আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে নৈরাজ্যের প্রত্যাবর্তন: শফিক রেহমান

ছাত্র ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিনের কয়েক দিন পরে হলেও, আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি আমার হৃদয়ের অন্ত:স্থল থেকে গভীর ভালোবাসা এবং সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা। এখন বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সাম্প্রতিক বহি:প্রকাশে সমাজের একাংশের কালেকটিভ সহিংসতা, নির্মমতা ও রূঢ়তার প্রতিফলন ঘটছে। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে, ঘৃণার চাইতে ভালোবাসার বানী ভালো। সহিংসার চাইতে অহিংসার আন্দোলন কাম্য। নির্মমের চাইতে মমতাময় আচরন কাংখিত।

রূঢ়তার চাইতে নম্র ব্যবহারই সভ্য। এবং আরো ইম্পরটেন্ট হলো প্রতিশোধের চাইতে ক্ষমা এবং প্রতিহিংসার চাইতে দয়া - মানব সভ্যতার এই দুটি ধাপ পেরুনো। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে এই সভ্যতার অস্তিত্ব বজায় রাখতে এবং তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দরকার, যুদ্ধ নয়, দরকার শান্তি। যুদ্ধের কুৎসিত হুংকার-সে্লাগান মানুষ শুনতে চায় না - মানুষ শুনতে চায় শান্তির ললিত বানী। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি বেছে নিয়েছি ঘৃণা দিবস উদযাপনের পরিবর্তে ভালোবাসা দিন উদযাপনের বিভিন্ন পথ ও পন্থা।

গোলাপ ও চকলেট ভালোবাসার প্রকাশ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিনে আমার এই অনুভূতি প্রচারের জন্য আমি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটছিলাম এক টিভি স্টুডিও থেকে আরেক টিভি স্টুডিওতে। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলাভিশন, আরটিভি, এশিয়াটিভি, দিগন্ত টিভি, এটিএন বাংলা, মোহনা টিভি প্রভৃতির কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাদের যারা আমাকে ভালোবাসা তথা শান্তির বানী প্রচারের সুযোগ দিয়েছেন। থ্যাংকস এ লট। আপনারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে আমার হাতের গোলাপ ও চকলেট হচ্ছে মানুষের কোমল অনুভূতির সুন্দর প্রকাশ। কিন্তু আমি যদি আজ এখানে উপস্থিত হই রক্তাক্ত ছুরি চাপাতি নিয়ে, তাহলে সেটা হবে মানুষের নিষ্ঠুর অনুভূতির অসুন্দর প্রকাশ।

একই সাথে আমি বলতে পারি, ফাসিও মানুষের বর্বর আচরনের অসভ্য প্রকাশ। রাজাদের আমলে প্রাণদ- সম্প্রতি বাংলাদেশে যে ফাসি চাই আন্দোলন চলছে তার প্রেক্ষিতে আমি জানার চেষ্টা করেছি আমাদের এই ভূখ-ে অতীতে মানুষের প্রাণদ- কিভাবে কার্যকর করা হতো। যখন এই দেশে রাজাদের রাজত্ব ছিল, অর্থাৎ ১৮৫৮-তে বৃটিশ রাজ শুরু হবার আগে, তখন মৃত্যুদ- প্রাপ্ত ব্যক্তিকে, হাত পা বাধা অবস্থায় মাটিতে রাখা একটা পিড়িতে মাথা পাততে হতো। তারপর একটি হাতি তার শুড় দিয়ে ওই ব্যক্তির হাত পা ছিড়ে ফেলতো। সবশেষে ব্যক্তির মাথা পিষ্ট করতো হাতির পা।

