আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শব্দের পোস্টমর্টেম-১৩৪ (বই)



আরবি 'বহী' থেকে বাংলায় বই শব্দটি এসেছে। আরবি বহী মানে ধর্মপুস্তক, কোরআন, আল্লাহর বাণী। কিন্তু বাংলায় বই বলতে যে কোনো পুস্তককেই বোঝায় (বই দপ্তর লইয়া সে তাহার দিদির পিছনে পিছনে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)। বহি বানানভেদ। সংস্কৃত বহনার্থক 'বহ্' ধাতু থেকেও বাংলায় বই শব্দটি এসেছে।

এ বই মানে বহা, ব্যাপ্ত, বিস্তৃত, রাষ্ট্র (তোমার কলঙ্ক বাপা হবে দেশ বই - ঘনরাম চক্রবর্ত্তী)। চালান অর্থেও এই বই শব্দটির প্রচলন রয়েছে (সে সমস্ত জিনিস বই করেছে)। বহন করা অর্থেও শব্দটি চালু রয়েছে (কেবল ভূতের বোঝা বই)। ত্রিয়া পদে বসি অর্থেও বই শব্দটি চালু আছে। অন্যদিকে সংস্কৃত 'ব্যতীত' অর্থেও বই শব্দটির ব্যবহার রয়েছে।

অতিবাহিত হলে বা বাদে অর্থেও বই শব্দটি প্রচল (চৌদ্দ যুগ বই পরভূ তুলিলেন হাই - শূন্যপুরাণ)। বাংলায় ভিন্ন বা ছাড়া অর্থেও বই শব্দটি প্রচলিত (অ্যাত বড় একটা বিশাল ব্যাপারকে 'এই বই না' বলিয়া যদি উল্টাইয়া দাও তবে কী যে তোমার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র তাহা বুঝিতে পারা কঠিন। তথাপি সিংহ বই আর কিছু নয় - দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর; কৃপা কর কৃপাময়ী কেহ নাই তোমা বই - রামপ্রসাদ; উপায় নাই ইহা বই - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। মধ্যযুগের বাংলায় একই অর্থে এ বই শব্দটি ব্যবহৃত হতো। 'বৈ আর বহি' এই বই শব্দের বানানভেদ (দোষ বহি গুণ কারো করে না কখন - বৃন্দাবন দাস।

বাদে বা পরে অর্থেও এ বই শব্দের প্রচলন ছিল (বৎসরেক বহি হইল ঝগড়া - কবিকঙ্কন চণ্ডী। পরে, বাদে, অতীত হলে অর্থে এক সময় বাংলায় 'বঞি' শব্দটি চালু ছিল (তোমা সনে নিবন্ধ করিনু দুই দণ্ড। ইহা বঞি বেড়িও পুরী হইয়া প্রচণ্ড - কবিকঙ্কণ চণ্ডী)। আবার 'তা ব্যতীত আর কি' - এ ভাবের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে 'বই কি?' নিঃসন্দেহ বা নিশ্চয় বোঝাতে 'বই কি' শব্দটি ক্রিয়া-বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় (যাব বই কি, বলব বই কি)। কিন্তু বিপরীতার্থে 'নিশ্চয়ই বলব না' অর্থেও 'বলিল বই কি' চালু রয়েছে।

আবার 'অবশেষে' বা 'এমন কিছু একটা নহের ভাব' অর্থে 'মাত্র' বা 'কেবল' বোঝাতে 'বই ত নয়' বা 'বই নয়' ক্রিয়া-বিশেষণ চালু রয়েছে (এই বই তো নয়? আমি বলি কি!)। তাছাড়া 'আর কি' বোঝাতে চালু রয়েছে 'তা বই'। আবার বৈদিক সংস্তৃত 'বয়' (এটা অন্তস্থঃ ব) থেকে আসা 'বই' মানে কচুর লতি বা লতা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।