আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাতাসে ফুলের সৌরভ


যেদিকে তাকাই নানা রং আর গন্ধের ফুল। সৌরভ বাতাসে যশোর শহর থেকে আমাদের ইজিবাইক ছাড়ল সকাল সাড়ে নয়টায়। হেমন্তের মিষ্টি সকাল। নরম রোদ। পরিষ্কার আকাশ, হালকা বাতাস।

মনপ্রাণে অন্য রকম ভালো লাগা, আনন্দ। আমরা যাব ঝিকরগাছার গদখালী বাজার। রাজধানী শহরে যে ফুল আসে, তার সিংহভাগ চাষ হয় ওই এলাকায়। সেখানে একটি বাজার আছে। নাম গদখালী।

ফুলচাষিরা খেত থেকে ফুল তুলে ওই বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। খুব ভোরেই সেখানে বেচা-বিক্রি শুরু হয়। আমাদের ইচ্ছা, ফুলের চাষ দেখা। খেতে গিয়ে নভেম্বরের মিষ্টি রোদে ঘুরে তাজা রজনীগন্ধা, গোলাপ আর গ্লাডিওলাসের সুবাস নেওয়া। ইজিবাইকে চড়তে মজা।

ধীরে চলে। আশপাশের সবকিছু ভালোমতো দেখা যায়। কেবল চোখের-দেখা নয়, মনের দেখাও হয়। বারবার থামিয়ে ছবি তুলতেও অসুবিধা হয় না। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম সেই গদখালী বাজারে।

ভোরে বাজার বসেছিল, তার চিহ্ন সর্বত্র। তখনো বেপারি গাঁদা ফুল নিয়ে বসে আছেন। এক হাজার গাঁদা মাত্র ৪০ টাকা। কয়েকটি গাঁদা হাতে নিয়ে দেখলাম। একদম তাজা, পাপড়িতে বিন্দু বিন্দু শিশির।

কারও খোঁপায় ওঠার জন্যই যেন অপেক্ষা। সকালে গদখালী বাজারে বেজায় ভিড়। নানা রকম মানুষ। চায়ের কাপে চামচের ঠোনাঠুনির শব্দ। টানা দুই কাপ মেরে বেশ ঝরঝরে করে নিলাম শরীরটাকে।

এবার বাজার ছাড়িয়ে গ্রামের ভেতরে যাওয়ার প্রস্তুতি। সেখানকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম নিজে যেতে পারলেন না। তার একজন সহকর্মী, নাম মিজান, আমাদের সঙ্গে এলেন। ইজিবাইক এবার চলল ঝিকরগাছার পথে। বাতাসে ফুলের সৌরভ।

বুক ভরে সুবাস নিলাম। আমরা পানিসারা ইউনিয়নে চলে এসেছি। জানা গেল, এই ইউনিয়নই ফুল চাষে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখানে যাঁর জমি আছে, তিনিই ফুলচাষি। ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে শুধু ফুল আর ফুল।

গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস। দূরে একটি গোলাপবাগান দেখা গেল। থেমে গেল ইজিবাইক। আমরা হুড়মুড় করে ছুটে গেলাম বাগানে। বাগানের মালিক আকবর হোসেন।

নিজে ছুটে এসে প্রায় দুই ডজন গোলাপ তুলে হাতে দিলেন। এত তো চাই না আমাদের। সে কথায় কানই দিলেন না তিনি। আফসোস করলেন, তাঁর খেতের একটি বিশেষ গোলাপ আমাদের না দিতে পেরে। দুই দশক ধরে তিনি ফুলের ব্যবসার সঙ্গে আছেন।

নিজের জমি তো আছেই, অন্যের জমি নিয়েও চাষ করেন। গত বছর তাঁর লাভ দুই লাখ টাকা। তাঁর মতো চার হাজার ফুলচাষি আছেন এই ঝিকরগাছায়। ইজিবাইক থামিয়ে আমরা ঢুকলাম গ্লাডিওলাস ফুলের খেতে। মিজান আমাদের দেওয়ার জন্য চার-পাঁচটি গ্লাডিওলাস ছিঁড়লেন।

