আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তথাকথিত মা দিবস

আজকে ‘মা দিবস’। আজকের করণীয় কী? প্রথমেই ফেসবুক এ মা এর সাথে একটা প্রোফাইল পিকচার দেয়া। ছোটবেলায় মায়ের সাথে তোলা একটা ছবির ছবি তুলে বা স্ক্যান করে কভার পিকচার হিসেবে দেয়া। সময় থাকলে মায়ের জন্য কিছু একটা স্পেসাল গিফট কেনা। ন্যাকা ন্যাকা গলায় মাকে “ I LOVE U MAA” বলা।

বেশ আবেগময় কিছু স্ট্যাটাস ফেসবুক এ দেয়া। এই তো!! এটাই মা দিবস এর কর্মসূচি। মনে হতে পারে যে আমি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় লেখাটি শুরু করেছি। কিছুটা সত্যি হলেও পুরোপুরি নয়। একদিনের জন্য কাউকে স্পেশাল অনুভব করানোতে ঠিক দোষের কিছু নাই।

অসুবিধাটা ওইখানে যখন আমরা একদিনের জন্যই শুধু স্পেশাল অনুভব করাই। বাকিদিন ফিরেও তাকাই না। পৃথিবীর আর সব সম্পর্কের চেয়ে মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক সবচেয়ে অকৃত্রিম। ভনিতা নেই, অকারণ জোর করে ভালোবাসা প্রকাশের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এই একটা সম্পর্কের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা নেই যদি না সন্তান সেরকম কিছু করে।

কারণ মা কখনো সন্তানকে পারতপক্ষে ত্যাগ করে না। করলেও বুকের বিশাল একটা অংশজুড়ে সন্তানের জায়গা থাকে। কিন্তু সন্তানদের এই অভ্যাস আছে মাকে ত্যাগ করে খুশি থাকা। তাই-ই হয়তো এত ঘটা করে মা দিবস পালন করা। আমার ধারণামতে, মা দিবস এর এই উদ্যোগ ঠিক উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপট থেকে নয়।

এই দিবসের কার্যকারিতা অনেকটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথেই মেলে। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক আমেরিকান টিভি সিরিজ দেখেছি এবং এখনো দেখি। ওখানে একটা জিনিস খেয়াল করেছি যে ওরা একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর মা-বাবার সাথে থাকাকে খুবই ‘খ্যাত’ মনে করে। তারা এও ধারণা করে নেয় যে যে ব্যাক্তি এখনো বাবা-মা এর সাথে থাকে সে খুব একটা ‘ম্যাচিউরড’ নয়। বুঝাই যাচ্ছে যে তারা পাশ্চাত্যের মানুষেরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বাবা-মা এর সাথে থাকে না।

তো এদের জন্য বাবা-মাকে আলাদা করে মনে করাটা প্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। তাই এরা বিশেষ বিশেষ দিন ঠিক করে বাবা-মাকে কার্ড পাঠায়। আমাদের উপমহাদেশে আমরা এখনো বাবা-মা থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু যেহেতু আমরা অনুকরণপ্রিয়, তাই বিয়ের পর আজকাল আমরা মা-বাবাকে একা ফেলে স্বার্থপরের মত আলাদা থাকার কথা চিন্তা করতে পারি। মেয়েরাতো এটাকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়।

“আমি আমার বাবা-মা ছেড়ে আসবো, আর তুমি মহাশয় বাবামায়ের সাথেই খোকা হয়ে থাকবা? কভি নেহি!!!” অবশেষে যারা এই আলাদা থাকার দলে অন্তর্ভুক্ত হয় তাদেরই দরকার মা দিবস এর মত বিশেষ বিশেষ দিনগুলোর। এই দিনের উপর ভরসা করে গিফট শপ দোকানের মালিকেরা বহু পয়সা কামিয়ে নেয়। সত্যি কথা বলতে এরা অপরাধবোধ কিনে নিতে চায় সন্তানদের কাছ থেকে। আরেক দল আছে, যারা অবস্থাপ্রেক্ষিতে বাবা-মা থেকে আলাদা থাকে। সবচেয়ে বড় এ দলে আছে বিবাহিত মেয়েরা।

এদের কোন আলাদা দিন লাগে না। সময় পেলেই এরা মাকে মনে করে। উদাস হয়। ফোন করে মায়ের গলাটা শুনে। যারা কাজের খাতিরে মা এর থেকে আলাদা থাকে, তারা আর কোন সময় না হলেও খাওয়ার সময়টাতে মায়ের কথা ঠিকই ভাবে।

প্রত্যেকটা মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো মা। বিপদে পড়লে, অসহায় লাগলে সবার প্রথমে যে মানুষটার সান্নিধ্য পেতে মন চায়, তিনি আমাদের ‘মা’। আমরা সন্তানরা স্বার্থপর। নিজেদের প্রয়োজন ছাড়া মায়ের কথা ভাবি না। তারপরো মায়ের কাছে আমাদের জন্য দরজা সারা জীবন খোলাই থাকে।

মাকে ভুলানোর জন্য আমাদের বিশেষ দিনের দরকার নেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.