আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মনিরপেক্ষতার দাবীদার ভারতে দলিতদের চেয়ে মুসলমানদের অবস্থা খারাপ।



ইতিহাস পাঠে জানা যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মুসলমানরা অধিক হারে প্রথম পশ্চিমবঙ্গে আসেন। ক্রমান্বয়ে ইসলাম প্রসারিত হয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৮৭২ সালের আদমশুমারি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে ৪৮ শতাংশ জনগণ ছিল মুসলমান। পশ্চিমবঙ্গের মোট ১৭টি জেলার মুর্শিদাবাদ জেলায় বর্তমানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৮.৬৬%)। উত্তর দিনাজপুর ও মালদহ জেলায় মুসলিম-অমুসলিম জনসংখ্যা প্রায় সমান সমান।

অন্যান্য জেলায় মুসলমানের সংখ্যা কম হলেও ৪০%এর কম নয়। পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা ভারতেই মুসলমানদের অবস্থা খুবই করুণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে তারা পশ্চাৎপদ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও অবহেলিত। পশ্চিমবঙ্গে সাধারণভাবে ৭০ শতাংশ অধিবাসী শিক্ষিত। সেখানে মুসলমানদের শিক্ষার হার মাত্র ৩০ শতাংশ।

মাধ্যমিক পর্যায়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫ শতাংশ। কলেজ পর্যায়ে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩ শতাংশ। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অতি নগণ্য। মুসলমানদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্কুল মাত্র ১২টি। কলেজ নেই একটিও।

সরকারি চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা খুবই কম। ভারত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদার একটি দেশ। ভারতীয় শাসকচক্রের দাবি অনুসারে ভারতে অসাম্প্রদায়িক ও সেক্যুলার সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। তাই যদি হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর এ করুণ অবস্থা কেন বা গোটা ভারতেই মুসলমানদের অবস্থা এত দলিত-মথিত কেন? ঈসায়ী উনিশ ও বিশ শতাব্দীতে ভারতে মুসলমানদের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হারে শিক্ষার হার বাড়েনি। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর মেধা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৮০০ ছাত্রছাত্রী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়।

এর মধ্যে মুসলিম ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১০ জন। অপরদিকে প্রতিবছর প্রকৌশল বিভাগে ১০০০ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়, সেখানে মুসলমান মাত্র ১২-১৫ জন, যার হার ১ শতাংশ। গোটা ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে শহরাঞ্চলে গরিব মুসলমানের আনুপাতিক হার সবচেয়ে বেশি, ৩৩.৯ শতাংশ। হিন্দু নিয়ন্ত্রিত ভারতে কমবেশি প্রায় ৪০ কোটি মুসলমানের বাস। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভারতীয় হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘু খ্রিস্টান ও শিখদের তুলনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে অনেক পিছিয়ে রাখা হয়েছে এবং বেকারত্বের হারও তাদের মধ্যে বেশি।

ভারতীয় মোট জনসংখ্যার ১.৫ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও শিখেরা ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর অফিসার পদের শতকরা ১৯ ভাগ দখল করে আছে। পক্ষান্তরে সেখানে মুসলিম অফিসারের সংখ্যা এক শতাংশেরও কম। এমনকি ভারতের প্রায় শতভাগ মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের মুসলমানরা সরকারি চাকরিতে মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। নির্দয় দমন-পীড়ন চালানোয় সংঘাতকবলিত এ রাজ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে মুসলিমের সংখ্যা ৩ শতাংশেরও কম। অথচ ভারতে সব মিলিয়ে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদর চাকরির হার ৪ শতাংশেরও বেশি।

গোটা ভারতে সরকারি আমলাদের মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা আরো অনেক কম। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কোনো মুসলিম কর্মকর্তা নেই বললেই চলে। । প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ভারতের মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাগত অবস্থার সর্বশেষ অবস্থা জানার লক্ষ্যে ২০০৫ সালে রাজেন্দার সাচার কমিটি নিয়োগ করে। দিল্লী সুপ্রীম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারক রাজেন্দার সাচারের নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটি দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ৪০৩ পৃষ্ঠার একটি বিশাল প্রতিবেদন তৈরি করে।

এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর মাধ্যমে জানা যায়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতীয় মুসলমানরা মারাত্মক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এতে জানা যায়, সরকারি চাকরি, সাক্ষরতা, শিক্ষা, আয় এবং সামাজিক সক্ষমতার বিষয়ে মুসলমানরা অনেক ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের লোকদের চেয়েও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরি পেয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৫ জন। এর মধ্যে মুসলমান খুঁজতে হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে, মাত্র ৭১৭ জন। আধা-সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মুসলিমপ্রার্থী নিয়োগের কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, তবে অভিজ্ঞতার নিরিখে বলা যায়- তার হারও অনুরূপভাবে কম।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, পুলিশে শতকরা ৯ জন মুসলিম চাকরি করছেন। কিন্তু বাস্তবে তা মেলে না। সরকারি চাকরিতে মুসলিমরা শতকরা ৭ ভাগের কম, রেলওয়ে কর্মী হিসেবে শতকরা মাত্র ৫ ভাগ, ব্যাংকিংয়ে শতকরা ৪ ভাগ এবং ভারতের ১৩ লাখ সদস্যের সেনাবাহিনীতে মুসলিমদের সংখ্যা মাত্র ২৯ হাজার। কমিশন বলেছে, মুসলমানদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয়া হচ্ছে না বলে তারা অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলো সম্পর্কে এই অভিযোগ ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে। ওই রাজ্যের ৯০ হাজারেরও বেশি মুসলিম ছাত্রকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দেয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আমাদের দেশের অতি উৎসাহীরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সব জায়গায়ই পারলে পায়ে ধরে হিন্দুদের অধিষ্ঠিত করে। কিন্তু ওপারে ধর্মনিরপেক্ষতা দাবিদার ভারত কীভাবে মুসলমানদের বঞ্চিত, দলিত-মথিত, নিষ্পেষিত, নির্যাতিত করে রেখেছে সে খবর তারা দেখেও না দেখার, শুনেও না শোনার ভান করে। এরা মুসলমান নামের কলঙ্ক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.