আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ কি?

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

অনেক ধর্মান্ধ তাদের মানস ও শিক্ষায় দৈন্যতার প্রকোপে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মহীনতা অর্থ গুলিয়ে একাকার করে ফেলেন। নিজেদের সে দৈন্যতাকে প্রশয় দিয়ে বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা। তাদের সে বানী প্রচার করেনও সরবে। আমরা, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি ও একে সামাজিক মুক্তির একটি অতি দরকারী পদক্ষেপ হিসেবে ধরি, প্রতিবাদ করি ও চেষ্টা করি তাদের ভুল ভাঙ্গানোর। কিন্তু যে ভুল ইচ্ছাকৃত তাকে ভাঙ্গানোর সাধ্য কার আছে? যারা চিন্তায় ও মানসে ধর্মীয় সম্প্রসারণবাদী, তারা তাদের ভুল স্বীকার করবে, তা আশা করা অর্থহীন।

সব ধর্মের সমান অধিকার তাদের সম্প্রসারণবাদী চিন্তাকে প্রতিহত করবে, এ ভয়ই তাদের বুকে ভেতরে সারাক্ষণ। যারা ধর্মীয় সম্রাজ্যবাদ, তাদের এটা সইবে কেন? এ আলোচনায় তাদের কথা না বলাই ভাল। কিন্তু সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হতাশার সুযোগ নিয়ে তারা কিছু মানুষকে প্রভাবিত করে। সে সব প্রভাবিত মানুষদের জন্যে ধর্মনিরপেক্ষতা সহজ সংজ্ঞা দরকার। সেকারণে নিজ প্রচেষ্টায় একটি সংজ্ঞা দাড় করানোর প্রচেষ্টায় আমি।

একে সংজ্ঞা না বলে নিজে ধর্মনিরপেক্ষতাকে কিভাবে দেখি, তাও বলা যেতে পারে। এই সংজ্ঞা অবশ্যই সম্পুর্ণ নয়। আপনারা যারা আমার মতোই ধর্মনিরপেক্ষতা তথা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের আদর্শে বিশ্বাস করেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, "আসুন সবাই মিলে এই সংজ্ঞাকে পরিপুর্ণ করার চেষ্টা করি। " আপনারা আপনাদের নিজস্ব সংজ্ঞাও দাড় করাতে পারেন। এতে ধর্মান্ধদের চরিত্র বদলানো না গেলেও তাদেরকে প্রতিহত করা শক্তি আমাদের বাড়বে।

১) আমি নিজে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে যা বুঝি: এক ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বিচার নির্বিশেষে স্বেচ্ছায়, চাপমুক্তভাবে ও অবাধে নিজ ধর্ম পালনের ও নিজবিশ্বাসে না পালনেরও সুযোগ। ২) মাহবুব সুমনের মতে: রাস্ট্রে সকল ধর্ম ও মতের মানুষের সমান অধিকার থাকবে নিজ নিজ ধর্মমত পালন ও বিশ্বাসে। রাস্ট্রের দ্বায়িত্ব সেই সমানাধিকার রক্ষা করা এবং রাস্ট্রে সব ধর্মই সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে থাকবে। প্রতিটি মানুষ যেমন নিজের ধর্ম পালন করবে ঠিক সেই ভাবে অন্য ধর্মালম্বীদের বিশ্বাষকে সম্মান করবে ও সেই সম্মান রক্ষা করবে। রাস্ট্রের কোনো ধর্ম থাকবে না ৩) িদদারুল আলম বাননা বলেছেন বর্তমান সময়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বোঝানো হয় কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করা।

এক অর্থে,ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রকাশ করে। এই মতবাদ অনুযায়ী, সরকার কোনরূপ ধর্মীয় হস্তক্ষেপ করবে না, কোন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবে না এবং কোন ধর্মে কোন প্রকার অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করা হবে না। ধর্মনরপেক্ষতা সেই বিশ্বাসকে ধারণ করে যাতে বলা হয় মানুষের কর্মকাণ্ড এবং সিদ্ধাণ্তগুলো, বিশেষত রাজনীতিক সিদ্ধান্তগুলো, তথ্য এবং প্রমাণ এর নির্ভর করবে, কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নয়। রাজনৈতিক ব্যবহারের দিক থেকে বলা হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা হল ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে পৃথক করার আন্দোলন,যাতে ধর্মভিত্তিক আইনের বদলে সাধারণ আইন জারি এবং সকল প্রকার ধর্মীয় ভেদাভেদ মুক্ত সমাজ গড়ার আহবান জানানো হয়। ৪) অমি রহমান পিয়াল বলেছেন: ধর্ম থাকবে একান্তই আমার আচার, সমমনারা একত্রে সামাজিক আচার হিসেবেও পালন করতে পারি (মুসলমান হিসেবে নামাজ/হিন্দুদের পুজা-পার্বন), রাষ্ট্র দেবে সবাইকে সমানভাবে তা পালনের অধিকার।

