আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন সম্ভাবনাময় রাজনীতিকের অপমৃত্যু

চুপ!

রাজার নীতি যদি রাজনীতি হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের যথেচ্চাচার মেনে নেওয়া বোধ হয় সহজ হয়, কিন্তু যদি তা হয় রাষ্ট্রশাসন বা পরিচালনার নীতি (ব্যবহারিক বাংলা অভিধান-বাংলা একাডেমী) তাহলে খুজঁতে হয় আমার দেশে রাজনীতি নামে যা আছে তার প্রকৃত নাম কী। ‘রাজনীতি’ এর ইংরেজী ‘politics’ যদি হয় a process by which groups of people make collective decisions (Wikipedia) অথবা a treatise (4th century B.C.) by Aristotle, dealing with the structure, organization, and administration of the state, esp. the city-state (http://www.dictionary.com), তাহলে বোধ হয় আমাদের আরো ভাবার অবকাশ আছে। যদি ওই collective decision গুলো হয় শুধুই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যে এবং state এর administration এর structure কে তৈরী করা হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ঢাল করে রাজনীতিবিদদের bank balance বাড়ানোর ধান্ধা থেকে তাহলে অবশ্যই এর একটা ভিন্ন নাম থাকা দরকার ছিল। এখন ‘রাজনীতি’ শব্দটাকেই আমার একটা নেতিবাচক শব্দ মনে হয়, এর সাথে যে চিত্রগুলো মনের পর্দায় ভেসে ওঠে তাতে গা গুলিয়ে ওঠে, অথচ ছোটবেলায় আমার রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন ছিল, যে কথা বলতেও এখন লজ্জা হয়। অনেক বাচ্চা-কাচ্চা বড় হয় শৈশবে ঠাকুর মার ঝুলি(আমার বয়েসীদের কথা বলছি) থেকে বের হওয়া রাজার কুমার আর অপূর্ব রূপসী রাজকন্যার গল্প শুনে।

কিন্তু আমার ছোটবেলার গল্পের রাজা ছিল মহাত্মা গান্ধী, শে রে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী; রাজকুমারী ছিল মতিয়া চৌধুরী, ইন্দিরা গান্ধী। বাবার কাছে আমি শুনতাম কীভাবে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক আর মাওলানা ভাসানীরা সোনার কাঠি আর রূপার কাঠির পরশে বাংলার মানুষকে জাগাতেন আর তাদের পাশে থাকতেন চরম দূর্যোগের মুহূর্তে। বেগম রোকেয়া কীভাবে তার মোহনীয়া বাশিঁর সুরে ঘরে বন্দী নারীদেরকে শিক্ষার আলোর মিছিলে শামিল করেন। খুব সম্ভবত আমি তখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুল বন্ধ, এক দিন সকালে বাজান (আমি আমার বাবা কে ‘বাজান’ বলি, আগে এক দিন বলেছি) খবরের কাগজ নিয়ে ঢুকে আমাকে একটা লেখা পড়তে দিলেন- সম্পাদকীয় এর পাতায়।

মতিয়া চৌধুরীর উপর লেখা- তার জীবন আর রাজনীতি। খুব inspired হয়েছিলাম। মনে পড়ে এর বছরখানেক আগেই আওয়ামী লীগের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছিল দেশ, আমার গ্রামও এর বাইরে ছিল না, অথচ এর আগে কোনদিনই কোন হরতাল বা ধর্মঘটে এই গ্রামের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় নি। ১৯৯৬ এর সংসদ নির্বাচনের ফলাফল দেখলাম সারা দিন টিভির সামনে বসে, কোন দল-মত তখনও গড়ে উঠে নি (মনে হয় result এর চেয়ে বিরতির সময়কার গান-নাচের জন্যেই )। মাত্রই গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র শব্দগুলো মাথায় ঢুকতে শুরু করেছে।

