আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার ভারতে মুসলমানদের প্রতি নিরপেক্ষতার পরিবর্তে চলছে চরম নিপীড়ন। এদেশের হিন্দুরা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে রামরাজত্ব চালাতে চায় কিন্তু ভারতে মুসলমানরা কতটুকু দলিত-মথিত সে খবর কী তারা রাখে? ভারতে মুসলমানদের প্রতি নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়াবহত

আমি একজন ভাল ছেলে । ভারতে মুসলিম নির্যাতন নতুন নয়। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ মুসলমান। সম্প্রতি আসামের মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন এক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আসামের মুসলমানদের জোরপূর্বক রাজ্য থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

আসামের কয়েক কোটি মুসলমানকে আইনগত যুদ্ধ তথা মামলা-মোকদ্দমার মাধ্যমে টিকে থাকার আপ্রাণ প্রয়াস চালাতে হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে অব্যাহত চাপের মুখে আসামের বাংলাভাষী অধিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামের প্রকৃত অধিবাসীদের বহিরাগত ও বাংলাদেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য কয়েক লাখ মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। কংগ্রেস আসামের ক্ষমতাসীন দল হলেও তারা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না করে উদাসীন থাকে; বরং কংগ্রেসও মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে। এসব দরিদ্র মুসলিম তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগ মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে আসাম উপত্যকার গরিব কৃষকদের উপরও এরা অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাবে এবং শত শত অধিবাসীকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের হয়রানি ও দেশত্যাগে বাধ্য করতে পারে।

দেশের আদালতের নির্দেশক্রমে এ ব্যাপারে একটি নতুন বিচার বিভাগীয় প্যানেল গঠন করা হয়েছে। আসাম গণপরিষদ তাদের ১০ বছরের শাসনামলে শুধু ১০ হাজার বাংলাদেশীকে চিহ্নিত করতে পারত; কিন্তু তারা কাউকে বিতাড়িত করতে পারেনি। সেই রেকর্ড দিয়ে আদালত অথবা সরকারি পর্যায় থেকে কিভাবে প্রকৃত নাগরিকদের অভিবাসী হিসেবে ঘোষণা করা হলো সেটি বিস্ময়ের বিষয়। আসামের সাবেক গভর্নর লে. জেনারেল কে এম সিনহা অব্যাহতভাবে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে, প্রতিদিন আসামে সাত হাজার অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করছে।

অবশ্য তার এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। শিক্ষার অভাব এবং সতর্কতার ক্ষেত্রে ত্রুটির কারণে আসামের মুসলমানেরা এ অবস্থার শিকার হচ্ছেন। আসামে বাংলায় কথা বলেন এমন প্রায় তিন লাখ ভারতীয় নাগরিক দেশটি থেকে বহিষ্কারের মুখে রয়েছেন। কয়েক দশক ধরে ভারতে বসবাস করে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার তালিকায় নাম উঠানো দুই লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৯ জনের নাগরিকত্ব নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গোটা আসামে ৩৬টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার কার্যক্রম চলছে।

সাথে রয়েছে মুসলিম গণহত্যা। এখানে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা এখানে তুলে ধরা হলো আসামে কারফিউ ও সেনা টহল অব্যাহত বোড়ো হিন্দুদের হাতে প্রচুর সংখ্যায় স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র¿ থাকাই এবারের সহিংসতার মূল কারণ-মন্ত্রী আসামের কোকরাঝাড়ে কারফিউ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। প্রধান শহর কোকরাঝাড় আর গোসাইগাঁও এলাকায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। কোকরাঝাড় বা বোড়োল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর আরো কয়েকটি দলকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর থেকে বোড়োল্যান্ড এলাকায় বোড়ো হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতায় অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ জারি করে প্রশাসন।

