আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতাল এক মহৌষধ .......................



"হরতাল" গুজরাটি এক শব্দ। জানি না কিভাবে হরতাল শব্দটি বাংলাদেশে সংক্রমিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে আলেচিত এক নাম হরতাল। বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনে হরতালকে এক মহৌষধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সত্যি সত্যিই এ ওষুধ যেন এলোপ্যাথিক ওষুধের ন্যায় সরকারের ভিতরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যা হোমিওপ্যাথিক ওষুধে সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন যে পার্টি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় তখন হরতাল সম্পর্কে তাদের বক্তব্য থাকে হরতাল হলো উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতিবন্ধক। আবার ক্ষমতা বিচ্যুত হলে হরতালকেই তারা উন্নয়ন ও অগ্রগতির রক্ষাকবচ হিসেবে ধারণ করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল হলো ঐ নীতি বাক্যের ন্যায় ‘‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’’ কথায় আছে, ধূমপায়ীদের ধূমপান না করলে পায়খানা ক্লিয়ার হয় না অর্থাৎ যারা ধূমপান করেন তারা ক্ষতির কারণ জেনে শুনেই এর থেকে উপকার লাভ করেন। জ্ঞানী-গুণী ও বুদ্ধিজীবীদের অভিমত হলো হরতাল দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে দেয়। তাই ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও দেশের ভাবুকরা হরতালকে পরিহার করতে রাজনীতিবিদদের উপদেশ দিয়ে থাকেন।

কিন্তু বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবী ও বিজ্ঞানীরা এখনও সরকারের জুলুম-নির্যাতন, সীমাহীন অবৈধ কর্মকান্ড, দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি, নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করা, সরকারের দলীয় লোকদের চাঁদাবাজি, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনের জন্য মিথ্যা মামলা-হয়রানি ও সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সকল সমস্যার আরোগ্যতা লাভে হরতালের চেয়ে ভালো কোন ওষুধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন? যা ব্যবহার ও প্রয়োগে বিরোধী দল সরকারের পচনশীল শরীরকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে? সচেতন মহলের ধারণা বাংলাদেশে হরতালের চেয়ে ভাল কোন মহৌষধ এখনও সৃষ্টি হয়নি। যা ব্যবহারে তারা উদ্বুদ্ধ হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল দেখে এ দেশের সচেতন নাগরিকদের ধারণা হচ্ছে, রাজনৈতিক শ্লোগান ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়' আজ এ শ্লোগান উল্টো রূপ ধারণ করেছে। কেননা আজ বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ রাজনীতিবিদ দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তিকে বড় করে দেখে রাজনীতি করছে। সরকারী দল ও বিরোধী দল প্রত্যেকে নিজের ও দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে।

সরকারী দল ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে ট্রানজিট প্রদান ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে চুক্তি করেছে। আর বিরোধী দল সরকারের দেশ বিরোধী কার্যকলাপের সময় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অর্থাৎ সভা-সমাবেশ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। কিন্তু যখন বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাড়ি ছাড়তে হলো, দলীয় লোকদের পুলিশ পেটাতে শুরু করলো ও তাদের ওপর সরকারের জুলুম-নির্যাতন বেড়ে গেল তখন বাধ্য হয়েই হরতালের মতো এক মহৌষধের কাছে বিরোধী দলের আশ্রয় নিতে হলো। সরকার ও বিরোধী দলের প্রতিহিংসার রাজনীতি আজ দেশের মানুষকে ত্যক্ত ও বিরক্ত করে তুলেছে। সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে তার চাল চালছে আর বিরোধী দল হরতাল প্রয়োগে তার রাগ ঝাড়ছে।

এ যেন ‘‘রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, উলুখাগড়ার প্রাণ যাই যাই করছে। নোড়া আর পাটা ঘষাঘষি করছে, মরিচের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ’’ আসলে সরকারী দল আওয়ামী লীগ বিরোধী দল বিএনপির সাথে ‘পলিটিকস' খেলছে। তার পেছনে উদ্দেশ্যে প্রতিশোধপরায়ণতা আর আছে নিষ্ঠুরতা। আর বিরোধী দল তার অস্তিত্ব রক্ষার্থে সর্বশেষ হাতিয়ার হরতালের মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

কিন্তু মধ্যখানে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ, স্থবির হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতি আর পরাজিত হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সাধারণ মানুষ বড় দুটি দলের প্রতি এ আশা পোষণ করে যে, সরকারী দল ও বিরোধী দল কেবল নিজেদের ক্ষমতাটাকেই বড় করে না দেখে দেশ, দেশের মানুষ, জনগণ ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা ভাববেন। সরকারী দলের উচিত, এমন কিছু না করা যাতে বিরোধী দল হরতাল ডাকার অজুহাত পায়। আর বিরোধী দল সরকারের দেশ ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডকে প্রতিহত করতে প্রথমে সভা -সমাবেশ, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, সংসদে দাঁড়িয়ে তার প্রতিবাদ, লংমার্চ, সকল শ্রেণীর পেশাজীবীর বিশ মিনিটের কার্যবিরতি, মানববন্ধন, কলম বিরতি সবশেষে হরতালের ঘোষণা দেয়া। যাতে করে জনগণ বুঝতে পারে এ সরকারের জন্য হরতাল ভিন্ন আরোগ্য লাভের আর কোন পথ্য নেই।

জনগণ তখন হরতাল পালনের মাধ্যমে রুখে দাঁড়াবে সরকারের অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের মনে রাখা উচিত ধূমপান যেমন বিষপানের ন্যায় ঠিক তেমনি হরতাল নামক মহৌষধের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও খুবই মারাত্মক। যার দরুণ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয় আর দেশ পিছিয়ে যায় অর্থনৈতিকভাবে। অপরদিকে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। তাই সরকারী দল ও বিরোধী দলের কাছে জনগণের প্রত্যাশা সংঘাত ও সংঘর্ষ পরিহার করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করুন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.