আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শৈশবের কিছু কথা ...


আমার অস্থিত্বে আমার মা । আমার জীবনটাই আমার মায়ের হাতে গড়া। সব শিক্ষার শিক্ষক আমার মা। প্রকৃতির সাথে প্রথম পরিচয় মায়ের হাত ধরে, তাঁর গাছপালা প্রীতি দেখার মত। ছোটবেলা থেকেই আমি ছিলাম খুব জেদি আর অভিমানী।

ছিল আমার মাঝে এক ধরনের নিয়ম ভাঙ্গার গোপন ইচ্ছা। মা হচ্ছেন পথিবীতে এমন একজন, যার কাছে সব চলে। মা সব সহ্য করতেন, এক ধরণের প্রশ্রয় আমি কেন জানি সবসময় পেয়ে এসেছি। আমার কাছে আমার মা ছিলেন অন্যায় আবদার, জেদ দেখানোর স্থান। আমি খুব বাচ্চা সুলভ আচরণ করতাম।

আমি কিন্তু খুব লক্ষী মেয়ে ছিলাম না, মায়ের আদর আর প্রশ্রয়ের কারণেই এমন হয়েছিলাম আমি। আমি এজন্য কোন অপরাধ বোধে ভুগতাম না, মনে হত মা মানেই এমন, যার সাথে সব করা যায়। মায়ের বিয়ে হয় তার ১৪ বছর বয়সে, এবং অচেনা মানুষটির হাত ধরে বিদেশে পাড়ি জমান। পড়ে যান অকুল সমুদ্রে, পুরোদমে ঘর সংসার, ব্যাস্ত স্বামীকে সব কিছু হাতের কাছে এনে দেওয়া, ভাবলে আমার নিজেরই রাগ হয়। কারণ মা কিছু কারণে কয়েকবার বাবা ছাড়া দেশের বাইরে যান তখন বুঝেছি, উনাকে সামলানো কত কষ্ট ! একবার আমি অনেক রাতে ঘরে ফিরি এক দাওয়াত থেকে, এসে দেখি বাবা বসে আছেন।

আমি একটু অবাক কারণ তিনি কখনো রাত জাগেন না। তিনি জেগে বসে ছিলেন কারণ আমি প্লেটে করে উনার ঔষধ দিয়ে যাইনি, এবং উনি জানেন না কোথায় উনার ঔষধ ! মা ফিরে আসলে আমি খুব রাগ করে বলি, "কি করেছো মা তুমি ? বাবাকে তো শেষ করে দিয়েছ, কিছু পারে না। " মায়ের উত্তর ছিল এমন, " এমন না হলে তোর বাবার সংসারে আমি থাকতে পারতাম না। " আমি চুপ করে যাই, কি বলার আছে এর উত্তরে ! আমাদের সমাজটাই যে এমন। মা হেসে আবার বলেন, সব মিলিয়েই সবাই মানুষ।

মা আমাদের পিঠাপিঠি ৪ ভাই বোনের জন্য এক প্লেটে ভাত মাখাতেন এবং খাইয়ে দিতেন। আমি ৯ বছর বয়স পযন্ত ফিডারে দুধ খেয়েছি। আমার এই অভ্যাস দূর করার চেষ্টা চলছিল এবং ফিডারে করে দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেন। এদিকে আমার মাথায় বুদ্ধির তো অভাব ছিল না, আমি বুদ্ধি খাটিয়ে ছোট ভাই বোনদের যে কারো ফিডার, তাদের কাছ থেকে নিয়ে খেয়ে ফেলতাম লুকিয়ে। একটু পরই কান্না জুড়ে দিত সেই জন।

এভাবে কিছুদিন যাবার পর মায়ের সন্দেহ হয়, এবং আমি ধরা পড়ে যাই। এখানেই আমার ফিডার জীবনের ইতি। তবে দুধ পাউডার খাবার অভ্যাস এখনো আছে অল্প স্বল্প। একটা ঘটনা আমার খুব মনে আছে এবং সারা জীবন থাকবে সেটা হল, একদিন আমি কিচেনে গিয়ে দেখতে পেলাম, মা মাটিতে পড়ে আছেন অজ্ঞান হয়ে। কেউ ছিল না আশেপাশে, চারিদিকে তখন মরুভূমি, দুবাই শহরটা তখনো এত মানুষে ভর্তি ছিল না।

আমি দৌঁড় দিয়ে বাবাকে কিভাবে যেন ডেকে আনি। এরপর কি হয়েছিল আমার মনে নেই তবে কয়েকদিন আমরা তিন ভাইবোন একলা ছিলাম বাবার সাথে। তখন বাবা আমাদের খাইয়ে দিতেন, চুল বেঁধে দিতেন। বাবার মেজাজ থাকলেও খুব সহ্য করতে পারতেন আমাদের দুস্টামী, এখনো ! এরপর মা ফিরেন ফুটফুটে বোনের জন্ম দিয়ে, যে পৃথিবীতে ২ মাস আগে চলে আসে। কিন্তু বেবীটা থেকে যায় হাসপাতালে।

মা নিয়ম করে যেতেন তার বেবীকে দেখতে। মা গিয়েই বলতেন, আমার বেবী ভাল আছে? তারাও বেবীকে মায়ের কোলে দিয়ে বলতেম, এই নাও তোমার বেবী। শেষে বেবীটার নামই হয়ে গেল, বেবী। মা'বাবার কাছে তার সন্তানেরা সবসময় এক সমান কিন্তু আদর মনে হয় ভাগ করা। একেকজনের জন্য একেক রকম আদর থাকে তাদের কাছে।

(ছবিটা বাবা আমাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় তোলান স্টুডিও'তে। আমাদের চুল বেঁধে দেন বাবা। ) লিখতে বসেছিলাম "মা দিবসে" কিছু লিখতে মা'কে নিয়ে, হল না। লতাপাতা বের হয়ে এল, অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু চলে এল, আসা ঠিক হয়নি হয়তো। থাকুক এভাবেই।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।