রাষ্ট্র আলাদা একটা ধর্মীয় পরিচয় নেবে না। ৫) মুকুল বলেছেন: আমি ধর্মনিরেপক্ষ রাষ্ট্র বলতে বুঝি, রাষ্ট্র নিজে কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। বরং সব ধর্মের লোকজনের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করবে। রাষ্ট্র প্রত্যেকের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করবে। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোন বিভাজন করবে না।

ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে কোন বিশেষ সুযোগ সুবিধা হবে না। সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার পাবে। ৬) মানুষ বলেছেন: আমার মতে ধর্ম হচ্ছে ব্যক্তিগত ব্যাপার। এক সময় ছোট ছোট ট্রাইব ছিল যার ফলে সবার একই ধর্ম পালনে কোন বাধা ছিল না। সে সমাজ ব্যাবস্থা বহু আগেই বিলিন হয়েছে।

এখন বৃহত্তর রাষ্ট্র পরিচালনা করে একটি সরকার। এই রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বি মানুষ থাকে এবং সে কারনেই সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াটা জরুরী মানবাধিকার রক্ষার্থেই। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে আমি বুঝি, অন্য কোন ব্যক্তির কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি না করে নিজ বিশ্বাস পালন করাকে। ৭) এস্কিমো বলেছেন: আমি সহজ সরল ভাষায় বুঝি - ধর্ম নিরপেক্ষতা হলো - "যার ধর্ম তার কাছে, রাষ্ট্রের কি বলার আছে?" প্রকৃত অর্থে গনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সকল মতপথকে একই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে স্থান দেবার জন্যে রাষ্ট্রকে ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই। রাষ্ট্র যদি কোন একটা বিশেষ ধর্মের প্রতি ঝুকে যায় -তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই কোন কোন একদল নাগরিকের প্রতি অবিচার করা হবে।

আর গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রাথমিক সংজ্ঞায় সেইটা পড়ে না। ৮) স্বাপ্নিক বলেছেন: রাষ্ট্রধর্ম বা প্রধান ধর্ম বলতে কিছু থাকবে না। সকল ধর্মের মানুষই যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইন কোন বিশেষ ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হবে না। সকল নাগরিকের অধিকার রাষ্ট্র সংরক্ষন করবে।

অবশ্য একটি বিষয় নিয়ে আমি নিশ্চিত না, কন্ট্রাডিকশনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য অভিন্ন আইন থাকবে না প্রত্যেক ধর্মের জন্য আলাদা আইন হবে। যেমন বিয়ে ও পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে। এ বিষয়েও সবার মতামত আশা করছি। ৯) নাভদ বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতা - এই শব্দটার মানে আজও পরিস্কার নয়। ধর্মনিরপেক্ষতা কে অসাম্প্রদায়িকতার দৃস্টিকোন থেকে দেখতে চাই।

রাস্ট্র কারো প্রতি কোন পক্ষপাতিত্ব করবে না, সবার প্রতি সমান আচরন করা হবে - এভাবেই দেখার চেস্টা করি। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি হতে পারে ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষ হয়ে যাওয়া? মানে সে আর ধর্ম মানবে না? বা ধর্মের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়বে? হলে, মানুষের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া কেন জানি মনে হয় সহজ কাজ নয় - কারন আমাদের প্রত্যেকের জন্মসূত্রে একটা ধর্ম রয়েছে। তার প্রভাব এড়ানো সহজ নয়। অনেকে নাস্তিক হন । তবে মানুষ চেস্টা করলে অসাম্প্রদায়িক হয়তো হতে পারে।

সে তখন শুধু নিজের সাম্প্রদায়কেই ফেভার করবে না। আপনাকে পোস্টের জন্য ধন্যবাদ, তীরন্দাজ ভাই। পোস্ট ও তার কমেন্ট থেকে আশা করি কিছু শিখতে পারব, আমার ধারনার কোথাও ত্রুটি থাকলে তা জানতেও পারব। ১০) নাজিম উদদীন বলেছেন: ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে আমি বুঝি, ধর্ম এবং রাজনীতির পৃথকীকরণ। রাস্ট্র কোন বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না, সব ধর্ম এমনকি ধর্মহীনতাও রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে সমান হতে হবে।