প্রশাসন বলছে দৈনিক ভিত্তিতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তবেই কারফিউ তোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোকরাঝাড় সফর সেরে ফেরা আসাম সরকারের এক মন্ত্রী রকিবুল হোসেন বলেছে যে, বোড়োল্যান্ড এলাকায় প্রচুর সংখ্যায় বেআইনি অস্ত্র রয়েছে আর এটাই বারে বারে সহিংসতার মূল কারণ। শুক্রবার কোকরাঝাড়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আসাম পুলিশের মহানির্দেশক জয়ন্ত চৌধুরীও জানিয়েছে যে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র আর প্রচুর সংখ্যায় দেশী অস্ত্র রয়েছে দুষ্কৃতিদের কাছে। কয়েক মাস আগের জাতি দাঙ্গার পর থেকেই সেনা ও আধাসেনাবাহিনীর সাহায্যে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চললেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০টি অস্ত্র উদ্ধার করা গেছে। বোড়ো সন্ত্রাসী নিজেরা অস্ত্র সরকারের কাছে সমর্পণ করেনি বলে অভিযোগ করে থাকেন মুসলমান সম্প্রদায়ের নেতারা।

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে অত্যন্ত কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নির্দেশ দিয়েছে বলে দাবি করেছে বিবিসি। মনমোহন সিং আসাম থেকেই নির্বাচিত সংসদ সদস্য আসামের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে দিল্লির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও। গত ১০ নভেম্বর থেকে বোড়োল্যান্ড এলাকায় বোড়ো হিন্দুরা নতুন করে সংঘর্ষ শুরু করেছে। পুলিশের সন্দেহ, শান্তি আলোচনার বিরোধী বোড়ো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীই সাম্প্রতিক হামলাগুলি জন্য দায়ী। কয়েকমাস আগে বোড়োল্যান্ড এলাকায় বাংলাভাষী মুসলমান ও বোড়োদের মধ্যে দাঙ্গায় প্রায় হাজার হাজার মুসলমান মারা গিয়েছিলেন ও ঘরছাড়া হয়েছিলেন চার লাখেরও বেশি মানুষ।

আসামে ‘বিদেশী বিতাড়ন’ আন্দোলনের লক্ষ্য বাঙালি মুসলমান আসামের কম-বেশী সব শহরেই চলে ‘বিদেশী বিতাড়ণ’ আন্দোলনের তোড়জোড়। জায়গায় জায়গায় মিটিং-মিছিল, জমায়েত, মানব-শৃঙ্খল। অনেকটা ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত যে আন্দোলন আসামকে উত্তাল করে তুলেছিল, তার আদলে। গৌহাটি, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, জোড়হাট, তেজপুর- সবখানেই উঠেছে এক স্লোগান- “বহিরাগত, আসাম এরি উলাই যোয়া” (বহিরাগত, আসাম ত্যাগ করো)। আর আন্দোলনের লক্ষ্য সেই রাজ্যের কথিত লাখ লাখ পূর্ববঙ্গীয় মূলের মুসলমান।

এদের এক সময় ‘ন-অসমীয়া বা ‘নতুন অসমীয়া’ বলে ডাকা পরিচিত করা হয়। যখন আসামের বাঙালিরা ১৯৬০-৬১ সালে মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবীতে পথে নামে, শিলচর শহরের রেললাইনের ধারে ১১ জন যুবক-যুবতী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়, সে-সময় পূর্ব-বঙ্গীয় মূলের এই মুসলমানরা ব্রহ্মপুত্রের উপত্যকায় সে আন্দোলনে জড়ায় নি। কিন্তু ১৯৭৯ সালে আসামে নিখিল অসম ছাত্র সংস্থা (আসু)-র নেতৃত্বে যে ‘বিদেশী বিতাড়ণ’ আন্দোলন শুরু হয়, প্রথম থেকেই মূলত তার লক্ষ্য ছিল এইসব মুসলমানরা। একদা ন-অসমিয়া থেকে তাদের পরিচিতি রাতারাতি বদলে যায়, স্থানীয় অসমীয়ারা তাদের ‘মিঞা’ এবং ‘বাংলাদেশী’ বলে সম্বোধন করতে শুরু করে। আন্দোলনকারীদের কু-নজরে পড়ে এমনকি যারা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের জন্মের আগে পূর্ববঙ্গ অথবা পূর্ব-পাকিস্তান ছেড়ে আসামে এসেছে।

