আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপগঞ্জের ঘটনায় সেনাবাহিনি কি দায়মুক্ত?

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, ১.গত শনিবার ২৩/১০/২০১০ তারিখ রূপগঞ্জে ঘটিয়া যাওয়া ঘটনাবলি আবারও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়াছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনি কি সর্বদায়ই আইনের ঊর্ধে থাকিয়া যাইবে? বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনাবীলর কথা নিশ্চয়ই সকলের স্মরণে রহিয়াছে। সেইখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের জেল-হাজতে থাকিতে হইলেও ঘটনার সহিত জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে কী শাস্তি দেওয়া হইয়াছিলেআ তাহা এখনও জাতি জানিতে পারে নাই। সেই ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও সাজা ভোগ করিয়াছিলেন। ২. রূপগঞ্জের ঘটনায় বিশেষ মহলের উস্কানির কথা নানাভাবে বরা হইতেছে।

এখন প্রশ্ন হইলো সেই বিশেষ মহল কে বা কাহারা? নিরীহ জনতার সেই বিশেষ মহলই কি গুলি বর্ষণ করিয়াছিলো? চিনের নেতা মাও জে দঙ একবার কহিয়াছিলেন : আর নিপীড়িত জনতা পীড়নের হাত হইতে নিষ্কৃতি অর্জনের জন্য সর্বপ্রথমে নিজেদের উপরেই নির্ভর করিয়া থাকে। গত শনিবারের ঘটনার বিশ্লেষণে কয়েকটি বিষয় সামনে আসিয়াছে। যেগুলি হইতেছে : জমি কেনা নিয়ে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ আমলে না নেওয়া, সামরিক কায়দায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, ২৪টি মৌজার জমি নিবন্ধন বন্ধ করে দেওয়া। (সূত্র :প্রথম আলো ২৬/১০/২০১০)। এই সিদ্ধান্ত হইতেই তো বুঝিতে পারা যায় এই ঘটনার মূল দায় কাহার? ৩. কর্মকাণ্ডে কর্মকর্তাদের আরও কৌশলী হওয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তাঁদের বিশ্লেষণ হচ্ছে—পেশাদার লোক না থাকার কারণেই জমি কেনা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। এখন এ জন্য দক্ষ কর্মকর্তাদের প্রকল্পে যুক্ত করার পরামর্শ এসেছে। প্রয়োজনে এর সঙ্গে রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরকে যুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। (প্রথম আলো : ২৬/১০) এই ভাবনাগুলি কেন আগে ভাবা হয় নাই? এই প্রশ্ন করিবার অধিকার জনগণের রহিয়াছে। ৪. সেনা আবাসন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিমুল গণি গতকাল বিবিসিকে কহিয়াছেন কিছু মহলের চক্রান্তের কারণে রূপগঞ্জে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এখন সাধারণ মানুষ যদি জমি দেয়, তবে অবশ্যই প্রকল্প চলমান থাকবে। তবে প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর না হলেও প্রকল্প এলাকায় অস্থায়ী সেনাক্যাম্প করার কথা তিনি স্বীকার করেন। (প্রথম আলো :২৬/১০) প্রশ্ন হইতেছে বেসামারিক এলাকা কেন অস্থায়ী ভিত্তিতে হইলেও সেনাক্যাম্প স্থাপন করা হইয়াছিলো? এইটা কি জনগণের স্বার্থে হইয়াছিলো? সাধারণ মানুষ যদি জমি দেয়--এই বোধোদয়টি এতোদিন হয় নাই কেন? জনগণ যেই রাস্তায় নামিয়া আসিলো ওমনি তাহা মাথার ভেতরে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে? ৫.এতো কিছুর পরেও প্রকল্পটি কিন্তু পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হইতেছে না। বরং তাহা অগ্রসর করিবার কথা নানাভাবে ভাবা হইতেছে। জনাব নাসিমুল গণি কী কহিতেছেন তাহা শুনুন : ‘এই প্রকল্প আমাদের সবার কল্যাণের জন্য, আবাসনের জন্য।

এখানে অনেক হাউজিং কোম্পানি আছে, তারাও জমি কিনছে। সাধারণ মানুষ যদি আমাদের কাছে বিক্রি করে তাহলে আমরা কিনব, নয়তো কিনব না। তাদেরকে উপযুক্ত মূল্য দেব। এখানে কোনো জোরজবরদস্তি বা কোনো কিছুর প্রশ্রয় আসে না। সাধারণ মানুষ যদি জমি দেয় তবে অবশ্যই প্রকল্প চলমান থাকবে।