১১) সেলিম তাহের বলেছেন: একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কাছে ধর্ম তার সমস্ত রাষ্ট্রিক, নৃতাত্বিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। পাশ্চাত্যের ভোগবাদী সমাজে ধর্ম যেমন তার সমস্ত ভাবালুতা নিয়ে সমাজে বিদ্যমান, তেমনি প্রাচ্য বা প্রাতিচ্যের রাষ্ট্রগুলোতেও বিদ্যমান। এটা ধর্মের ঐতিহাসিক সংস্কৃতিগত দিক। আমার জীবনের ১৭টা বছর আমি বিভিন্ন মধ্যইউরোপীয় দেশে কাটিয়ে এলাম। সমাজের মূলস্রোতকে কর্মসূত্রে দেখার সুযোগ ঘটেছে।

কিন্তু কোথাও তো পেলাম না যে রাষ্ট্র তার জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধারার ও পথের ধর্মচর্চাকারীদের তাদের স্ব স্ব ধর্মচর্চা করতে বাধা দিচ্ছে বা আইন করে ধর্মকে গুরুত্বহীণ করে রেখেছে। ওখানে প্রত্যেকটি ধর্মকেই বরং সাংবিধানিক বৈধতা দিয়ে তাদের নিজ নিজ উপশনালয়গুলোর স্বায়ত্বশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে, অন্তত সাংবিধানিক ভাবে হলেও। ফরাসি বিপ্লবের পথ ধরেই প্রথম ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে পৃথকীকরণের পথ সুগম করা হ্য়েছে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের এটাই গোড়ার কথা- ধর্মকে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে পৃথকীকরণ। এটার অর্থ ধর্মকে বাদ দেয়া বা জনগনের সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় জীবনচারিতা থেকে ধর্মের খোলনলচে সহ তাকে গুরুত্বহীণ করে দেয়া নয়, কারণ রাষ্ট্র ভাল করেই জানে যে এটা একটি উৎকাল্পনিক চিন্তা।

রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে ধর্মের পৃথকীকরণের সাথে জনগনের স্বাধীণ ধর্মচর্চার কখনো বিরোধ থাকতে পারে না..অন্তত তাত্ত্বিক অর্থে তো নয়-ই। ১২) মুহিব বলেছেন: সকল ধর্মকে শ্রদ্ধা করা। ধর্মীয় পরিচয়কে বাধা হিসেবে না দেখা। ধর্মহীনতা বা ধর্ম পালন না করা আর ধর্মনিরপেক্ষতা এক নয়। ১৩) আব্দুন নূর তুষার বলেছেন: এক ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু বিচার নির্বিশেষে স্বেচ্ছায়, চাপমুক্তভাবে ও অবাধে নিজ ধর্ম পালনের ও নিজবিশ্বাসে না পালনেরও সুযোগ।

সহজ বাংলায় রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মের পক্ষ নেবে না এবং কোন ধর্মের বিরুদ্ধাচরন করবে না। রাষ্ট্র সকল ধর্মের মানুষকে নিরাপদে ধর্ম পালনের সুযোগ দেবে এবং কোন ধর্মের অবমাননা হয় এমন কোন কর্মকান্ড করতে দেবে না। ১৪) আইকোনাস ক্লাস্টাস বলেছেন: সারমর্ম হল, রাষ্ট্র ও ধর্ম থাকবে আলাদা। এতে করে রাষ্ট্র ও ধর্ম দুইএরই ভাল হবে। দুটোকে মিলিয়ে ফেল্লেই শুরু হবে দ্বন্দ্বের, ভুলবুঝাবুঝির, oppression এর, আধ্যাতিকতার গলাচাপা দেওয়া হবে, গলা চাপা দেওয়া হবে একই ভাবে মুক্তবুদ্ধি চর্চার।

এর শেষ হবে রক্তের গঙ্গা বইয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়েই। আমার মনে হয় - এখানেই মানবতাবাদ আর ধর্মীয় মতবাদ একই কথা বলে - তারা সকলেই চায় শান্তি। ১৫) মাদারি বলেছেন: রাষটোরো একখান সামাজিক পতিষঠান, সমাজ বিকাশের ধারায় এইডা আইসে, এইহানে কোন ঐশ্বরিক নিয়ম চলবো না- সব ইহজাগতিক হোইতে হোইব। হেরা আরেকডা কতা কোইসিল, কোন রাজা বা ধরমোনেতা বা ইমাম রাষটোরের মালিক না, পকরিতো মালিক হোইল রাষটোরের জনগণ।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.