আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মায়ের সাথে মেয়ের সম্পর্ক যখন "বন্ধুত্ব"

এক্সট্রা এনার্জি এক্সচেঞ্জার
'বন্ধুত্ব' শব্দটিই এমন, যার কোনো নির্দিষ্ট অর্থ হয় না, একক কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। বন্ধু বন্ধুই। পৃথিবীর সব স্বার্থের উর্ধ্বে বন্ধুর স্থান। যাকে বিশ্বাস করে সবকিছু বলা যায়, বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সবসময় ছায়ার মতো পাশে পাওয়া যায়_ সেই তো প্রকৃত বন্ধু। জীবনে এমন বন্ধুর বড় বেশি প্রয়োজন।

আর সেই বন্ধুটি যদি হয় মা কিংবা মা-মেয়ের মধ্যে যদি গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের চমৎকার অটুট বন্ধন, তাহলে নিঃসন্দেহে সে সম্পর্কে যোগ হয় নতুন এক মাত্রা। সে সম্পর্কে খুঁজে পাওয়া যায় ভিন্ন এক আমেজ। মানুষের এই ছোট্ট জীবনে চলতে-ফিরতে ছোট কিংবা বড় নানা রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। পড়তে হয় বিভিন্ন রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। আর এ ধরনের ঘটনা মুহূর্তেই জীবনকে ওলট পালট করে দিতে পারে।

সে সময় কাছের বন্ধুটি নানা অজুহাতে দূরে সরে গেলেও মা যদি তখন শুধুই অভিভাবক না হয়ে বন্ধুর মতো তার নিজের মেয়েটির পাশে এসে দাঁড়ান, বুকে টেনে নেন, মেয়ের সমস্যা নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করেন_ সে মুহূর্তে মেয়েটির জীবনে আর কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না। তখন সে পূর্ণ ভরসা কিংবা নির্ভরতার জায়গাটুকু খুঁজে পায়। মায়ের সাহায্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে জীবন হয়ে ওঠে রঙিন এবং মধুর। ঠিক তেমনি মায়ের জীবনেও ঘটতে পারে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। তখন যদি মেয়েও শুধু মেয়ে না হয়ে মায়ের দিকে বাড়িয়ে দেয় বন্ধুত্বের হাত, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

ঋতু এবং তার মায়ের গল্প ঋতু তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। খুব মেধাবী এবং কিছুটা চঞ্চল প্রকৃতির ছিল সে। স্কুল থেকে ফিরে প্রায় প্রতিদিন বিকেলেই তার পড়ার ঘরের জানালা দিয়ে সামনের গলিটার দিকে চেয়ে থাকত। কারণ এ গলি দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে কলেজপড়ূয়া একটি ছেলে বাসায় ফিরত। এক অজানা-অদ্ভুত আকর্ষণে সেই ছেলেটিকে দেখতেই ঋতু রোজ জানালার পাশে এসে বসত।

দিন কয়েক পর পড়াশোনায় মেয়ের অমনোযোগিতা, একটু উদাসীনতা দেখে ব্যাপারটি মা টের পেলেও মেয়েকে সরাসরি কিছুই বলেননি। একদিন হাসি-ঠাট্টার ছলে কৌশলে মেয়ের কাছ থেকে মূল ব্যাপারটা জেনে নেন। মায়ের সঙ্গে ঋতুর যদিও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক; কিন্তু কেন জানি এ বিষয়টি মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে সংকোচ হচ্ছিল তার। কিন্তু সেদিন মায়ের এমন সহজ ও প্রাণবন্ত আচরণে তার কাছে কিছুই লুকোয়নি। সব শুনে মা এমন একটা ভাব করলেন যেন এসব কিছুই নয়; কিন্তু সে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েকে পরামর্শ দিলেন, এ মুহূর্তে তার কী করা উচিত এবং কী করা অনুচিত।

ঋতুও সঙ্গে সঙ্গে তার মায়ের কথাগুলো মেনে নেয়। পড়াশোনায় আবার মনোযোগী হয়ে ওঠে। আরেকবার ঋতু যখন এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন হঠাৎ করেই পাড়ার একটি বখাটে ছেলে তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। সে বিষয়টি সরাসরি তার মাকে জানায়। মায়ের সাহায্য এবং পরামর্শে এ উটকো ঝামেলা থেকে দ্রুত মুক্তি পায় ঋতু।

ঋতুর বিয়ে হয়ে বর্তমানে তার ঘর আলো করে এসেছে সাড়ে চার বছরের একটি ছেলে; কিন্তু তাদের মা-মেয়ের বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে ঠিক আগের মতোই। ঋতু জানান, 'মায়ের চেয়ে বড় বন্ধু পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মেয়েদের জীবনে এমনিতেই সমস্যার অন্ত নেই। কৈশোর কিংবা টিনএজ বয়সটার কথাই ধরুন না। এ সময়টাতে মেয়েদের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা অনেক সময় মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারে না।

ফলে অনেক সময় বিরূপ আচরণ করতে থাকে; কিন্তু আমি খুবই ভাগ্যবান। বন্ধুর মতো এমন একজন মাকে পেয়ে। ' ঋতুর মা জানান, 'আমার দুই মেয়ে। আমি আমার মেয়েদের সঙ্গে কখনও অভিভাবকের মতো মিশিনি, বন্ধুর মতো মেলামেশা করেছি। এতে করে মা-মেয়ের মধ্যে শুধু সম্পর্কটাই গভীর হয় না, অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং জটিল সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ করে সহজেই সমাধান করা যায়।

'
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.