কি বিতিকিচ্ছি দৃশ্য ছিল ভেবে দেখুন আপনারা। নিহত মানুষটির রক্ত, ঘিলু, চারদিকে ছিটকে পড়ছে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দিতে বৃটিশ রাজ এই ধরনের মৃত্যুদ- এখানে নিষিদ্ধ করে দেয়। রাজাদের রাজত্বে আরেকটা পদ্ধতি ছিল মৃত্যুদ- প্রাপ্ত ব্যক্তিকে শূলে চড়ানো। কি ভয়ংকর দৃশ্য ছিল ভেবে দেখুন।

নিহত মানুষের গুহ্যদ্বার থেকে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে একটি লোহার শলাকা। আপনারা কি চিন্তা করতে পারেন, সেই সময়ে ওই ব্যক্তিটির মৃত্যুযন্ত্রণা কেমন ছিল? কেমন ছিল তার আর্ত চিৎকার? আরো আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে, এসব মৃত্যু দেখতে বহু মানুষ জড়ো হতো, যেমনটা এই একবিংশ শতাব্দিতে মানুষ জড়ো হয়, সউদি আরব, ইরান, আফগানিস্তানে শিরñেদ দেখতে। অর্থাৎ, এখনো মানুষ কালেকটেড হয় মৃত্যু দেখতে এবং কালেকটিভলি মানুষ দেখে মৃত্যু। এটাকে যদি আপনারা অসভ্য বা বর্বর বলেন, তাহলে বর্তমান সময়ে কিছু ব্যক্তি বিচার বহির্ভূতভাবে কালেকটিভলি অপর কিছু ব্যক্তির ফাসি চাইছে সেই দাবিকে আপনারা কি সভ্য অথবা মানবিক বলে পারবেন? ফাসিতে একটি মৃত্যুদ- কার্যকর করার ঘটনা আমি আজ আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। ইরাকে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের শাসন আমলে প্রধান বিচারপতি ছিলেন আওয়াদ হামেদ আল-বন্দর।

সাদ্দাম সরকারের পতনের পর তার বিচার হয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হবার পর তাকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। তখন তার বয়স ছিল ৬২। ১৫ জানুয়ারি ২০০৭-এ তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ফাসিতে ঝুলে যাওয়ার পরপরই দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আল-বন্দরের মাথা এবং সেটা মেঝেতে গড়িয়ে কিছুটা দূরে চলে যায়।

এখন ধরুন, এই বয়সের এক ব্যক্তিকে যদি শাহবাগে ফাসি দেয়া হয়, তাহলে তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত মু-ুটা ছিটকে এসে আপনার কোলে পড়ে, তাহলে কি আপনি আনন্দিত হবেন? নাকি আতংকিত হবেন? উল্লসিত হবেন? নাকি ভীত হবেন? উত্তরটা আপনিই জানেন। বৃটিশ আমলে প্রাণদ- ফিরে যাই অতীতে। ঊনবিংশ শতাব্দিতে বৃটিশরা সভ্য হবার চেষ্টা করছিল। অতীতে নিজেদের দেশে মৃত্যুদ- প্রাপ্তদের শিরচ্ছেদ করা হতো কুড়াল দিয়ে টাওয়ার অফ লন্ডনে। কালক্রমে বৃটিশরা নিজেদের দেশে এবং তাদের উপনিবেশ ইনডিয়াতে, ফাসির ব্যবস্থা চালু করে।

ফাসির পূর্ব মুহূর্তে দন্ডিত ব্যক্তির মাথায় যমটুপি বা কালো টুপি পরিয়ে দেওয়া হতো যেন তার মৃত্যু যন্ত্রণার বীভৎস চেহারা উপস্থিত ব্যক্তিদের দেখতে না হয়। এসব ফাসি দেয়া হতো জেলখানায়, যেখানে সাধারন মানুষ বা দর্শকের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ছিল। সেখানে উপস্থিত থাকতেন, শুধু জেল কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার প্রমুখ সরকারি লোকজন। অর্থাৎ মৃত্যুদ- কার্যকর করা হতো, লোকচোখের আড়ালে। একদিকে বৃটিশরা আইন প্রয়োগ করে ফাসি দিলেও - অন্যদিকে তারা আইন বাহির্ভূত ফাসি বন্ধ করেছিল।