৬. রূপগঞ্জে সহিংস ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতি লইয়া পদস্থ সেনা কর্মকর্তারা বৈঠক করিয়া এই প্রকল্পের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ বিষয়ে এই অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন : আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের অপরিপক্ব কর্মকাণ্ডের কারণেই জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রকল্পের লোকজন বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ ও নির্দেশনা দিতে গিয়ে জনগণের বিরক্তির কারণ হয়েছে। এ ছাড়া বিনা নোটিশে বেসামরিক এলাকায় সামরিক সাইনবোর্ড দেওয়ার বিষয়টি স্থানীয় জনগণ মেনে নিতে পারেনি। এসব নিয়ে এলাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এইখানে তো কোনো বিভ্রান্তি হয় নাই।

ভ্রান্তি রহিয়াছে। আর সেই ভ্রান্তির দায় সেনা বাহিনির অন্য কাহারও নয়। জনগণের ক্ষোভ যদি তাহারা প্রকল্পের শুরুতেই আমরে লইতেন তবে আজ এই ঘটনা ঘটিতো না। ৭. জনতার প্রতিবাদের মুখে এখন প্রকল্পের আকার ছোটো করা হইতেছে তাহার নামও পরিবর্তন করিবার কথা ভাবা হইতেছে। কিন্তু কতায় রহিয়াছে যাহার নাম চাল ভাজা তাহারই নাম মুড়ি।

জনগণ কি এতোই বোকা! সেনা আবাসন প্রকল্পের (আর্মি হাউজিং স্কিম বা এএইচএস) আকার ছোট করা হতে পারে। ২৭ হাজার প্লটের বদলে এখন প্রকল্পের প্লটের সংখ্যা আট হাজারে নামিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ও রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ২৪ মৌজায় প্রক্রিয়াধীন এই প্রকল্পের নামও পরিবর্তন করে মিলিটারি হাউজিং স্কিম (এমএইচএস) রাখা হতে পারে। ৮. নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত মোস্তফা জামাল হায়দারের লাশ গত রোববার দিবাগত রাতে কড়া পুলিশ পাহারায় তড়িঘড়ি করিয়া দাফন করা হইয়াছে বলিয়া তাহার পরিবারের তরফ হইতে অভিযোগ করা হইয়াছে। মোস্তফা জামালের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে গতকাল সোমবার এলাকায় কালো পতাকা উত্তোলন করা হইয়াছে।

নিরাপত্তায় সেখানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কাহার নিরাপত্তায় সেইখানে পুলিশ মোতায়েন রহিয়াছে? জনগণের নিরাপত্তায়? জনগণ তো এখন ঘরবাড়ি ছাড়িয়া ভয়ে লুকাইয়া রহিয়াছে। কাহার ভয়ে? ৯.সেনা প্রকল্পের লোলুপ দৃষ্টি হইতে পবিত্র ঈদগাহের জমিও রক্ষা পায় নাই। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের কামশাইর গ্রামের ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফাজউদ্দিন তাহার অভিজ্ঞতার কথা কহিয়াছেন : ‘গ্রামের পাঁচজন সমাজসেবক ৬ অক্টোবর তাঁদের মালিকানাধীন ৮২ শতাংশ জমি ঈদগাহ মাঠের জন্য ওয়াক্ফ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেনাসদস্যদের বাধার মুখে রূপগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রি করেননি।

’ ১০. এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার কি হইবে? না মোটোও হইবে না। মাঝখান হইতে কিছু নিরীহ লোকের সাজা হইবে। আসল কথা বলিয়া দিয়াছেন নিহত জামাল উদ্দিনের পিতা আবদুর রউফ। তিনি কহিয়াছেন : সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে পারমু না। সরকারের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা আমাদের নেই।

আর মামলা করেই বা লাভ কী। বিচার তো পামু না। সেনাবাহিনীর গুলিতে আমার ছেলে মারা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে তো পুলিশ মামলা নিব না। (সংবাদ : ২৬/১০/২০১০) ১১. রাজনৈতিক সরকার যখন দুর্বল হয় তখনই একটি দেশে সামরিক বাহিনির এইরকম কর্মকাণ্ড দেখা দিতে থাকে।

অতীতেও উহার নজির আমরা দেখিয়াছি। সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।