আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানব দেবতা থেকে দানবে রূপান্তরিত এক স্বৈরশাসকের গল্প ( ১ম পর্ব )



১৯৭১ সালের মহান মুক্তির সংগ্রামের অন্ধকার ঘুটঘুটে দিনগুলিতে প্রতিটি বাঙ্গালীর অন্তরে এক নতুন জীবনের প্রত্যাশার আলো ধিকধিক করে জ্বলছিলো । ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙ্গালীর মহিন্দ্রক্ষন এলো । নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের পর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন একটা রাষ্ট্রের জন্ম হলো। আমারা পেলাম সেই কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা । স্বাধীনতা আন্দোলনের অতি প্রিয় এক নাম “ শেখ মুজিবুর রহমান “ যে নামের যাদুর পরশে অনেক অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যেত ।

সেই শেখ মুজিব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৩ বছরের মাঝেই সব চেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত হলো জাতির প্রত্যাশায় কুঠারাঘাত করার মাধ্যমে। শেখ হাছিনা সাংবাদিক অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস আর সাথে এক স্বক্ষাতকারে দুঃখ করে বলেছে “ বাবার মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও আমাদের গ্রামের বাড়ি টুঙ্গি পাড়ায় বাবার কবরে একটা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যায়নি আত্বিয় স্বজনের মতানৈকের কারনে "। ১০ ই জানুয়ারি ১৯৭২ সাল শেখ মুজিবের ভাগ্যের চরম অনিশ্চয়তাপূর্ণ নয় মাসের শ্বাসরুদ্ধকর নাটকের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলায় পা রাখলেন । কারা মুক্তির পর বীর থেকে “ মানব দেবতায় “ পরিণত হন । শুরু হলো শেখ মুজিবের রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ ।

তার ক্ষমতা গ্রহণ সময়ে বাংলাদেশের আপমর জনগণের সহিত বিশ্ব বাসীকে অবাক করেছেন । তিনি জাতির নেতা বা দেশের প্রেসিডেন্ট না হয়ে হয়ে উঠলেন আওয়ামী নেতা । তাঁর পরিবারের লোকজন আর তাঁর নির্বোধ চাটুকাররা তাকে দেশের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণের জন্যই প্ররোচিত করলেন । কারন যত বেশী ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকবে , তত বেশী অনুগ্রহ আর সম্পদের ফোয়ারা বইতে থাকবে , তাই তিনি রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ না করে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করলেন । যদিওবা মুক্তিযুদ্ধ কালিন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথ তলার এক আমবাগানে ১০ এপ্রিল সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার করা হয়েছে।

মাজার বিষয় হলো পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফিরার পথে লন্ডন আবং দিল্লীতে যাত্রাবিরতি দেন শেখ মুজিব । দুদেশেই তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্বর্ধনা দেওয়া হয় , নেওয়া হয় বিভিন্ন স্বাক্ষাতকার , সব স্তানেই তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসাবেই সম্বোধন করা হয় । কিন্ত ওয়েস্টমিনিস্টার স্টাইলে স্রকার প্রধান মুজিব হলে দেশের শাসন কাজের ক্ষমতা দিতে হয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে , তাহলে তাজ উদ্দিন আহম্মদ সেই ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়েন । শেখ মুজিবের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল খুবই সংকীর্ণ । ক্ষমতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সব সময় এক মুখো ধারায় বিশ্বাসী ।

সুতারাং ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু থাকতে তিনি রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী হবেন এটাই স্বাভাবিক । ১৯৭২ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর শেখ মুজিবের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার ৮ মাসের মধ্যে ক্রোধান্বিত জনতার বিশাল প্রতিবাদ । অভিযোগমালার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে , বাজার সুবিধাভুগীদের হাতে, স্বজনপ্রীতি , গুম , ধর- পাকাড় , দায়িত্বহীন সরকার ইত্যাদি । সেই দিন লক্ষ লোকের সমাবেশে আ স ম আব্দুর রব ঘোষণা করলেন “আওয়ামীলীগররা পাকিস্তানীদের চাইতে অনেক বেশী জঘন্য আর দুর্নীতিবাজ “, রব , মুজিবের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে " সেনাবাহিনী জনগণের উপর গুলি চালাবে না । কিন্তু আপনি যদি তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন ।