ঊনবিংশ শতাব্দির প্রথম দিকে সারা ইনডিয়াতে ঠগী দস্যুরা নীরিহ মানুষকে রুমাল দিয়ে ফাসি দিত। ১৮৩৬ থেকে ১৮৪২ -এর মধ্যে বৃটিশরা দি ঠাগিস অ্যান্ড ড্যাকোইটি সাপ্রেশন (ঠগী ও ডাকাতি দমন) আইনগুলো পাস করেছিল। এই ছিল বৃটিশ রাজের সময়ে ফাসির ব্যবস্থা। তখন প্রকাশ্যে ফাসি হতো না। প্রকাশ্যে ফাসির দাবিও উঠতো না।

আমি এতক্ষণ অতীতের কথা বললাম, এই কারণে যে আমরা বর্তমানে কোন ধরনের রাজ্যে বসবাস করছি, সেই বিষয়ে আপনাদের সচেতন করতে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখছি, বর্তমানে ৯৭-টি দেশ মৃত্যুদ- বন্ধ করেছে। ৫৮-টি দেশে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। আর বাদবাকি দেশে মৃত্যুদন্ডের আইন থাকলেও সেটা খুব কমই কার্যকর করা হয়। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হত্যার রেকর্ডধারী নরওয়ের ৩৪ বছর বয়স্ক অ্যানডার্স বেহরিং ব্রেভিক ২২ জুলাই ২০১১-তে নরওয়ের অসলো এবং উলেয়া-তে এক দিনে, গাড়ি বোমা ফাটিয়ে এবং গুলি চালিয়ে ৭৭ জনকে নিহত এবং ২৪২ জনকে আহত করে।

বিচারের পর তাকে ২১ বছরের জেলদ- দেয়া হয়। ফাসি নয়। তবে এই জেলদন্ডের সময় বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। চান্স এডিটরের অবস্থান ও দূরবস্থা সিরামিকস ইনডাস্টৃ বিশেষজ্ঞ, ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা এবং বর্তমানে লেখক ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মি. মাহমুদুর রহমান-এর সদ্য প্রকাশিত বই গুমরাজ্যে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আমাকে কিছু বলার অনুরোধ করা হয়েছিল। ধন্যবাদ এই বইয়ের লেখক, প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

কারণ এই চান্সে আমি একজন চান্স এডিটরের, সাবেক বিচারপতি খায়রুল হকের ভাষায়, বর্তমান অবস্থান ও দুরবস্থা সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। প্রথমত, আপনারা জানেন মাহমুদুর রহমান বর্তমানে অবরূদ্ধ অবস্থায় তার পত্রিকা অফিসে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্য সব কিছু বাদ দিলেও, এটা বলা যায়, একই অফিসে দিনের পর দিন, কাটানো তার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে না। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং মাহমুদুর রহমানের ও তার পরিবারের সার্বিক ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন নিরাপদে তাদের বাড়িতে থাকতে পারেন এবং অফিসে যাতায়াত করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।

এই প্রসঙ্গে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সরকারকে। আপনারা জানেন, শাহবাগ-জনতার উগ্র ঘোষনার পরপরই সরকার নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছিল, আমার দেশ পত্রিকার অফিস ভবনের নিচতলায়। ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নয় দ্বিতীয়ত, আপনাদের মধ্যে কেউ ¬কেউ হয়তো জানেন মাহমুদুর রহমানের চরিত্র হননের ব্যর্থ প্রচেষ্টায় কে বা কারা মাহমুদুর রহমানের কিছু টেলিফোন কথপোকথন ফেসবুকে তুলে দিয়েছেন। এসব কথা তিনি বলেছেন তার স্ত্রী পারভিন এবং তার কিছু শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে পারভিন বুঝিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ফটোশপ পদ্ধতিতে শাহবাগের অতিরঞ্জিত ছবি দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এবং সেটা শুনে মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে একটা গালি দিয়েছেন।

