আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শৈশবের ধর্মীয় শৃঙ্খল!

পোশাকের কারিগর

আমি বুঝতে শেখার পর থেকেই আশপাশের কিছু মানুষের কল্যাণে জেনে গেছি মুসলিমরা খারাপ। তার উপর বেশির ভাগ মুসলিম ছেলেরা আমাকে দেখলেই বলত “ডান্ডি পটাশ। ব্যাপারটাতে আমার খুবই রাগ লাগত। এটা আমি এক ভাইকে বলার পর সে বলে তুই তাদের কাডাইল ডাকিস। যেহেতু আমি শব্দটার অর্থ জানতাম না, সে কারনে আমি শব্দটা ব্যাবহার করতাম না ভয়ে।

তার উপর কিছু কিছু মুসলিম ক্লাসমেট কলমা একটা লিখে বলত এটা পড়। আমি হাবাগোবা ছিলাম তাই পড়ে ফেলতাম। পড়লেই সবাই একসাথে বলে উঠত আমি মুসলিম হয়ে গেছি। কি কষ্ট আর ভয়ের ব্যাপার। এইসব কারনে মুসলিমদের উপর ছোটবেলাই আমার এক ধরনের বিদ্বেষ কাজ করত।

এরপর হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে পেয়ে গেলাম এক গাদা মুসলিম বন্ধু। কিন্তু নতুন বন্ধুদের সাথে মিশে মুসলিম সমন্ধে ভুল ধারনা মনের অজান্তে কিছুটা কমে আসল। তো এক মধ্যে জানলাম ভারতে এক বিরাট শিল্পী আছে নাম এ আর রহমান (তখন শিল্পী আর সঙ্গীত পরিচালকের পার্থক্য বুঝতাম না).সে আবার হিন্দু থেকে মুসলিম। বন্ধুরা আবার সে কথাটা বিরাট গর্বের সাথে বললে রাগে গা জ্বলে যেত। নাহ! এই লোকের গান কোন রকমেই ভাল হতেই পারেনা, বন্ধুরা মুসলিম বলেই তাকে পছন্দ করে।

(কথাটা মনে হয় ঠিক। কারন একজন ক্লাস ৭-৮ এর বাচ্চার এ আর রহমানের কুয়ালিটি বুঝার কথা না) . তো এর মাঝে পাড়াই ভিডিও গেম খেলতে গিয়ে পরিচিত হলাম এক মুসলিম বড় ভাইয়ের সাথে। তার বাসা আবার আমাদের কয়েকটা বিল্ডিঙের পরে। তার সাথে মিশে বুঝলাম আল্লাহ হাফেজ বলা, ঈদের নামাজ পড়া বা দোয়া করাতে উনার প্রবল আপত্তি। যে যায় হোক উনার নাস্তিক্যবাদকে আমি পছন্দ না করলেও সে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল নতুন এক জগতের সাথে।

উনার মাধ্যমে আমি পরিচিত হলাম Enigma, Yanni, The shadows, Kitaro র সাথে। আরও জানলাম ভাল সিনেমা আর ভাল ভাল বই সমন্ধে। যেহেতু আমি উনার ভক্ত ছিলাম তাই উনার দেওয়া সব গানই শুনতাম। এরপর উনি আমাকে দিলেন এ আর রহমান শুনতে। যেহেতু উনি বলেছেন তাই নিয়ে শুনলাম।

কিন্তু এবার উনার গান শুনে আমার ভালই লাগল। আর ধীরে ধীরে এ আর রহমানের সৃষ্টি হয়ে গেল আমার কাছে এক ভালবাসা আর আনন্দের বিষয়। উনার ধর্ম আমার কাছে তখন আর বিবেচনার বিষয় না। কারন মুসলিম সম্বন্ধে যে ভুল ধারনা তা অনেকটাই কেটে গেছে আমার মন থেকে। আজ সকাল থেকে ইচ্ছা হচ্ছিল কিছু লিখব।

তাই এই উদ্দেশ্যহীন হাবিজাবি লিখা। আসলে আমি দেখেছি আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের জন্ম হয় সাম্প্রদায়িকতার শৃঙ্খল পায়ে নিয়ে। জন্মের পর থেকে একটি মুসলিম শিশুকে শেখানো হয় আমার ধর্মই সেরা আর হিন্দু ধর্ম খারাপ। আর হিন্দু শিশুকে শেখানো হয় আমার ধর্মই সেরা,ইসলাম ধর্ম খারাপ। শিশুর মনে এই বিষয়গুলো কতটা খারাপ প্রভাব ফেলে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমাদের দেশের বেশির মানুষ তার ছোটবেলার এই কুশিক্ষার শৃঙ্খল ছিঁড়ে বের হতে পারে না। ভাগ্যিস আমার সাথে একজন ঈশ্বর অবিশ্বাসীর পরিচয় হয়েছিল। তা না হলে হয়ত আমিও হাতির মত এক ঠুনকো শৃঙ্খল পায়ে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতাম। কারন ওই বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আমি জেনে গিয়েছিলাম সব মুসলিম খারাপ না। আর ধর্মের পাল্লাতে না জেনে শুনে কাউকে মাপা উচিত না।

আসলে সুশিক্ষা আর মুক্ত চিন্তাই পারে আমাদের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে। আসুন আমরা মানবতাকে ধর্মের আগে রাখি তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।