আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ের হাসি।

আমার বলার কিছু নেই।

খুব ভোর বেলায় আম্মার কান্না জড়ানো কন্ঠের ফোন..."সুফল...আমার শাহ্ জাদীর কি হলো...ও বোধহয় আর নেই"। আম্মার কথা শুনে সাত সকালে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। বড় আপার (শাহ্ জাদী) রাত দশটায় তৃতীয় বারের মতো অপারেশন হয়েছে। এমনিতেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিলনা আর ভোর বেলায় আম্মার এই কথা।

মাথা যেন কিছুতেই কাজ করছে না। কোথা থেকে একদলা কান্না আমাকে আরও পাগল করে দিচ্ছে। ভেবে পাচ্ছিনা কিভাবে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে কুষ্টিয়া যাব। বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছি। অনেক কষ্টে তৈরি হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

যেতে হবে গোলাপবাগ থেকে কল্ল্যাণপুর তারপর বাসে কুষ্টিয়া। আমার কান্না ট্যাক্সিওয়ালাকেও যেন ছুয়ে গেল। বারবার পিছন ফিরে বলে উঠেন,"চিন্তা কইরেন্না ঠিক হইয়া যাইবো"। রমনায় সকালের হাটতে থাকা মহিলাদের চেহারাতে শুধুই আপার মুখটা ভেসে উঠতেছিল। মনে হচ্ছে যেন আপা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

কান্না যেন কিছুতেই বাধ মানেনা। উপায় না দেখে সাব্বির কে ফোন দিলাম প্লিজ আমার সাথে চল্...আমি একা যেতে পারবো না। জানতাম সাব্বির রাজি হবে। ও জানাল কল্ল্যাণপুরে থাকবে। অবশেষে রওনা দিলাম কুষ্টিয়ার পথে।

পথটা কিভাবে পাড়ি দিয়েছি আমি নিজেও জানিনা। অবশেষে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে কুষ্টিয়া আসলাম। সনো টাওয়ারে যেয়েই টিটো ভাইয়ার বিষন্ন মুখ,আম্মা আর দিনার আপার কান্না ভেজা মুখের সামনে পড়লাম। না তারপর্ও মন টা শান্ত হলো যে আপা কিছুটা হলেও বিপদ কাটিয়ে উঠছেন এবং আইসিইউ তে আছেন। ছোট্ট রিমঝিম কে দেখে কান্নায় দুচোখ ভিজে উঠল।

খুব সাহস নিয়ে আপাকে দেখতে গেলাম। তিনবারের অপারেশন, এ্যনেসথেশিয়া আর এ্যন্টিএ্যনেসথেশিয়ার প্রভাবে আপা তখন অন্য কেউ। কাউকে চিনতে পারছেন্না,চার পাঁচজন মিলেও তাকে ঠেকানো যাচ্ছেনা। ডাক্তাররা বলছেন রোগীর মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে...,তাকে চব্বিশ ঘন্টা দেখে বলা যাবে কি হবে ?। ঐ সময় একেক জনের কথা যেন শেলের মতো বুকে এসে লাগতেছিল..."এই সিম্পটমটা ভালনা,অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে,তোমাদের অনেক ধৈয্য ধ্ররতে হবে...ইত্যাদি ইত্যাদি।

একে একে প্রহর কেটে যাচ্ছে আর আমদের দুশ্চিন্তার মাত্রা বাড়ছে। কেন জানি আমার মনে হলো ডাক্তারদের ধারণা ভুল,এমনটা হতেই পারেনা। বিকেলে টিটো ভাইয়াকে বললাম দেইখেন রাত আট টার মধ্যে আপাকে সাধারণ কেবিনে আনবে আর দশ টার মধ্যে আপা রাইসা এবং রোজাকে কাছে ডাকবে। আমার ধারনাটা ঠিক হয়ে গেল। আট টার দিকে আপাকে সাধারন কেবিনে আনা হলো এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে দশ টায় আপা রাইসা আর রোজাকে দেখতে চাইলেন।

জিবনে অনেক আনন্দের ঘটনা এসেছে কিন্তু এমনটা আর কখনই আসেনি। সদ্দ্য জন্ম নেওয়া রিমঝিম কে আপার কাছে আনা হলো। ওষুধের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় আসুস্থ আপা খুব সাবধানে রিমঝিমকে বুকে টেনা নিলেন। সারাদিন মাকে না দেখা রাইসা আর রোজা লাজুক মুখে মা এর সামনে এসে দাড়ালো। আপা এক পলক্ তাকালেন আর ক্লান্ত,শ্রান্ত এবং ফুলে যাওয়া মুখের এক কোনে একটা ভুবন ভুলানো হাসি দিলেন।

আমার চোখের কোনে আবারও পানি এসে গেল। কোন সন্দেহ নাই এটাই আমার চোখে দেখা পৃ্থিবীর শ্রেষ্ঠ হাসি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.