আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ের মত আপন কেহ নাই, মায়ের কোন দিবস নাই

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!!
মা, ইচ্ছে করে তথাকথিত মা দিবসের পর তোমাকে লিখছি। মা দিবস না তুমি বোঝ, না আমি বুঝি। না তুমি আমাকে শুনিয়েছ, না আমি শুনেছি। পেটের দায়ে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রিত একটি আধা-সভ্য, আধা-ভন্ড, আধা-শিক্ষিত, আধা-বর্বর ও মোটা দাগে অন্ত:সারশুন্য মেকি অহমিকায় ভরা নকলসর্বস্ব আর্থ-রাজনৈতিক কর্পোরেট ব্যবস্থায় মাস বেতনে কামলা খাটছি। অনেক শব্দ শুনতে মন চায়না, তবু কানে তো তুলো দেয়া যায়না; অনেক দৃশ্য চোখ এড়াতে চায় কিন্তু পলক খুলে যায়; অনেক বাক্য শুনে বায়ুমন্ডল মুচকি হাসে তবু বলি; অনেক লিখার ভন্ডামিতে কি-বোর্ড নিজেই লজ্জিত হয় তবু নিস্পাপ জড়বস্তু মালিকের অংগুলির উপর জোড় খাটাতে পারেনা।

সেরকম বাধ্যতামূলক পরিবেশে বছর কয়েক যাবৎ, এবং এ দফায় একটু জোড়ে সোরে, মা দিবস মা দিবস বলে একটা শোরগোল কানে বাজছে। তাহলে গত হওয়া বছরগুলোর কি হবে মা? মা, যতদুর বুঝেছি আটলান্টিকের উজানের দুই তীরের স্বঘোষিত উন্নত বিশ্ব বস্তুটির পয়দা করেছে। নানাবিধ কাহিনী, মিথ, গল্পের লবণ, মরিচ ও মসলা মিশ্রিত করে ইতোমধ্যে Target Segment এরমগজে Interest Create করতে পেরেছে। এখন শুধু Product Available করার পালা। কার্ড, ফুল, চকলেট, মিস্টি, শাড়ি, চূড়ি, প্যাকেজ ট্যুর, মগ, পেয়ালা, ফুলদানী সম্ভাব্য অসম্ভাব্য অযুত লক্ষ পণ্য অপেক্ষা করছে মা তোমার জন্য।

কি মা খুশি? মা, অসুবিধে কি? একদিন তো তুমি পেলে? একটা ফোন কল, মেসেজ, চিঠি বা একটু সাক্ষাৎ। কম কি? বাদবাকী ৩৬৪ দিন না হয় তুমি Old Lady. পরিত্যক্ত। বাড়তি। বোঝা। ঝামেলা।

উপদ্রব। যুবক-যুবতীর বাঁধ ভাংগা যৌবন জোয়ারের মাঝে অনাব্শ্যক উপস্থিতি। খামোকা কি দরকার...? তার চেয়ে ঢের ভাল নয় কি একদিনের হট্টগোল! মা, ওরা হয়ত ভুলে গেছে তোমার শরীরের একটি নল থেকে অক্সিজেন এসে আমাকে শ্বাস দিত। তখনো আমার ফুসফুসটি চালু হয়নি (নির্মিতব্য অবস্থায়)। তোমার ভাত, মাছ, ডাল, সব্জি, আইসক্রিমের ভাগ চুপি চুপি আমি নিয়ে নিতাম অন্ধকার প্রকোস্ঠে।

একটুও তুমি রাগ করতে না। মাঝে মাঝে বোর হয়ে দিতাম এক লাথি তোমার জরায়ু দেয়ালে। তবু তুমি রাগ করতে না। বরং নড়াচড়া না পেলে উদ্দিগ্ন হতে। মা, আজ বড়সড় এপার্টমেন্টের এক কোনায় থেকেও তুমি অনাহুত।

তুমি সেকেলে। বাচ্চাদেরকে গেয়োঁ বানানোর দাগী আসামি। নামি দামি অথিতিদের মাঝে তোমার গেয়োঁ বচন। মান গেল, মান গেল, মা। মা, আমি কিছুই খেতে পারতাম না।

মোটে দাঁতই তো ছিল না। এমন কি খাবারের কথাটা বলার মত ভাষা ব্যকরনও অজানা। তবু তুমি আমার ভাষা বুঝতে। পৃথিবীর শুদ্ধভাষাবিদদের কাছে নিছক কান্না হলেও তুমি বুঝতে মর্মাথ। Carbohydrate, Protein, Fat, Minerals, Vitamins, Water যা যতটুকু লাগে তার প্যাকেজ নিয়ে তুমি এগিয়ে আসতে আমার ঠোঁটের মাঝে।

