আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোলকাতার অভিজ্ঞতা

আমার ব্যক্তিগত ব্লগ

আগেই বলেছিলাম, ফিরে এসে বলব কোলকাতার কথা, সেই কথা রাখতেই আজকের পোস্ট। আমরা গিয়েছিলাম জেট এয়ার ওয়েজে। এরা বেশ সময় মেনে চলে। সিটের সামনে সিনেমা বা অন্য ভিডিও দেখার ব্যবস্থা আছে। সামহোয়্যার আউটের বলল, এদের পাইলটও বেশ ভাল, খুব স্মুথলি প্লেন ওঠা নামা করেছে।

কোলকাতার রাস্তায় আমি জ্যাম দেখিনি, ফুটপাতে ভীড় দেখিনি, গাড়িগুলো গুতা খেয়ে ট্যাপ ফেলে চলছেনা, বাস পুরানো হলেও অবস্থা ভাল, গাড়ি বাস গুতাগুতি করে না। আমরা ছিলাম মারকুইস স্ট্রীটে। এটা হয়তো মুসলিম পাড়া। কারন আমি ৩টা মসজিদের আজান শুনতে পেতাম। রাস্তায় বাহাড়ী বোরখা পরা মহিলাদের হেটে যেতে দেখেছি।

বয়স্ক লোক পান্জাবী টুপি পরে চলাচল করতে দেখেছি। বেশির ভাগ খাবার হোটেলে কাবা শরীফের ছবি টানানো। সেই সাথে এটা হয়তো বাংলাদেশি পাড়া। কারন রাস্তাঘাটে, খাবার দোকানে সব জায়গায় বাংলাদেশিদের ভীড়। সব বাস যেগুলো বাংলাদেশ হতে আসে, এখানে থামে।

জায়গায় জায়গায় মানি ট্রান্সফারের আর ফোনের দোকান। কোন সিমে কথা বললে ২.৯৯ টাকায় বাংলাদেশে কথা বলা যাবে তার বিজ্ঞাপণ। আর বেশ কয়েকটা কাশ্মিরি শালের দোকান। আমাদের দেশে সব টুরিস্ট প্লেসে যেমন ঝিনুকের মালা কিনতে পাওয়া যায়, তেমনি এখানে সব টুরিস্ট প্লেসে কাশ্মিরী শাল পাওয়া যায়। কয়েকটা হোটেলে দেখলাম লেখা আছে বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়।

নিউমার্কেটে জিনিস পত্রের দাম বেশ কম। বিশেষ করে মার্কেটের পিছনের দিকে পাইকারি হারে জিনিসপত্র পা্ওয়া যায়। মেয়েদের থ্রী পিস, ইমিটেশনের গয়না, বাচ্চাদের খেলনা, কাপড়, ছেলে মেয়েদের কসমেটিকস, বাচ্চাদের ডায়াপার বেশ কমে পাওয়া যায়। যা বাংলাদেশে দিগুনের বেশি দাম। মার্কুইস স্ট্রীটের একটা দিক মিলেছে ফ্রী স্কুল স্ট্রীটের সাথে।

সেখানে আছে সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারের দোকান। খাবার তুলনামুলক ভাবে সস্তা এবং সুস্বাদু। নিউমার্কের পিছনের দিকে আছে সারি সারি খাবারের দোকান। এখানকার ডোমিনাস পিজজা আর কে এফ সিতে দেখলাম বাংলাদেশের ডোমিনাস আর কে এফ সির চেয়ে খাবারের দাম কম। ফ্রী স্কুল স্ট্রীটের একটা দিক গিয়ে মিশেছে পার্কস্ট্রীটে, সেখানে আছে ম্যাকডোনাল্ড এর দোকান।

পরিবেশ বেশ সুন্দর। শাফিন (আমার এক বছর ১১ মাস বয়সী ছেলে) এখানে একটা বেলুন পেয়েছে। মেট্রো রেল খুবই ভাল এবং সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা। বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা। মাটির নিচে হওয়ায় যানযটও কমাতে সাহায্য করে।

আমরা রবীন্দ্র সদন থেকে পার্ক স্ট্রীটে এই পাতাল রেলে এসেছি। কয়েক মিনিট লেগেছে। মেট্রোতে চড়ার পর এক লোক উঠে আমাকে আর শাফিনকে বসার জায়গা করে দিয়েছিল। এরপর আরো একজন ওঠার পর জোর করে সামহোয়্যার আউটকে বসতে দিয়েছিল, নিজে না বসে। আর সাড়া রাস্তা শাফিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন।

শাফিন অবশ্য বাতাসের শো শো শব্দের কারনে দুকান ধরে চুপ করে বসে ছিল, কোন কথা বলে নি। ঢাকায় ফেরার পর ট্রেনের কথা জানতে চেয়েছিলাম, মনে হলো ভুলে গেছে। কোলকাতার কতভাগ লোক বাংলায় কথা বলে জানিনা, আমি দেখেছি অধিকাংশ হয় হিন্দীতে না হয় ইংলিশে বলে। রিক্সাওয়ালা, হোটেল বয়, চা ওয়ালা, দোকানদার, টিকেট কাউন্টার সব হিন্দীতে কথা বলে। কোলকাতার মুসলমানদেরও দেখলাম হিন্দীতে কথা বলে।

বোরকা পরা মহিলা, বাচ্চা, বয়স্ক লোক কেউই বাংলায় কথা বলে না। তাই বলে ভাববেন না একেবারে বাংলা ভাষী কাউকে পাই নি। কোলকাতার লোক সিনেমা দেখতে ভালবাসে। ৩০০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, সব ধরনের হলেই লাইন ধরে লোকজন টিকেট কাটে, আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সব টিকেট শেষ। হলে কোন বাংলা ছবি চলতে দেখলাম না।

সিংহভাগ হিন্দী আর কিছু ইংলিশ ছবি চলছিল। রাস্তায় ট্যাক্সি, রিক্সা, বাস, রেল, ট্রাম সবই পাওয়া যায়। দাড়িয়ে থাকতে হয়না। আমরা যেমন অল্প দুরে যেতে হলে রিক্সা নেই, এরা পায়ে হেটে বেশি যাতায়াত করে। কোলকাতা ফুটওভার ব্রীজে ওঠার ব্যবস্থা আমার ভাল লেগেছে।

বেশ ঢালু সহজে ওঠা যায়। আর ফ্লাইওভার বেশ কয়েকটা দেখলাম, আরো হচ্ছে। আপাতত: এটুকুই লিখলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.