আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোরের গ্রাম পাঁচিল এখন সুস্বাদু খাবারঝুরি পিঠার গ্রাম


সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সীমান্তবর্তী শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল গ্রাম। দশ-বিশ জন নয় গ্রামটির সবাই ছিল চোর। তাই এ গ্রামের নাম শুনলেই এক সময় ঘৃণা করত সবাই। তাদের উত্পাতে ছিল দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ অতিষ্ঠ। শহরে লঞ্চ-স্টিমার ঘাটে, আর গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন হাটে বাজারে পকেট কাটা এবং ঘরে ঢুকে চুরি করাই ছিল এদের প্রধান পেশা।

তাই গ্রামটির পাঁচিল নামের সঙ্গে চোর যুক্ত হয়ে চোর পাঁচিল নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে বর্তমানে এই গ্রামের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতীতের পেশা বাদ দিয়ে তারা এখন তৈরি করছে সুস্বাদু খাবার ঝুরি। যা তৈরি করে তারা হয়েছে লাভবান। আর চোরের গ্রাম পাঁচিল বদলে হয়েছে এখন ঝুরি শিল্পের গ্রাম।

ধবধবে সাদা, দু থেকে চার ইঞ্চি লম্বা ও চিকন সুস্বাদু ঝুরি। পাশাপাশি চিনি ও গুড়ের তৈরি ঘোড়া, হাতি, মাছ, পিরামিড আকৃতির মিষ্টি সাঁজ ঝুরির সঙ্গে না হলেই নয়। আর এই ঝুরি ও সাঁজ যে গ্রামে তৈরি হয়, সে গ্রামটি সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীসংলগ্ন প্রত্যন্ত পাঁচিল গ্রাম। এ গ্রামের প্রায় ২৫শ’ লোকের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন বয়সী নারী, প্রতি বাড়িতে বাড়িতে চলছে এই ঝুরি তৈরির কাজ। একই সঙ্গে সাঁজও তৈরি হচ্ছে এখানে।

পরে তা হাটে-বাজারে, মেলা ও তাদের নিজ বাড়িতেই বিক্রি হচ্ছে। আর তা করেই ভালো চলছে এদের সংসার। জানালেন, পাঁচিল গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রহিমা বেগম। তিনি জানান , ৫ বছর আগেও ছিল তাদের কষ্টের সংসার। স্বামীর কোনো কাজ না থাকায় অপকর্মে লিপ্ত থাকত সব সময়।

এখন স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বাড়িতে বসেই সবাই ঝুরি ও সাঁজ তৈরি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে বাড়তি আয়ও হচ্ছে তাদের। অতীত অপকর্মের কথা অকপটেই স্বীকার করলেন এই শিল্পের কারিগর সৈয়দ আলী ব্যাপারী। তিনি জানালেন, অতীতের চুরির পেশা বাদ দিয়ে তার গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার সত্ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। বর্তমানে এনায়েতপুর থানার খোকশাবাড়ী গ্রামে অন্তত ত্রিশটি দরিদ্র পরিবার এই ঝুরি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তরা জানান, এক বস্তা আতপ চাল ২ হাজার ৫শ’ টাকায় কিনতে হয়।

তা দিয়ে ঝুরি হয় দুই মণ। আর এই দুই মণ ঝুরি তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচদিন। ১৮শ’ টাকা মণ দরে তা বিক্রি হয়ে থাকে। তাতে গড়ে প্রতিদিন দেড়শ’ মণ করে ঝুরি এই গ্রাম থেকে উত্পন্ন হচ্ছে। অর্থাভাবে ব্যবসার পরিধি না বাড়ায় আয়ও বাড়ছে না ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

তাই সহজ শর্তে সরকারি ঋণের সহযোগিতা চাইলেন ঝুরি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী উদ্যোক্তা শাহজাহান শেখের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম, রশনাই আলীর স্ত্রী পাখি বেগম। তারা জানান, পাইকারী ৪৫ টাকা কেজি দরে রাজশাহী, আরিচা, টাঙ্গাইল, ঢাকা, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে ঝুরি কিনে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। আর আমরা সঠিক বাজারের অভাবে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। শুধু বদনাম ঘুঁচেছে চোরের। এদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং শাহজাদপুর বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বজলুর রশিদ জানান, গত ২০ বছর ধরে পাঁচিল গ্রামের মানুষ চৌর্যবৃত্তি পরিহারের জন্য ঝুরি তৈরির শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।

এসব দরিদ্র মানুষ মহাজনের কাছ থেক ঋণ নিয়ে কষ্টে ব্যবসা চালাচ্ছে। তাই এই শিল্প উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ানো দরকার Click This Link
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.