আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবদুস সাত্তার বাঙ্গাল, তাই বলে কি শখ নাই তার গোলক ঘুরে দেখার



সাত্তার সাহেব বাঙ্গাল, তাই বলে কি শখ নাই তার গোলক ঘুরে দেখার। তিনি ক্যানাডা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ইউরোপ ঘুরে তার মনে পড়লো সকল দেশের রাণীর কাছে যাওয়া দরকার। চট্টগ্রাম বন্দরে নামার পর সরকারী কর্মকর্তারা বললো,এমন দেশটি কোথাও খূঁজে পাবেনা কো তুমি। গাড়ী আটকে গেল বন্দরের খোয়াড়ে।

বানিজ্য মন্ত্রণালয়,এনবি আর আর বন্দর কতৃপক্ষ এই ত্রিভুজে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খেতে খেতে তার গান গাইতে ইচ্ছা করলো জয় বাংলা বাংলার জয়। ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল সাত্তার সাহেবের অতলান্তিক পাড়ি দেয়া গাড়ী আটকে দেবার ঘটনায় বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের কড়াকড়ি টের পেয়েছে। জনপ্রশাসনে কড়াকড়িতে বাংলাদেশ ইউরোপের চেয়ে এগিয়ে গেল। একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর আগে পৃথিবী ঘোরার সাধ না পুরিল আশা না পুরিল সকলি ফুরায়ে যায় মামা অবস্থা। তাতে কী হয়েছে।

কানাকে হাইকোর্ট দেখানোর চালাক ভূমি বাংলাদেশ। আপনি একটি পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাগজ বের করতে ইউরোপের যে কোন দেশের পুলিশের কাচ্ছে যাবেন,ফর্মপূরণ করিয়ে ফি নিয়ে বিদায় করে দেবে,দুসপ্তাহের মধ্যে ডাকযোগে পৌঁছে যাবে। আর সকল দেশের সেরা জন্মভূমিতে থানায় গিয়ে ঢুকুন,কানের কাছে শুনতে পাবেন মীরা বাঈ,হেইলা দুইলা দরবার নাচাই। নিজেকে মনে হবে অপরাধী,মনে হবে সাতখুনের আসামী। যদি কাকে ঘুষ দিতে পারেন আঁচ করতে পারেন,কিছুক্ষণের মধ্যে রমনা থানাকে মামু বাড়ী মনে হবে।

আর ভাব বুঝতে না পারলে সাত্তার ভাইয়ের পরিণতি। আপনি ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমার এদেশ বসুন্ধরার ভূমি অফিসে বাপের দেয়া জমি নিবন্ধনের কাজে গেলে নিবন্ধক ঘুষ না দিলে গম্ভীর থাকবে। মৃত ব্যক্তি আপনার বাপ কিনা,উনার নাম ইত্যাদি সবি ভুলে যাবার ব্যবস্থা ভুমি কমিশনার করে রেখেছেন। শুধু বিঘে দুই বাঁচাতে গিয়ে মরিবার ঠাঁই হারিয়ে ফেলার জোগাড় হবে জমি যদি মৌসুম অনুযায়ী আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোন সোনার টেন্ডুর সেই জমি চোখে পড়ে থাকে। প্রশাসন রাজনীতির মাস্তানদের সামনে কাঁচুমাচু আর আমজনতার সামনে ডায়াবেটিসে শুকিয়ে যাওয়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।

আপনি সরকারী হাসপাতালে মাকে নিয়ে যাবেন, ডাক্তার নাই,থাকলেও গম্ভীর,মনে হবে আপনার মায়ের অসুস্থ হওয়া উচিত হয়নি। হাসপাতাল তো ক্লিনিকের ঠিকানা জোগাড়ের জায়গা। আপনার মা ক্লিনিকে গেলে বেঁচে উঠবেন, না গেলে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার ফিল্মের ডায়ালগ দেবে, বড্ড দেরী করে ফেলেছেন। ক্লিনিকে যেতে রাজী হলে ডাক্তার হানিমুনের খুশী খুশী বউয়ের মত আচরণ করবে,অর্থাৎ সরকারী ডাক্তার হাসপাতালের কাজটা খুব অমনোযোগের সঙ্গে করে। মনোযোগী হয় প্রাইভেট ক্লিনিকে।

বিদ্যুতের বিলের ব্যাপারে মিটার রিডারের সঙ্গে ঘুষের সমঝোতা সই না করলে ভূতুড়ে বিল আসবে,অন্ধকারে বসে থাকতে হবে। আপনার অপরাধ আপনি মিটার রিডারদের শিল্পপতি হবার পথে বাধা দিয়েছেন। বাঙ্গালী মুসলমানের খোদা এখন টাকা, ইউরোপের খ্রীষ্টান, বা ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের তা নয়। মুক্তিযোদ্ধা সাত্তারকে জিজ্ঞেস করেন। উনি জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে এসেছিলেন বাংলাদেশে।

আজকের দিনে হলে ইবনে বতুতা ঢাকায় এসে সরকারী ও বেসরকারী উভয় পক্ষের দামাল ছেলেদের কামালের শিকার হয়ে আর্কিমিডিস হয়ে বাড়ি ফিরতেন। অথবা ক্রস ফায়ারে তার মৃত্যু হতো। বিল গেটসের জন্ম বাংলাদেশে হলে বানিজ্যমন্ত্রীর বাসায় ধর্ণা দিতে হতো। স্যার লীর জন্ম চাপাইনবাব গঞ্জে হলে, আজ তাকে ইন্টারনেট গডের ধারণা প্রবর্তনের জন্য মুরতাদ ঘোষণা করা হতো, বারাক ওবামা বাংলাদেশে জন্মালে তার অবস্থা সোহেল তাজের মতো এসকেপিজমের আত্মহননে ব্রতী করতো তাকে। সাত্তার বাঙ্গালী মুসলমান বলেই ইবনে বতুতা বা হিউয়েন সাং হতে পারলেন না।

বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের এই চাঁদাবাজি প্রসূত গড়িমসি,ক্লায়েন্টকে লাট্টুর মতো টেবিল থেকে ঘুরানো,পুলিশের লাল চোখ অন্যদিকে টেন্ডার রাজনীতি,জমিদখল,ইভটিজিং,খুব স্পষ্ট করে তুলছে আমাদের জাতিগত অধোগমনের চিহ্ন। মিডিয়ায় যেসব খবর আসছে সেগুলো দুটো উদ্দেশ্য,জনগনকে সচেতন করা আর সরকারকে সাবধান করা। দুটোর কোনটাই হয় বলে মনে হয়না। সরকার ব্যস্ত বিরোধিদলের সঙ্গে দাম্পত্য কলহে। সাত্তারের গাড়ী আটকে থাকলেই কি আর ৯৮ নব্বুই ভাগ আমজনতা আমলাতন্ত্র আর কতিপয় তন্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শনের গুয়ানতানামোতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কারাগারে আটকে থাকলেই বা ক্ষতি কি।

একজন যাতে শুনতে না পান সেজন্য তার চারপাশে ক্ষমতার কাঁঠাল মাছি ভনভন করে, আর একজন যাতে শুনতে না পান সেজন্য তার চারপাশে যুদ্ধাপরাধীদের কালোযাদু। সুতরাং আজকের অরণ্যে রোদন এইখানেই ক্ষান্ত দিই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.