আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুনের মামলা প্রত্যাহার, শীর্ষ সন্ত্রাসীর অব্যাহতি !!!!!!

জীবন টা একটা বইয়ের পাতার মত যত উল্টাবে ততই জানবে !!!

একটি আলোচিত খুনের মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেন, খোরশেদ আলমসহ ১৯ সন্ত্রাসী এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। মিরপুরের ব্যবসায়ী আফতাব হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২০০৫ সালে এ মামলা হয়েছিল। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রও দাখিল করেছিল র‌্যাব। ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের গঠিত কমিটি মামলাটি প্রত্যাহারে আদালতে সুপারিশ পাঠায়।

পরে আদালত তা প্রত্যাহারের আদেশ দেন। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এই কমিটির সভাপতি। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের মামলা প্রত্যাহার হতে পারে না। যদি হয়ে থাকে, তাহলে ভুলবশত হয়েছে। তবে কীভাবে ভুল হলো, তা আমি জানি না।

’ এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা কমিটি এ ব্যাপারে সুপারিশ করেছিল। হাজার হাজার মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া কমিটির পক্ষে সম্ভব নয়। মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন এক নম্বর আসামি ওসমান গনি সরকার। শাহাদত তিন নম্বর আসামি। অন্য আরেকটি খুনের মামলায় শাহাদত ও খোরশেদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার ও মিরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম হানিফ মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করেন। সুপারিশে সাংসদ কামাল মজুমদার লেখেন, ‘আবেদনকারী আমার অত্যন্ত পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। তাই মামলাটি প্রত্যাহারের জোর সুপারিশ করছি। ’ গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে সাংসদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু হাজি ওসমান গনির জন্য সুপারিশ করেছি।

তিনি মার্ডার কেসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। জমিজমা নিয়ে গন্ডগোলের কারণে আফতাব খুন হন। কিন্তু তাঁকে রাজনৈতিক কারণে এই মামলায় জড়ানো হয়েছিল। ’ ওসমান মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলে দাবি করেন তিনি। তবে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ওসমান গনি থানা বা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কেউ নন।

তিনি সুবিধাবাদী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সভায় চার-পাঁচ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এতগুলো মামলার মধ্যে কারা কারা আসামি ছিল, তা মাথায় রাখা সম্ভব নয়। ’ গত ৫ সেপ্টেম্বর মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মামলা প্রত্যাহারের জন্য আদালতকে অনুরোধ জানায়। এরপর ৩ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

মামলার ১৯ আসামির মধ্যে ১১ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শাহাদত, খোরশেদসহ আটজন আসামি পলাতক থাকায় তাঁরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ ব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, আইন অনুযায়ী আসামিদের অনুপস্থিতিতে তাঁদের অব্যাহতি কিংবা মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। এটি নিতান্তই অন্যায় হয়েছে। মামলার বাদী নিহত আফতাবের ভাই ব্যবসায়ী আফরোজউদ্দিন।

প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বিচার শেষে আসামিরা খালাস পেলে আমার বলার কিছু ছিল না। কিন্তু পেশাদার ও চাঁদাবাজ খুনিদের সরকার এভাবে বাঁচিয়ে দিল। আমরা কার কাছে ন্যায়বিচার পাব?’ আফরোজউদ্দিন অভিযোগ করেন, এ মামলা প্রত্যাহারে ৬০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এই টাকা সংশ্লিষ্ট সবাই ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত মামলা তুলে না নিলে তাঁকে সপরিবারে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এ কারণে সাক্ষীরা আদালতে যেতে পারেননি। হুমকির পর তিনি থানায় কয়েকবার সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন। মামলা: পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শাহাদত ১৪টি হত্যা, খোরশেদ ১০টি হত্যাসহ ১৩টি মামলার পলাতক আসামি। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছাইদুর রহমান ওরফে নিউটন হত্যাসহ দুটি মামলায় আদালত শাহাদতকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। আর নিউটন হত্যা মামলায় খোরশেদও মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত।

এঁরা দুজন পাঁচ বছর ধরে বিদেশে পালিয়ে আছেন। তাঁদের নামে বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচ শতাধিক জিডি আছে। নয় বছরে শাহাদত আরও যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে সেগুলো হচ্ছে: ২০০১ সালে বিএনপির নেতা ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার শওকত আলী মিস্টার, ২০০২ সালে ডিশ ব্যবসায়ী শামসুল হক ওরফে টিপু, ২০০৫ সালে প্রিন্স গ্রুপের মালিক ব্যবসায়ী মো. শহীদুল্লাহ, একই বছর মিরপুর ১ নম্বরে ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান ও শফিকুর রহমান জোড়া খুন এবং ২০০৬ সালে পরিবহনকর্মী হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া মিরপুর ১ নম্বরে ধানখেতের মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা মনিরউদ্দিন ওরফে মনু, মিরপুর ১ নম্বরে মিশকো সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী শহিদ হোসেন ওরফে শান্ত, মিরপুর ১ নম্বরের স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেটে বৃদ্ধ আবদুর রহিম, মিরপুর ১ নম্বরে রিপন চৌধুরী, মিরপুর ১১ নম্বরের ঝুট ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ, মিরপুর ১১ নম্বরের সেলুনের মালিক মন্টু মিয়া, মিরপুর ১১ নম্বরে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আবদুল বারেক, মিরপুর ১ নম্বরে কাঁচামাল ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন, ঠিকাদার কামরুল হাসান ওরফে বিপ্লব হত্যা প্রভৃতি। বেশির ভাগ মামলা বর্তমানে বিচারাধীন।

