫.৩%), এনজিও (১০.১%) এবং অন্যান্য খাতে (৩৪.১%) খানা দুর্নীতির শিকার হয়েছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সেবাগ্রহীতা খানার যথাক্রমে ১৫.৩% ও ৩৩.২% দুর্নীতির বা অনিয়মের শিকার হয়। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা অপরিহার্য এবং এই সদিচ্ছার কার্যকর বাস্তবায়নই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হতে পারে। এই জরিপ জনগণকে দুর্নীতি বিষয়ে সচেতন করা ও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমকে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে সেবাখাতে দুর্নীতিগুলোর মধ্যে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে বাধ্য হওয়া অন্যতম। এ খাত থেকে সেবা নেয়া খানাগুলোর ৭১.৯% ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিয়েছে।

যারা আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত সেবা গ্রহণ করেছে, সেই খানাগুলো সর্বাধিক হারে (৬৮.১%) ঘুষ দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে। ঘুষ নেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে ভূমি প্রশাসন ও বিচার বিভাগ—যেখানে সেবাগ্রহীতা খানার যথাক্রমে ৬৭% ও ৫৯.৬% ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে। সেবাগ্রহীতা খানাগুলোকে সার্বিকভাবে বিবেচ্য সময়ে বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে গড়ে ৪ হাজার ৮৩৪ টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয়েছে। গড় পরিমাণ সর্বাধিক পাওয়া গিয়েছে বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে, যেখানে বিচার সম্পর্কিত সেবাগ্রহীতাদের গড়ে ৭ হাজার ৯১৮ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। ভূমি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ঘুষ দেয়া খানাগুলো যথাক্রমে গড়ে ৬ হাজার ১১৬ ও ৩ হাজার ৩৫২ টাকা দিয়েছে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবাখাতে ঘুষ দেয়া খানাগুলো যথাক্রমে গড়ে ১৬৮ ও ৫২১ টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিয়েছে। জরিপে দেখা যায়, জাতীয়ভাবে বাংলাদেশের খানাগুলো এ সময়ে ৯ হাজার ৫৯১.৬ কোটি টাকা বিভিন্ন সেবাখাতে ঘুষ বা অবৈধ অর্থ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রাক্কলনের পরিমাণ সর্বাধিক পাওয়া যায় ভূমি প্রশাসনের ক্ষেত্রে, যা ৩ হাজার ৫১৯.৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে বিচার বিভাগ (১,৬১৯.২ কোটি টাকা) ও বিদ্যুত্ (৮১২.৬ কোটি টাকা)। বিভিন্ন কর সংক্রান্ত সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৪৩.৯% খানা বাধ্যতামূলকভাবে ঘুষ দিয়েছে এবং অন্যান্য হয়রানির শিকার হয়েছে ৩০.৩% খানা।

সার্বিকভাবে ৪৫.৯% খানা বিদ্যুেসবা নিতে গিয়ে দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ৫২.৬% খানা মিটার রিডিং ও বিলিংয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে এবং নতুন সংযোগ ও বৈদ্যুতিক উপকরণ পরিবর্তন বা সংযোজনের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে প্রায় ৩০% খানা হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। কৃষিখাত থেকে যারা সেবা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৪৫.৩% খানাকে কোনো না কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এসব খানার ৩৮.১% সংশ্লিষ্ট সেবাদাতাকে ঘুষ কিংবা অতিরিক্ত অর্থ দিয়েছে। যেসব খানা সার পেতে দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হয়েছে তাদের ৯৫.৪% খানাকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ (গড়ে ৩১৪ টাকা) দিয়ে সরবরাহকারীর কাছ থেকে সার নিতে হয়েছে।