এতে মাহমুদুর রহমানের বিন্দুমাত্র বিব্রত বা লজ্জিত হবার কারণ নেই। কারণ, এসব কথপোকথন বা ফোন কনভারসেশন শুনলেই বোঝা যাবে, মাহমুদুর রহমানের কোনো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বিমুখী আচরণ নেই। তিনি যা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে বলেন, সেসব তিনি টেলিফোনেও বলেছেন। আর এখানেই ফাস করা এই টেলি কনভারসেশনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে ব্রাসেলেস প্রবাসী জনৈক বাঙালি আইনবিদের সঙ্গে তার স্কাইপ কনভারসেশন ফাস হয়ে যাওয়ার মৌলিক তফাৎ। স্কাইপ কনভারসেশনে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে যায় বিচারপতি নিজামুল ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বৈতনীতি অনুসরন করছেন।

একদিকে তিনি প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ন বিচারপতির ভূমিকায় অভিনয় করছেন। আর অন্যদিকে তিনি গোপনে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে সরকারের পক্ষে কিভাবে রায় দেয়া যায় সেই বিষয়ে ব্রাসেলস নিবাসীর সঙ্গে আলোচনা করছেন। আপনারা জানেন, এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ধরা পড়ে যাবার পর ওই বিচারপতিকে ওই ট্রাইবুনাল থেকে বিদায় নিতে হয়। মাহমুদুর রহমান একই জায়গাতেই ছিলেন এবং আছেন। সুতরাং তাকে তার পদত্যাগ করতে হয়নি।

মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে বহু বিষয়ে আমার মত পার্থক্য আছে। তার রাজনৈতিক দর্শন আমার চাইতে ভিন্ন। কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে, মন্ত্রী থাকা কালে তার দুর্নীতি উর্ধ্ব ভূমিকা এবং চান্স এডিটর, আবারো সেই বিচারপতি খায়রুল হকের ভাষায়, মাহমুদুর রহমানের সাহস অনুকরনীয়। বেঠিক শিরোনাম তৃতীয়ত, মাহমুদুর রহমানের বইয়ের শিরোনামটি আমার কাছে মনে হয়েছে বেঠিক। বাংলাদেশ কি গুমরাজ্যে ফিরে গিয়েছে? না।

বাংলাদেশ ফিরে গিয়েছে নৈরাজ্যে। বৃটিশ রাজ নয় - ইনডিয়ান রাজা-বাদশাহদের রাজ্যে নয়- একেবারে সেই আদিম অন্ধকার যুগের নৈরাজ্যে। যেখানে সমাজ ছিল না, রাজ্যও ছিল না। যেখানে নিয়ম ছিল না, আইন ছিল না। আজকের এই নৈরাজ্যের পরিনতি হতে পারে, আরো অসভ্যতা, বর্বরতা এবং আরো নৈরাজ্য।

তাই কখনোই যেন মাহমুদুর রহমানকে নৈরাজ্যে প্রত্যাবর্তন শিরোনামে কোনো বই লিখতে না হয় সেই কামনা করছি। আরেকটি কথা, মাত্র কয়েকদিন আগে মাহমুদুর রহমান বাধ্য হয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার দাম বাড়াতে। পত্রিকাটির দাম এখন হয়েছে বারো টাকা। আপনারা অনেকেই জানেন পত্রিকার সার্কুলেশন বেশি হলে পত্রিকার ক্ষতি হয়, যদি না যথেষ্ট পরিমানে বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। তখন প্রতি কপির দাম না বাড়িয়ে উপায় থাকে না।