তাহলে তারা আপনার এবং আপনার শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্তা গ্রহণ করতে পারে' । তৎকালীন শাসক শ্রেণীর সীমাহীন অত্যাচার , লুটতারাজ , কালোবাজারী , চোরাচালান , ঘুষ , দুরনিতি আবং বিরধী রাজনীতিবিদদের খুন ঘুমের মাধ্যমে দুর্যোগের মাত্রা অসহনীয় পর্যায় পৌঁছে। তৎকালীন আওয়ামী নেতা আব্দুল মান্নানের নেতৃত্ব বিরোধীমতের শ্রমিক নিধনের জন্য গঠন করা হইলো “লাল বাহিনি “ জনাব রাজ্জাকের নেত্রিত্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী আর ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী ‘র’ প্রধান জেনারেল উবান এর প্রত্যক্ষ পরিচালনায় এবং সাংগঠনিক কাঠামোয় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রাজনৈতিক আনুগত্যে গঠিত “ মজিব বাহিনী “ নিয়ে অত্যাচার ও হত্যার লাইসেন্স দেয়ে গঠিত হয় “রক্ষী বাহিনী “ । “ রক্ষী বাহিনী “ নামটা শ্রুতি মধুর হলেও এই বাহিনী হিটালের নাৎসি বাহিনীর সঙ্গে খুব একটা তফাৎ ছিল না। এই বাহিনীর সকলেই মজিবের আনুগত্য স্বীকার করে শপথ গ্রহণ করতো ।

এই বাহিনীকে মুজিব সরকার এবং আওয়ামীলীগের শ্ত্রু এমনকি সমালোচকদের নিধনকর্মে ব্যাবহার করা হচ্ছিল । এই বাহিনী জনসাধারণের মাধ্যমে প্রকম্পিত আতঙ্ক সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিল । এই বিষয়ে ১৯৭৩ সালের ২০ মে প্রকাশিত সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার ‘ভিসেজ অব কাউন্টার রেভ্যলুশন’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, “রক্ষীবাহিনী হচ্ছে প্রতি বিপ্লবের অস্ত্র, যার উপর এমনকি সর্বভুক শাসক শ্রেণীর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ভারতীয় শাসক শ্রেণীর অনুগত এক সরকারকে এবং ভারতীয় উপ-সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণবাদী স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য এটা হচ্ছে সিআরপির সম্প্রসারণ। এর নিঃশ্বাসে রয়েছে মৃত্যু আর ভীতি।

আপনি অথবা আমি যে কেউ হতে পারি এর শিকার । রক্ষীবাহিনীর বর্বরতার আনেক চিত্র আছে , আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটার ভয়ে একটা উদাহরণের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখছি । ১৯৭৪ সালের মে মাসে ১৭ বছরের আক দামাল ছেলের উপর রক্ষী বাহিনী সীমাহীন নির্যাতন চালায় এবং এক সময় গুম করা হয় । আইন বহির্ভূত এই কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্ট “রক্ষীবাহিনী” কে দোষী সাবস্ত্য করে তিরস্কার করেছিল । এতে সুপ্রিম কোর্টের উপর ক্ষিপ্ত হোন শেখ মজিবুর রহমান ।

তিরস্কারের জবাবে “ ঐ সকল কাজে “ হস্তক্ষেপ না করার জন্য সুপ্রীম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব করেন । অন্যদিকের ক্ষমতার অপব্যাবহার জনগনের অনেক আশায় নিরাশায় পরিণীত হয় । সরকারের দমননীতির কঠোরতা আনায়নের লক্ষে ১৯৭২ সালের সংবিধানের আদর্শ কে গলাটিপে হত্যা করে ৩৩ নং অনুচ্ছদের পরিবর্তে একটি নতুন আটকাদেশ সংক্রান্ত বিল তাতে জুড়ে দেওয়া হয় এবং ৯ (ক) ধারায় একটি নতুন আদেশ সংযোজন করে জরুরী আইন জারির ক্ষমতা আনায়ন করা হয় । একই অধিবেশনে সংবাদপত্রের কন্ঠ রোধকারী কুখ্যাত বিল “ প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স “ ১৯৭৩ পাস করা হয় । প্রধানমন্ত্রী শেখ মজিবুর রহমানের ভাষায় “ সর্বত্রই কেবল সঙ্কট বিরাজ করছে “ , দেশ টাকে শেখ মুজিব নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করতে লাগলো ।

টাকা এবং ক্ষমতার লোভে সে অন্ধ হয়ে গেল । তার ছেলে শেক কামাল এবং তার ছোট ভাই কেউ পিছিয়ে নেই । পরিচয় হয়ে উঠলো বাণিজ্যিক পণ্য । তা বিক্রি করেই একদল মানুষ রাতা রাতি ধনি হয়ে গেল । সরকারি পৃষ্ট পোষকতায় খাদ্য দ্রব্য এবং পাট ভারতে পাচার হতে লাগলো ।

স্বাধীনতা প্রাপ্তির সারে ৩ বছরে সিমান্ত দিয়ে সাড়ে ছ্য় হাজার কোটি টাকার দ্রব্য সমগ্রি ভারতে পাচার হল। একটি শিশু রাস্ট্রের জন্মলগ্নেই জাতীয় সম্পদের বিনাশ সাধন করে দেশ টিকে মিরতুর মুখে ঠেলে দিল মুজিব সরকার । (" এ লেগ্যাসি অব ব্লাড " বাই অ্যান্থনি ম্যাসকার্ণহাস অবলম্বনে )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।