এ ছাড়াও ৮৫.৯% খানা সময়মতো সার পায়নি এবং ৪.৬% খানা সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ করেছে। বীজ পেতে যেসব খানা দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে ৭৮.১% খানাকে বিক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্যাকেট মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ (গড়ে ২০৭ টাকা) দিয়ে বীজ সংগ্রহ করতে হয়েছে। অন্যদিকে ১২.০% খানা নিম্নমানের বীজ পেয়েছে, ১০.৬% খানা অযথা সময়ক্ষেপণের শিকার, ৩.৮% খানা বীজ পেতে প্রভাবশালীদের দ্বারা তদবির করেছে এবং ৩.৩% খানা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অভিযোগ করেছে। জরিপে অন্তর্ভুক্ত খানার মধ্যে ৭৯.৯% গত এক বছরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিয়েছে, যার মধ্যে ৪৩.৯% খানা দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকার হয়। সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ দেয় ৩৬.৭%, দায়িত্বে অবহেলার শিকার ১১%, প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপের শিকার ৬.৩%, আত্মসাতের শিকার ১.৫%, প্রতারণার শিকার ০.১%, এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য হয় ০.০২% খানা।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে সার্বিকভাবে ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয় খানাপ্রতি গড়ে ৯১৩ টাকা। জরিপে ৯৭.১% খানা সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে। তাদের মধ্যে ২০% সরকারি এবং ৮০% বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে। যেসব খানা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছে তাদের ৩৩.২% সেবা নিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের ধরনভেদে এ হার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৮.৪%, জেনারেল হাসপাতালে ৩৫.২% এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩.৬%।

অন্যদিকে ১৩.২% সেবা গ্রহণকারী খানাকে বিভিন্ন সেবা পেতে নিয়মবহির্ভূতভাবে গড়ে ৪৬৩ টাকা দিতে হয়। যারা শিক্ষাসেবা নিয়েছে তাদের ১৫.৩% সেবা নিতে গিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষাসেবা নিতে গিয়ে ১৫% খানাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয়েছে। নিয়মবহির্ভূত অর্থের খানাপ্রতি গড় পরিমাণ ১৬৮ টাকা। শিক্ষার্থী ভর্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রাপ্তি এবং উপবৃত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে খানাগুলোকে উল্লিখিত অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হতে হয়েছে।

১০.১% খানা এনজিও খাত থেকে সেবা নিতে গিয়ে কোনো না কোনো ধরনের দুর্নীতির শিকার হয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৭.২% গড়ে ৫৪৯ টাকা ঘুষ দিয়েছে। ন্যূনতম ২০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে তাদের। ঋণ গ্রহণকারী ২৬.৭% খানা ঋণ গ্রহণের সময় অপ্রয়োজনীয় অন্য সেবা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে (যেমন গাছের চারাসহ নানা পণ্য নিতে বাধ্য হওয়া)। আবার ৩৬.৩% ঋণ গ্রহণের সময় ঋণের পরিমাণ থেকে কম পেয়েছেন।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ১৫ দফা সুপারিশ উত্থাপিত হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যকর পদক্ষেপ, স্বাধীন ও শক্তিশালী দুদক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কঠোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ ও নীতিকাঠামো প্রতিষ্ঠা এবং সেগুলো কার্যকর করা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা ও সততা প্রতিষ্ঠা করা, মেধা ও কর্মদক্ষতার ওপর ভিত্তি করে সেবাখাতের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি নিশ্চিতকরণ। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতি দূর করতে তাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। দুর্নীতির মাত্রা বৃদ্ধির জন্য ভোগবাদিতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোগবাদিতা যত বাড়বে দুর্নীতিও তত বাড়বে।

বর্তমান দুদককে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দাবি করে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলা প্রত্যাহার করিনি। এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেই তা তদন্ত করার আগে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছি না। অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে মিডিয়া ট্রায়াল দিতে চাই না। তিনি বলেন, ১০০ জন দুর্নীতিবাজও যদি শাস্তি পান তাহলে সমাজে তার প্রভাব পড়বে। তবে এজন্য আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে।

মামলা রুজু থেকে নিষ্পত্তি পর্যন্ত যদি দুই বছরের সময় বেঁধে দেয়া যায় তাহলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ দুর্নীতি কমে যাবে। যারা সমাজের নেতৃত্বে রয়েছেন তারা যদি সত্ হন তাহলে সততার পরিমাণ বাড়বে। দেশে আইনি প্রক্রিয়ায় যে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে, তাতে ১০টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে বসিয়ে দিলেও কোনো কাজ হবে না। বিস্তারিত দেখুন: আমার দেশ
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.