দৈনিক আমার দেশ -এ সরকারি বিজ্ঞাপন, সরকার সমর্থক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন এবং সরকারের ভয়ে ভীত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন আসছে না অথবা খুব কমে গেছে - সেহেতু শুধু সার্কুলেশনের ওপর বেচে থাকতে হলে কপির দাম তাকে বাড়াতেই হবে। অন্যথায় বর্ধিত জনপ্রিয়তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্ধিত পরিমান নিউজপৃন্ট কেনা সম্ভব হবে না। আর সেক্ষেত্রে আমার দেশ যে বার্তা ও মতামত প্রচার করছে সেটা সীমিত হয়ে যাবে। তাই মাহমুদুর রহমানের গুনগ্রাহীদের কাছে আমার আবেদন, আপনারা, আমার দেশ পত্রিকায় যেন বিজ্ঞাপন আসে সেদিকে প্রভাব খাটান। অন্তত: এই দায়িত্বটুকু আপনারা পালন করুন।

বিজ্ঞাপনদাতাদের আপনারা জানিয়ে দিন, ঢাকা ও সিলেটে আমার দেশের সার্কুলেশন এখন মৃত্যুদ-কামীদের পৃষ্ঠপোষক পত্রিকাগুলোর চাইতে বেশি। আর হ্যা, আপনারা সবাইকে অনুরোধ করবেন মাহমুদুর রহমানের বইগুলো কিনতে। তা নাহলে আজকের এই সমাবেশের লক্ষ্য ব্যর্থ হবে। লন্ডনে ৩৫ বছরের অবস্থান আন্দোলন সফল হওয়ার কারণ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তে শাহবাগ স্কোয়ারে তরুণ-কিশোর-মাঝবয়সী এবং কিছু শিশুর যে সম্মেলন ঘটেছে সেটা দেখে আমার মনে পড়েছে ল-নে ট্রাফালগার স্কোয়ারের পাশে অবস্থিত সাউথ আফৃকা ভবনের সামনে নেলসন ম্যানডেলার মুক্তির এবং সাউথ আফৃকাতে অ্যাপারথেইড বা বর্ণবাদ অবসানের জন্য ১৯৫৯ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ একটানা দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা জন সমাবেশ। শীত বরফ বৃষ্টি গরম উপেক্ষা করে এই জনসমাবেশে কখনো বা একটা ছোট তাবুর নিচে বিশ পচিশজন আন্দোলনকারী আবার কখনো বা ভালো আবহাওয়ার সময়ে কয়েক শ’ মানুষ সমবেত হতেন।

আমি সেই সময়ে লন্ডনে ছিলাম এবং কাছেই বিবিসিতে মধ্যরাতে নাইট ডিউটি সেরে ফেরার পথে একাধিক রাতে সাউথ আফৃকা ভবনের সামনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জিত হয়। রোবেন আইল্যান্ড ও পলসমুর পৃজনে সুদীর্ঘ সাতাশ বছর সশ্রম জেল খাটার পর ১৯৯০ -এ নেলসন ম্যানডেলা মুক্তি পান। এবং ১৯৯৪-এ সাউথ আফৃকাতে বর্ণবাদের অবসান ঘটে। আন্দোলনকারীরা বাড়ি ফিরে যান লক্ষ্য অর্জিত হবার পরে।

পক্ষান্তরে শাহবাগ আন্দোলনকারীরা যদিও বলেছিলেন, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা বাড়ি ফিরে যাবেন না - তবুও তারা ফিরে যান। শুধু তাই নয় সতের দিন ফাসির দাবি তুলে, বাড়ি ফেরার সময়ে যে ছয়টি দাবি তারা পেশ করেন, সেখানে ফাসির দাবি ছিল না। সাউথ আফৃকার ওই আন্দোলন সফল হবার অন্যতম কয়েকটি কারণ ছিল- এক. এটি ছিল নির্যাতনকারী একটি সরকারের বিপক্ষে। দুই. এক বন্দি রাজনৈতিক নেতার মুক্তির লক্ষ্যে। এবং তিন. ঘৃণিত বর্নবাদের অবসান ঘটিয়ে মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।