এবার ভিন্ন চিত্র। দূরে গাছের ছায়ায় বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাঁরা রে রে করে তেড়ে এলেন। অবশেষে জমির মালিকের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এল! মিজান আমাদের নিয়ে গেলেন জারবেরা ফুল দেখাতে। লাল, হলুদ রং।

প্লাস্টিকের ছাউনির নিচে বিশেষ কায়দায় এ ফুলের চাষ করা হয়েছে। ফুলটি এ দেশে আনা হয়েছে ভারতের পুনে থেকে। বড় আদুরে এই ফুল। খুব যত্ন-আত্তি করা লাগে। খরচ বেশি হওয়ায় সর্বস্তরে চাষ এখনো শুরু হয়নি।

একটি খেতে দেখা গেল, রজনীগন্ধা কাটা হচ্ছে। কিন্তু পাপড়ি এখনো মেলেনি। কৃষক জানালেন, রজনীগন্ধা এ অবস্থায়ই কাটতে হয়। কাটার পর এই ফুল ঢাকায় পৌঁছাতে মাঝখানে সময় যায় প্রায় ৩৫ ঘণ্টা। এ সময়ই এটি পাপড়ি মেলে।

ঝিকরগাছা অঞ্চলে ফুলের চাষ শুরু হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। আর বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। শুরুটা হয় শের আলী সরদার নামে ফুলচাষির হাত ধরে। । তাঁর কথা যখন আলাপ হচ্ছিল, ঠিক তখনই তাঁর দেখা মিলল।

৬৫ বছরের মতো বয়স। ভ্যানে করে যাচ্ছিলেন কোথাও। যেতে যেতে হাত নেড়ে বললেন, একটু ব্যস্ত আছেন। পরে কথা হবে। পথে যেতে যেতে একটি খেত চোখে পড়ল।

ফাঁকা। ঝরঝরে মাটি প্রস্তুত। জানা গেল, এখানে গ্লাডিওলাস লাগানো হয়েছিল। এখন আলুর চাষ হবে। দূরে মাঠে পাকা ধান।

পাশেই টকটকে লাল গোলাপের বাগান। এর একটি খেত পরেই সাদা গ্লাডিওলাস। পাশে গাদা ফুল। ধান, আলু, গোলাপ, গ্লাডিওলাসের কী অপূর্ব সহ-অবস্থান। ফুলখেতে অসংখ্য রং-বেরঙের প্রজাপতি।

দূরে দেখা গেল, এক কৃষক ঝুড়ি ভর্তি গোলাপ মাথায় নিয়ে খেতের ভেতর থেকে সড়কে উঠছেন। এখানকার কিছু খেতে এখন ফুল আছে। কিছু খেতে ফুল আসবে আসবে করছে। আর এক-দেড় মাস পরে ঝিকরগাছা তার সব সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হবে। তখন সব খেতেই ফুল ফুটবে।

চারদিকে শুধুই তাজা ফুল আর সুবাস। ইশ, কেন যে এক মাস আগে এলাম! এ রকম যখন ভাবছি, হেমন্তের সংক্ষিপ্ত দিন তখন ফুরোনোর পথে। গোধূলিলগ্নে বিদায় জানালাম ঝিকরগাছাকে, গদখালীকে। কীভাবে যাবেন ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে যশোর যাওয়া যায়। গাবতলীসহ একাধিক স্টেশন থেকে বাসগুলো ছাড়ে।

সেখান থেকে ঝিকরগাছা প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ। যশোর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আপনি সেখানে পৌঁছাতে পারেন। ইজিবাইকও নিতে পারেন। নামতে হবে গদখালী বাজার। সেখান থেকে আপনি যাবেন ফুলের গ্রামগুলোতে।

যশোরে থাকার জন্য মোটামুটি ভালো মানের হোটেল রয়েছে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রেস্ট হাউস আছে, যেগুলো বেশ ভালো। View this link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।