উনিশ্শ-উনোসত্তর থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত চলা আন্দোলনের সময় অনেক হানাহানি হয়েছে। অবিভক্ত নগাঁও জেলার নেলিতে ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে একদিনের হত্যাকান্ডে কয়েক হাজার বেশী মুসলমান প্রাণ হারায়। পরবর্তী সময়ে বোড়ো হিন্দু উপজাতিদের জন্য গড়ে ওঠা স্বশাসিত পরিষদের এলাকায় ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড’ বা এনডিএফবি সন্ত্রাসীদের আক্রমণে প্রচুর মুসলমান প্রাণ হারায়। চলতি বছর জুলাই মাসে পশ্চিম আসামের ওইসব জেলাগুলোতে যে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয়, তা সীমাবদ্ধ থাকে বোড়ো এবং পূর্ববঙ্গীয় মূলের মুসলমানের মধ্যে। হাজার হাজার প্রাণহানি হয়েছে ওই এলাকায়, চার লাখের বেশী মানুষ গৃহহীন হয়েছে, যাদের সবাই হল ওইসব মুসলমানরা।

প্রশাসন যখন এইসব গৃহহীনদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, ঠিক তখনই এনডিএফবি এবং বোড়োল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি দাবী করে, ভারতীয় নাগরিকত্ব স্পষ্টভাবে যাচাই না করে এইসব মুসলমানদের নিজগ্রামে ফিরতে দেওয়া যাবে না। ফেরার চেষ্টা করার সময় তাদের লক্ষ্য করে কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলাও সংগঠিত করা হয়। শরনার্থী শিবির পরিচালনকারী কর্মকর্তারা বলছে, আশ্রয় নেওয়া অনেক মুসলমান এখন নিখোঁজ - শিবিরেও নেই, গ্রামেও ফেরেনি। সম্ভবত ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে আসাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছে। এনডিএফবি এবং তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম বা ‘আলফা’-র আলোচনাপন্থী গোষ্ঠী এবং ‘আসু’ ও অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদের মতো অসমীয়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো।

বোড়োভূমিতে চলতে থাকা হানাহানি তাদের ক্ষয়িষ্ণু ভাবমূর্তি চাঙ্গা করার এক নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। তাই এদের মধ্যে চলছে জোট বাঁধার পালা। এমনকি মেঘালয়ের রাজ্যপাল এবং ভারতের ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ডস এর প্রাক্তন মহাপরিচালক রঞ্জিত শেখর মুসাহারিও এই নিয়ে “বিদেশী বিতাড়ণ” আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। সেও বোড়ো সম্প্রদায়ের । বস্তুতপক্ষে এই আন্দোলন আসামের সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এমনকি মনিপুরেও।

নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহরে ইতমধ্যেই নাগা কাউন্সিল, নাগা স্টুডেন্টস ফেডারেশন আর নাগা হোহো এক মঞ্চে শামিল হয়ে হুমকি দিয়েছে, তাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথাকথিত ‘বিদেশীদের’ চিহ্নিত করবে। নাগাল্যান্ড সরকার অবশ্য তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়ায় এই সংগঠনগুলো খানিকটা পিছিয়ে যায়। মেঘালয় ও মণিপুরেও স্থানীয় অনেক সংস্থা ‘বিদেশী চিহ্নিত করতে সচেষ্ট হবে বলে হুমকি দিয়েছে। নর্থইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন ইতোমধ্যেই সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে এই দাবীতে একদিনের বনধ্ পালন করেছে। এখন, আসামের জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশর বেশী হল মুসলমান।

রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মূলত এই সম্প্রদায়ের মধ্যে গড়ে ওঠা আসাম ইউনাইটেড ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট বা ‘এইউডিএফ’ আজ রাজ্য বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল। আর ক্ষমতাসীন কংগ্রেসও বিজেপি অথবা অসম গণ পরিষদ নয়, মওলানা বদরুদ্দিন আজমল নেতৃত্বাধীন এই এইউডিএফ-কে নিয়েই বেশী চিন্তিত। এই মুসলমানদের মধ্যে কারা বাংলাদেশ জন্মের আগে, অর্থাৎ ১৯৭১-এর আগে আসামে প্রবেশ করেছে আর কারা তার পরে করেছে, স্থানীয় মানুষ তা খুব একটা দেখতে চায়না। কারণ ১৯৮৫-র আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১-র ২৬ মার্চের আগে যারা এসেছে, তারা ভারতীয় নাগরিক হতে পারবে।

তাই আইনের চোখে একমাত্র যারা এই তারিখের পর ভারতে প্রবেশ করেছে, তারাই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, বাকিরা নয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.