বাংলাদেশে ব্যর্থ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা কিন্তু বাংলাদেশের শাহবাগ আন্দোলন চলেছে একটি ব্যর্থ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়। এর লক্ষ্য কারো মুক্তি নয় - লক্ষ্য কারো ফাসি এবং তাও বিচার বহির্ভূতভাবে। এর লক্ষ্য মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা নয় - ঘৃনাবাদ প্রচার করা। এ সবই অশুভ এবং তাই এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। সাউথ আফৃকার আন্দোলন সফল হয়েছিল কারণ সেটা ছিল অশুভ-র বিপক্ষে, শুভর পক্ষে।

বন্দিত্বের বিপক্ষে, মুক্তির পক্ষে। মৃত্যুর বিপক্ষে, জীবনের পক্ষে। তাই আশ্চর্য নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে শাহবাগ আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা হয়েছে। তারা লক্ষ্য করেছে একটি পর্যায় থেকে শাহবাগ আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থকরা। আর সেজন্যই এই জনসমাবেশ থেকে, আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা বিষয়ে কোনো দাবি ওঠে নি।

এসব ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু দুর্নীতি, ডেসটিনি এবং ইউনিপেটুইউসহ প্রায় ত্রিশটি মালটি লেভেল মার্কেটিং কম্পানি দ্বারা আধা কোটির বেশি মানুষকে প্রতারণা করা, হলমার্ক এবং অন্যান্য কম্পানির মাধ্যমে বিশেষত সরকারি ব্যাংক লুটপাট করা, গ্রামীণ ব্যাংকে অবাঞ্ছিত সরকারি হস্তক্ষেপ, কুইক রেন্টাল দ্বারা বিদ্যুতের দাম কুইক বাড়িয়ে আওয়ামী সমর্থকদের কুইক ধনী করা, শেয়ার বাজারে প্রায় তেত্রিশ লক্ষ বিনিয়োগকারীকে নিঃস্ব করা, মিডল ইস্ট থেকে চাকরি হারিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ শ্রমিকের দেশে ফেরা, গার্মেন্টস শিল্পে যথার্থ নিরাপত্তা বিধানে অসমর্থ হওয়া এবং নৌ ও স্থলপথে দুর্ঘটনা রোধে বিফল হওয়া। আজই দৈনিক মানবজমিনের একটি রিপোর্ট বলেছে, চাদপুরের মেঘনা-পদ্মা-ডাকাতিয়ায় বারো বছরে বারোটি লঞ্চ ডুবিতে কয়েক শ‘ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শাহবাগ স্কোয়ারে সামাবেশের সময়েও লঞ্চ ডুবিতে বহু যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এই বারো বছরে গার্মেন্টস শিল্পে কতো জনের মৃত্যু ঘটেছে? রোড অ্যাকসিডেন্টে কতো জনের মৃত্যু ঘটেছে? কতো মানুষ পঙ্গু হয়েছে? এসব তথ্য জানার জন্য এবং প্রতিকার বিধানের জন্য শাহবাগ স্কোয়ার থেকে দাবি ওঠা উচিত ছিল। একজন মানুষের ফাসি দাবির পরিবর্তে হাজার হাজার মানুষের প্রাণরক্ষার আওয়াজ ওঠা উচিত ছিল।

একজন জল্লাদের চাকরির পরিবর্তে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের দাবি করা উচিত ছিল। শাহবাগ আন্দোলনকারীরা এখনো তাই করতে পারেন এবং একই সঙ্গে জুড়ে দিতে পারেন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উর্ধ্বগতি বন্ধ করতে। এ সবই বর্তমান সময়ের সাধারন মানুষের দাবি। শাহবাগ আন্দোলনকারীরা বলতে পারেন, শাহবাগের জনসংখ্যাই সাধারন মানুষের প্রতিনিধিত্বের পরিচায়ক। কিন্তু এই ধারনা ভুল।