অবশ্য তার অনেক আগেই না বুঝেই ভাবতে শুরু করেছিলাম- এখন তো ছোট; বড় হয়ে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব, রাজনীতি(!) করব তখন- দেশের মানুষের জন্য জান দিয়ে দেব (সব অবুঝ বাচ্চা-কাচ্চা যা ভাবে আর কি!) যাই হোক এক সময়কার গঠনমূলক রাজনীতি আমাকে উতসাহিত করেছিল। সেইসব মহান রাজনীতিবিদদের গল্প শুনতাম বাজানের কাছে, তাদের জীবনী পড়তাম- অদ্ভুতভাবে আবিষ্কার করলাম তারা সবাই খুবই ভাল ছাত্র ছিলেন ছোটবেলায়, অনেকেরই অনার্স আর মাস্টার্স এ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ডিগ্রী। পড়াশুনায় আগ্রহ বাড়ল- I have to be the best of all to serve all (কী অদ্ভুত বাচ্চাবয়েসী চিন্তা!) খুব ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বা সাহিত্য নিয়ে পড়ব আর সক্রিয় রাজনীতি করে দেশ উদ্ধার করে ফেলব (হা হা হা! তরুণ হৃদয়ের কল্পনা )। কল্পনার fantasy কে বাস্তবতার নির্মমতা তখনো পর্যন্ত হার মানাতে পারে নি। তবে খুব বেশী দিন কল্পনা রাজত্বও করতে পারে নি।

তার পরের কাহিনী খুবই সংক্ষিপ্ত, আসলে তা সবারই জানা। আমার রূপকথার গল্পের রাজাদের গ্রামের আর পাড়ার ক্ষুদে রাজনীতিকদের (আগামী দিনের ভবিষ্যত!) সাথে মেলানোর চেষ্টায় হোঁচট খাওয়া শুরু। যদিও আগরতলার সাথে উগারতলার তুলনা করার কোন মানেই নেই তারপরেও রূঢ় বাস্তব ধীরে ধীরে চোখে আঙ্গুল দিয়ে অনেক কিছুই শেখানো শুরু করল। দেখতে পেলাম, রাজনীতি করে এখন মানুষ ‘রাজা’ হতেই চায় শুধু, সত্যিকারের রাজনীতিক খুজেঁ পাওয়া দায়। রাজনীতির ‘রাষ্ট্র চালানো’ থেকে ‘রাষ্ট্রের সর্ব ক্ষমতা অর্জন’ মানেটাই স্পষ্ট হলো।

আর সেই ক্ষমতা অর্জন করার যে strategy তা আরো নোংরা হয়ে প্রতিভাত হলো চোখের সামনে। স্কুলের যে কোন group work এ আমাকে দলনেতা নির্বাচিত করা হত, দলের ভালটাকে চিন্তা করে সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তাটা মাথায় ছিল বলে বোধ হয় আগ্রহও বোধ করতাম এ ধরনের কিছুতে (হাজার হোক রাষ্ট্রনেতা হওয়ার চিন্তা ছিল যে মাথায়!)। কিন্তু কলেজে উঠে ধীরে ধীরে এই আগ্রহগুলো মরে যেতে শুরু করল, science club বা সাহিত্য সাময়িকী এর editorial board এর নির্বাচন- নাহ, বন্ধুরা এগিয়ে দিলেও পিছিয়ে আসতাম আমিই। (সেই সময় খুব হরতাল হত, কলেজ বন্ধ থাকত হুটহাট- ডঃ ইকবাল আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের পিস্তল হাতে ছবি ছাপা হত পত্রিকায়, আমি থাকতাম মনিপুরী পাড়ায় আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় কলেজ খোলা থাকত শুক্রবার দিন। )নাহ, অর্থনীতি বা রাষ্ট্রনীতি আর আমাকে টানে নি, সাহিত্য চর্চাটা কলেজে sister শিখা এর উৎসাহে চালিয়ে গেলেও বুয়েটে ঢুকে তা একেবারেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছে।

কলেজে খুব known figure ছিলাম আমি, শেষ দিন যখন testimonial নিতে যাই আমার activities এ কোন ধরনের দলগত কাজের দায়িত্বের কথা না লেখা থাকায় প্রদীপ দা খুব অবাক হয়ে জিগ্যেস করেছিল, তুমি কি class representative ও ছিলে না? আমি ম্লান হেসে ফিরে এসেছিলাম- উনি তো জানতেন না একজন ভাবি রাজনীতিককে আমি নির্মমভাবে আমার ভেতরে জ্যন্ত পুঁতে ফেলেছিলাম!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.