সময় নেই, কান্ডজ্ঞান নেই নির্বোধের মত মল-মুত্র ত্যাগ করে বড্ড বিরক্ত ও বিব্রত করতাম তোমায়। এমনকি তোমার কর্মস্থলে কলিগদের সামনেও। মা, তুমি রাগ করোনা। আজ হয়তো তোমার হটাৎ উপস্থিতিই সে সন্তানকে বিব্রত করবে। তোমার বার্ধ্ক্যজনিত অসুস্থতার দায়দায়িত্ব প্রকৃতি/নার্স/গভর্নেসের হাতে।

মা, তুমি চিনিয়েছ বর্নমালা অ আ ক ১ ২ ৩ A B C যতিচিহ্ন যোগ, বিয়োগ, গুন। তুমি চিনিয়েছ আল্লাহ, রাসুল, পরকাল, দুনিয়া, সত্য, মিথ্যা, ভাল, মন্দ, উপকার, ক্ষতি, বিনয়, নম্রতা। তুমি মুছে দিয়েছ খাদ্যাভাসে অনভ্যস্ত শিশুর নোংরা ওস্ঠদেশ, পাহারা দিয়ে পাঠিয়েছ পাঠশালায়, প্রার্থনায় মগ্ন রইলে যখন আমি নিমগ্ন পরীক্ষালয়ে। পিতার অগোচরে গুজেঁ দিয়েছ বাড়তি জমানো টাকা গুলো। বেচে দিলে প্রিয় হার, কানের দুল, নাকের নোলক, আদুরে গাভী।

কাদঁলে বকনা বাছুরটার উছৃংখল পথচলা যতক্ষন না দিগন্তে মেলায়। মা, তোমার দায়িত্ব শেষ। তোমার ছুটি। পাওনা বেতন ভাতা নিয়ে নিতে পার। এ অফিসে (বাড়িতে) প্রতিদিনকার উপস্থিতি আর কাম্য নয়।

তবে বছরে একদিন তোমার স্মরনে বরাদ্ধ করা হল। Alumni Day র মত। মা, তোমাকে নিয়ে সেদিন সব কটি টিভি চ্যানেলে ম্যারাথন রিপোর্ট হবে, মানববন্ধন হবে, র‌্যালী হবে, আলোচনা হবে, জাঁকজমকপুর্ণ ভাবে ব্যাপক মর্যাদাসহ দিবসটিতে ব্যস্ত থাকবেন মন্ত্রী, সচিব, গন্যমান্যরা। বিকেলে ওসমানী মিলনায়তনে তোমাকে শ্রেস্ঠ মা ঘোষনা করে একখানা পদকও ধরিয়ে দেয়া হতে পারে। এসো মা।

তৈরী থেকো। মা, ওদের ভুল বোঝনা। ওরা শিশু। শিশুদের যে যা বুঝায় তা ই বুঝে। মা, লন্ডনে তুষারপাত হলে ওরা ছাতা ও জ্যাকেট নিয়ে বেরুয়।

কেন না ওরা চেয়ে থাকে রয়টার, এপি, বিবিসির পর্দায়। ঢাকার চামড়া ছিলা গরম ওদের স্পর্শ করেনা। মা, ওদের দোষ নেই। চামড়া ভোঁতা। কান খাড়া।

মা, অভিমান করোনা। প্রতিদিন আবার ওরা তোমার কাছে আসবে। দিবস টিবস ভুলে যাবে। অফিস শেষে বাসায় গিয়ে আবারো তোমায় বিরক্ত করবে। তোমার চুল ধরে টান দিবে।

তোমার কাছে বায়না ধরবে ক্ষীর বানিয়ে দেয়ার জন্য। তোমায় টেনে নিয়ে যাবে স্টার সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখানোর জন্য। তোমার কাছে সমাধান খুজঁবে নিযুত সমস্যার। বায়না ধরবে নন্দনপার্ক, মামার বাড়ি, কক্সবাজার, আশুলিয়া নিয়ে যাবার জন্য। ভেবে দেখ এত ধকল তুমি সইতে পারবে কি না? আর, ওরা তো এখন একা নয়।

বউ আন্ডা বাচ্চা সমেত!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.