তারা হয়তো সাধারন মানুষের একাংশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বৃহৎ অংশের নয়। আমার এই কথাটি যে ভুল সেটা প্রমাণের জন্য তারা দুটি চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। দুটি চ্যালেঞ্জ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এক. অভিযুক্ত বন্দি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে একদিনের জন্য পেরলে একটি জনসমাবেশ করার অনুমতি দিলে সেই সমাবেশে জনসংখ্যা কতো হয়, সেটা তারা দেখতে পারেন। দুই. যেহেতু কোনো নির্দিষ্ট দিনে শুধু কিছু নির্দিষ্ট স্থানে জনসমাবেশ ঘটানো সম্ভব, সেহেতু এই চ্যালেঞ্জে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বিজয়ী হলেও, সামগ্রিকভাবে দেশে কোন পক্ষে কতো মানুষ আছে সেটা জানার জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একই দিনে অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারন নির্বাচনের ডাক দিন।

সুকুমারবৃত্তির নয় নিষ্ঠুরতার প্রকাশ বস্তুত, বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে সেখান থেকে এবং আওয়ামী সরকারের সার্বিক ব্যর্থতা থেকে সাধারণ মানুষের চোখ সরানোর লক্ষ্যেই আওয়ামী সরকার শাহবাগ সমাবেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে আইন ও আদালত বিরোধী এই জনসমাবেশকে সরকারি অনুমোদন দিয়েছে। শাহবাগ আন্দোলনের কিছু বৈপরীত্য কল্পনাকে হার মানিয়েছে। মোমবাতি, আলপনা ও গান মানুষের সুকুমার বৃত্তির প্রকাশ মাধ্যম হতে পারে। কিন্তু সেখানে শোনা গেছে মোমবাতির নরম আলোর বিপরীতে আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো গরম সেøাগান। আলপনার সৌন্দর্যের বিপরীতে দেখা গেছে ফাসিকাঠের পুতুল ও ফাসির দড়ির নিষ্ঠুরতা।

সারল্য ও নিষ্পাপতার প্রতীক শিশুদের মাথায় দেখা গেছে ফাসির নির্মম বানীর হেডক্যাপ, তাদের হাতে দেখা গেছে ফাসি চাই লেখা কেক-পেসটৃ। এই শিশুরা কি বোঝে ফাসি চাই কি? তাদের সুকুমারবৃত্তি এভাবে নষ্ট করে দেয়ার অধিকার কোনো পিতামাতার আছে কি? প্রসঙ্গত আমি শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা ব্লগার রাজীবকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাতে চাই। এই ধরনের নিষ্ঠুর অকাল মৃত্যু কারো কাম্য হতে পারে না। মানুষের মৃত্যু নয় - জীবনই কাম্য। রাজীব নয়, দায়ী তার সমর্থকরা আমরা কেউ জানি না রাজীব কেন খুন হয়েছেন।

তবে আমি বলতে চাই লেখার উত্তর লেখাতেই কাম্য। রাজীব তার ব্লগে যা লিখেছিলেন তাতে ধর্মপ্রান মুসলমানদের অনুভূতি আহত হয়েছে। বিশ্বে এখন প্রায় সাত কোটি মানুষ আছে, এদের মধ্যে যে কেউ ইন্টারনেটে ইসলাম বিরোধী লেখা পোস্ট করতে পারে। তাতে বিচলিত হয়ে উগ্র মূর্তি ধারন করলে ক্ষতি বই লাভ হবে না। এখানে যেটা বিবেচ্য সেটা হলো, রাজীবের আদর্শের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন এই দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ আরো কিছু ব্যক্তি।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ রাজীব। ব্যক্তি হিসেবে রাজীব যা করেছেন তাকে দলগত সমর্থন জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ এবং সেভাবেই তারা দেশগত ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করেছেন। এটা নিন্দনীয় এবং বিপজ্জনক। গোটা দেশকে আজ নাস্তিক বনাম আস্তিকের গৃহযুদ্ধের দিকে পরিকল্পিতভাবে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও তার অনুসারীরা। যারা সুস্থ মানুষ, যারা শান্তি ও অহিংসায় বিশ্বাস করেন, যারা মমত্ব ও ভালোবাসায় আস্থা রাখেন, তাদের ওপর আজ গুরুদায়িত্ব পড়েছে বর্তমান নৈরাজ্য থেকে দেশের মানুষকে মঙ্গলের দিকে, নিয়মের দিকে, আইনের দিকে ফিরিয়ে আনার।