পুলিশের বক্তব্য: মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শাহাদত ও খোরশেদের বিরুদ্ধে কিছুদিন ধরে চাঁদাবাজির অভিযোগ কম আসছে। শোনা যাচ্ছে, এই দুই সন্ত্রাসী পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা ভারতে আত্মগোপন করে আছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টা চলছে। পরিবারের কথা: নিহত ব্যবসায়ী আফতাবের স্ত্রী জাহানারা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশাদার খুনি-চাঁদাবাজদের রাজনৈতিক নেতা বানিয়ে রক্ষা করল সরকার।

আর আমাদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করল। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার পেলাম না। ’ আফতাবের মা আফরোজা বেগম বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার পেলাম না। এখন রাতে আর ঘুম হয় না। সন্ত্রাসীরা বড় ছেলে ফিরোজউদ্দিন ও নাতি জাহাঙ্গীর আলমকেও খুন করল, বিচার পেলাম না।

মেজো ছেলে আফতাব হত্যারও বিচার হলো না। অনেকের সামনে আফতাবকে চাঁদার জন্য গুলি করে মেরেছে। ঘটনার অনেক সাক্ষীও আছে। তার পরও মামলা প্রত্যাহার করা হলো!’ ঘটনার বিবরণ: ২০০৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সকালের ঘটনা। মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের ই-ব্লকে নিজ বাসার কাছে সন্ত্রাসীরা সাত-আটটি মোটরসাইকেলে করে এসে ব্যবসায়ী আফতাবকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থলে ফেলে চলে যায়।

মাথা, বুকে ও বাঁ-পায়ে তিনটি গুলি লেগে আফতাবউদ্দিন লুটিয়ে পড়েন। তিন দিন পর ২৮ ডিসেম্বর পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে মারা যান তিনি। আফতাবউদ্দিন মিরপুর ১ নম্বরের মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনায় শাহাদত, খোরশেদ, তাঁদের ১৩ জন সহযোগীর নাম উল্লেখসহ আরও পাঁচ-ছয়জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীকে আসামি করে মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন আফতাবের ভাই আফরোজউদ্দিন। এজাহারে বলা হয়, মোটা অঙ্কের চাঁদা না পেয়ে আফতাবউদ্দিনকে খুন করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, শাহাদত ও খোরশেদের ১১ সহযোগী গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ করেন। পরে নয়জন আদালত থেকে জামিন পান। ২০০৭ সালে র‌্যাব-৪ শাহাদত, খোরশেদ ও তাঁদের ১৭ জন সহযোগীকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আসামি রেজা দেওয়ান ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। অন্য আসামিরাও সন্ত্রাসী: বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে ও নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, আফতাব হত্যা মামলার অন্য ১৭ জন আসামিও মিরপুর, শাহ আলী, পল্লবী থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী।

তাঁরা হলেন: খোরশেদ (২৭), ডিশ শাহীন (৩৫), মন্টু ওরফে মোতালেব (২৪), মিন্টু (২৩), গাজী সুমন (২৪), রেজু (৩০), মিজানুর রহমান ওরফে পল্টন বাবু (৩২), হাসান ওরফে হাইল্যা (২৪), জাকির খান (৩৮), মুন্সী এবাদুল ইসলাম (৩৮), মামুন আল কাইয়ুম (৩৫), জসিমউদ্দিন (১৫), শহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু (১৬), রিয়াজউদ্দিন ওরফে বুদ্দু (১৭), শ্যামল ওরফে মুক্তার (১৮), তারিকুল ইসলাম ওরফে স্বপন (১৯) ও মজিবর রহমান শেখ। যে পদ্ধতিতে মামলা প্রত্যাহার হলো: প্রথমে এ মামলা প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ সরকার মহানগর কৌঁসুলিকে ১৫ দিনের মধ্যে মতামত দিতে বলেন। সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য জেলা কমিটির কাছে সুপারিশ করেন। এরপর জেলা কমিটির সভায় মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জেলা কমিটি সুপারিশ পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের ১২তম সভায় মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১০ সালের ১০ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (আইন শাখা-১) সহকারী সচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লার সই করা চিঠিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮-এর ৪৯৪ ধারায় মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য ঢাকা মহানগর পিপিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। একই সঙ্গে মহানগর পুলিশ কমিশনারকে মামলাটি প্রত্যাহারের তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে অনুরোধ করা হয়। এরপর পিপি গত ৩ অক্টোবর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন।

পিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আবেদনে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মনে করে, মামলাটি পরিচালনা করলে সরকার লাভবান হবে না। তাই মামলাটি প্রত্যাহার করা আবশ্যক। বিশেষ দায়রা জজ মো. মাহবুবুর রহমান মামলাটি প্রত্যাহার এবং আসামিদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ দেন। আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, ‘যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি চালাবেন না। সেহেতু মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া গেল।

’ পিপির বক্তব্য: রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি মো. আবদুল্লাহ আবুর সঙ্গে গতকাল রোববার কথা হয় তাঁর সরকারি দপ্তরে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, আফতাব হত্যা মামলার আসামি শাহাদতসহ আট আসামি পলাতক রয়েছে। তাঁর দাবি, তিনি শুধু আসামি ওসমান গনিকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন। বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, শাহাদতের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এই মামলা থেকে কীভাবে অব্যাহতি পেলেন, তা তিনি নিজেই জানেন না। ****প্রথম আলো থেকে কালেকশন ****


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।