আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বানরের রুটি ভাগ, সাংসদদের শুল্কমুক্ত গাড়ি ও করমুক্ত বেতন, এবং চবি’র বেতন বৃদ্ধি (রি-পোস্ট)

মুখোশ

বানরের রুটি ভাগ করার গল্পটি যাদের জানা আছে তারা হয়ত গল্পটি পুনঃপাঠে বিরক্তই হবেন। তবুও সংক্ষেপে বলি……। । বনের দুই কুকুর লোকালয়ে বেড়াতে গিয়ে একটি রুটি খুজেঁ পায়। রুটি একটি কিন্ত মালিক দুইজন!!! অনেকক্ষণ বাদানুবাদের পর তারা সমানভাবে ভাগ করার জন্য রুটিটি নিয়ে যায় বানরের কাছে।

টসটসে রুটিটা দেখে চোখ জ্বলে উঠে বানর সাহেবের। ধূর্ত বানর রুটিটা এমনভাবে ভাগ করে যাতে একটি অংশ বড় হয় আর অন্যটি হয় ছোট। এবার বড় অংশটি ছোটটির সমান করার জন্য সে কামড় বসায় বড় অংশটিতে। কিন্ত কামড়টি একটু বেশি বড় হওয়ায় বড় অংশটির বেশিরভাগই চলে যায় তার পেটে। ফলে এই বড় অংশটি ছোট অংশটিরও ছোট হয়ে যায়।

এবার বানর নজর দেয় পুর্বের ছোট অংশটির দিকে। অন্যটির সমান করার জন্য এবার বানর সাহেব কামড় বসান সেটিতে। কিন্ত বিধিবাম। এবারের কামড়টিও বড় আর রুটির বেশিরভাগ অংশই চালান হয়ে যায় বানরের পেটে। এভাবেই সমান করার নামে রুটির দুটি অংশই চলে যায় বানরের পেটে আর নির্বিকারভাবে তা চেয়ে থাকে চিপায় আটকে যাওয়া দুই কুকুর।

লেখার প্রথমার্ধে গল্প বলার যুৎসই কারণও আছে। বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ডে মালিক এদেশের ১৬ কোটি মানুষ আর এই ভূখন্ড পরিচালনার দায়িত্বে আছেন ১৬ কোটি লোকের ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সাংসদ। এবার আপনি ১৬ কোটিকে কুকুর, ৩০০ জনকে বানর আর বাংলাদেশকে রুটি ধরুন। পেয়ে যাবেন আসল চিত্র। সেই ৩০০ জনের দলটি সংসদে আয়কর বিল পাস করিয়েছেন যাতে বলা হয়েছে কারও আয় যদি বছরে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকার বেশি হয় তবে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়কর গুনতে হবে।

কিন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে বছরে শুধু সংসদের বেতন-ভাতা বাবদ একজন সাংসদ ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেও আয়কর দেওয়ার বিধানের বহির্ভুক্ত। হায় সেলুকাস!!!!!! যারা আমাদের জন্য আইন করেন তারা সেই আইনের বাইরে। বিচারপতির কি তবে বিচার হয়না????? আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাংসদরা কিন্ত আয়কর প্রদানে বাধ্য। সেই মাননীয় সাংসদরা কিছুদিন আগে শুল্কমুক্ত গাড়ি কেনার অনুমতি পেয়েছেন। অনুমতি পেয়েই তারা লম্বা লাইন দিয়েছেন গাড়ি কিনতে।

তারা কি গাড়ি কিনতে চান জানেন??? ল্যান্ড ক্রুজার। । বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ যদি একটি ল্যান্ড ক্রুজার কিনতে যান তবে তার পকেট থেকে নাই হয়ে যাবে তিন কোটি টাকা যাতে ৫২ লাখ টাকা গাড়ির দাম আর বাকি ২ কোটি ৪৮ লাখ সরকারের কোষাগারে জমা হওয়া বিভিন্ন শুল্ক। কিন্ত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মাটির তৈরি(ইসলাম ধর্ম মতে) কিন্ত এই বানরের দল সিমেন্টের তৈ্রি। নৈতিকতা, বিবেচনাবোধ এদের শরীর ভেদ করে মন স্পর্শ করতে পারেনা বলেই এরা নিজেদের আখের গুছিয়ে তিন কোটি টাকার গাড়ি কিনেন ৫২ লাখ টাকায় আর সরকার প্রতি গাড়ির পিছনে হারায় ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

এবার টাকার অঙ্কটাকে ৩০০ দিয়ে গুন দিন। পেয়ে যাবেন একটি ম্যাজিক্যাল ফিগার। আমাদের বুদ্ধিমান(!) ও দূরদর্শী(!) সরকার যদি আয়কর এবং গাড়ির শুল্ক বাবদ শ্রাদ্ধ হওয়া টাকাটা নিজেদের তহবিলে জমা করতে পারতেন(যদি তাদের সদিচ্ছা থাকত আর কি) তবে হয়ত বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় নামতে হতোনা। বিদুৎ বাচাঁনো এবং যানযট নিরসনের জন্য রমযা্ন মাসে হয়ত দেশের স্কুল-কলেজও নির্ধারিত সময়ের আগে বন্ধ হতোনা, নষ্ট হতোনা পাচঁ হাজার কোটি শিক্ষা-ঘন্টা। হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া টাকাগুলো দিয়েই হয়ত চবি’র ফান্ড পুরিয়ে দেয়া যেত, বানানো যেত একটি বিদুৎকেন্দ্র।

মনে হচ্ছে সাধারণ জনগণের সাথে আমি এই রথী-মহারথীদের এক কাতারে দাড় করিয়ে ফেলছি। এটা অবশ্যই আমার অন্যায় হয়েছে। “দেশের সকল যোগ্য লোক আয়কর দিবে”-এই যদি হয় স্লোগান তবে তারা তো অযোগ্যদের দলেই। যোগ্য-অযোগ্যের পার্থক্য বুঝিনা বলেই তারা আমাদেরকে আইন-টাইন করে সেটা বুঝিয়ে দেন। আর নির্বিকারভাবে আমরা কুকুরের দল বসে বসে দেখি কিছু বানর আমাদের রুটিটা খেয়ে নিচ্ছে……………


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।