যুদ্ধ অপরাধী রূপে সন্দেহভাজনদের বিচার চাইতে পারেন শাহবাগ আন্দোলনকারী - কিন্তু বিচার বহির্ভূত মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দাবি তারা তুলতে পারেন না। আশা করবো, ফাসির দাবি, তা-ও বিচারবহির্ভূত এবং সম্মিলিতভাবে তোলাটা যে কতো অসভ্যতা এবং বর্বরতা, সেটা সবাই অচিরেই বুঝবেন এবং বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশকে কলংকিত করা থেকে বিরত হবেন। মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে লেখা ও ম্যানিফেস্টো আমি নিউজপেপার ও টেলিভিশনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করবো তারা যেন একটু কষ্ট করে, পড়াশোনা করে, জানার চেষ্টা করেন, কেন এবং কখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদ- নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এপৃল ১৯৮০-তে সউদি আরবের একজন পৃন্সেস প্রেমে পড়েছিলেন এক সাধারণ সউদি যুবকের। সউদি রাজপরিবার এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ওই প্রেমিকযুগল দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন।

কিন্তু তারা ধরা পড়েন এবং উভয়েরই শিরচ্ছেদ করা হয়। ওই ঘটনায় বিশ্ববাসীর বিবেক তাড়িত হয় এবং বিবিসি তখন, ডেথ অফ এ পৃন্সেস নামে একটি ডকুমুভি প্রচার করে। ওই ঘটনা ও মুভি আমাকে খুব আলোড়িত করে এবং আমি যায়যায়দিন নামে একটি ধারাবাহিক কলাম লেখা শুরু করি সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে। এই ঘটনাই আমাকে রাজনৈতিক লেখক রূপে নিয়ে আসে। ওই লেখার সূচনাতেই আমি ওই মুভির ক্লিপ দেখে প্রাণদন্ডের তীব্র সমালোচনা করি এবং এখনো করে যাচ্ছি।

আমি এটাও আশা করবো, যদি ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয় এবং আজ যারা নিগৃহীত ও নির্যাতিত হচ্ছেন, তারা যদি ক্ষমতায় আসেন, তখন যেন তারা প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ফাসির দাবি না তোলেন। ফাসি যেন তারা বাংলাদেশে চিরনিষিদ্ধ করেন। আমি আশা করি বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে মৃত্যুদ- নিষিদ্ধ করনের অঙ্গীকার করবে। মৃত্যু নয় জীবনে, ঘৃণায় নয় ভালোবাসায় গৃহযুদ্ধে নয় শান্তিতে আমি মৃত্যুতে নয়, জীবনে বিশ্বাসী। আমি ঘৃণায় নয়, ভালোবাসায় বিশ্বাসী।

আমি গৃহযুদ্ধে নয়, শান্তিতে বিশ্বাসী। আমি ফাসির মঞ্চ ও দড়িতে নয়, গোলাপ ও চকলেটে বিশ্বাসী। সবাইকে চকলেট উপহার দিচ্ছি। সবাই এখন চকলেট খেলে খুশি হবো। এতক্ষণ আমার কথা শোনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

থ্যাংক ইউ। http://shafikrehman.com/home/details/608 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.