আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে



ট্রেনের ড্রাইভারকে পিটিয়ে হত্যা : উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে মোমিন মেহেদী বগিতে আগুন ভাংচুর লুটপাট । ট্রেনটি সঠিক নিয়মেই চলছিল, বক্তব্যটি রেল কর্তৃপক্ষের। গত সোমবার ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি সভাস্থলের পাশ দিয়ে দ্রুত বেগে ঘটনাস্থল অতিক্রমকালে লাইনের উপরে অবস্থানরত হাজারো জনতা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে পারলেও ট্রেনের ধাক্কায় ও কাটাপড়ে সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়নের শাবান মির্জা (৬৫), সুরুত মিয়া (৬০), কুড়িগ্রামের তাঁত শ্রমিক ইউনুস (৩০), ভুয়াপুরের লতিফ (৩৮), শহরের মাছিমপুর মহল্লার নুরুননবী ও অজ্ঞাত ২ বৃদ্ধ মারা যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা এ ঘটনার প্রতিবাদে ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে তা থামাতে বাধ্য করে। এসময় তারা ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

আত্মরক্ষার্থে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে থাকে। ট্রেনের ভিতরে চলতে থাকে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট। বিক্ষুব্ধরা ট্রেনের চালক ও অন্য স্টাফদের বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। এসময় পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিক্ষুব্ধরা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা ও পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।

এ পরিস্থিতিতে কার্যত প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়ে। ঘটনার আধঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বিক্ষুব্ধরা তাদের উপর হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর ও যন্ত্রপাতি ছিনিয়ে নিয়ে তাদের ধাওয়া করলে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধরা মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত কয়েকটি মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি ভাংচুর করলে মহাসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ২০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় পুলিশের এস,আই জাহিদসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।

অন্যদিকে ট্রেনে কাটা পড়ে আহত আঃ মোমিন, আবু তালেব, ট্রেনের কর্মচারী আঃ হাই, ঠান্ডু, রহিজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ৪ জনের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। সভা চলাকালীন লতিফের লাশ ঘটনাস্থলে পড়ে ছিল। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বেগম খালেদা জিয়া সভাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

এতে মহাসড়কের দুইপাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। বিরোধী দলীয় নেত্রীর জনসভায় এসে লাশ হয়ে ঘরে ফিরতে হলো হতভাগ্য ৭ ব্যক্তিকে। সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ট্রেনের ধাক্কায় ও চাকায় কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা। জনসভা স্থলের খুব কাছেই রেললাইন থাকলেও আয়োজকরা কোন রকম নিরাপত্তা বেষ্টনীর ব্যবস্থা না করায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেছেন। ট্রেনটি সঠিক নিয়মে চলছিল বলে দাবি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

দুর্ঘটনার পর পর বিক্ষুব্ধ জনতা ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বগিতে ঢুকে ভাংচুর লুটপাট চালায়। এসময় বাধা দিতে এলে ট্রেনের ড্রাইভার ও গার্ডকে পিটিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত লোকজন। নিহত ড্রাইভারের নাম আলম। পুলিশ ও র‌্যাব লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়।

এসময় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ট্রেনের আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেও জনতা তাতে বাধা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা এমন পরিস্থিতি চলার পর মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হলেও অগ্নিদগ্ধ ট্রেন লাইনের উপর থাকায় উত্তরাঞ্চলের সাথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে ট্রেনের গার্ড নিখোঁজ রয়েছে।

এই ছিল মূল সংবাদ-ঘটনা। যে ঘটনার পিঠে চড়ে ভূত এসেছিল। মৃত্যু ভূত। এরা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে ক্ষান্ত হলেও আমরা হারিয়েছি আমাদেও সোনার দেশের সোনার সন্তান। প্রতিদিনই হিংস্য হয়ে উঠছে বিরোধী দল, হিংস্র হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীনদের হায়েনাদল।

মাঝখানে অকাতওে প্রান দিচ্ছে সাধারন মানুষ। বিরোধী দলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ কেন রেল রাইনের উপরে এসেছিল, তা যেমন আমজনতার বুঝতে সম্যা হয়নি; সম্যা হয়নি বুঝতে কেন ড্রাইভারকে যুবদলের কর্মীবাহিনী নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এসবই এখন আস জনতা বোঝার ক্ষমতা রাখে। সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদের সমাবেশে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য বিরোধী দল প্রধান বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, সমাবেশ বানচাল করতেই ইচ্ছাকৃতভাবে তারা এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে সরকারের এমন আচরণের পরও বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাবে।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিদিন কাগজ খুললেই দেখা যায় মুত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যু। স্বাধীনতার পরও আওয়ামী লীগ এ চরিত্র নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। ফলে দেশবাসী তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের শহীদ নাজির উদ্দিন জেহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ সদরের সয়দাবাদে ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র-গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিপন্থি অজুহাতে যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে, বেতন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না।

আর তাদের দলীয় লোকদের চারটি পর্যন্ত প্রমোশন দিয়ে নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে প্রশাসন স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকারকে আর ক্ষমতায় রাখা যায় না। আর সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হবে দেশের ছাত্রসমাজকে। ট্রেনে কাটা পড়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খালেদা জিয়া ভাষণ শুরু করেন।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে তিনি সমাবেশস্থলে পৌঁছান। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সমাবেশস্থলে ট্রেনে কাটা পড়ে কর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আহতদের জন্য দুঃখ ও দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া করছি। শহীদ জেহাদ সিরাজগঞ্জের সন্তান। তাই তাকে স্মরণের মাধ্যমে আমরা সিরাজগঞ্জবাসীকে শ্রদ্ধা জানাই।

বিএনপি’র সময় সম্পাদিত নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এই হলো ক্ষমতার লোভ। এই লোভে পরেই মোস্তাক হয়েছে জাতির নয়া মীর জাফর; গোলাম আজম-নিজামীরা হযেছে রাজাকার। শুধু এই ক্ষমতার লোভের কারনেই ক্ষমতা হয়তো তারা পেয়েছে; কিন্তু সাধারন মানুষের বারোটা বেজেছে। নিঃশ্ব হয়েছে আমাদের দেশের মানষ।

বড় দু’টি রাজনৈতিক দল ক্ষমতার লোভে অন্ধ আর আমাদের দিনচলা বন্ধ। আটকে আছে তাদের চাকায় আমাদের জীবন। প্রত্যক্ষদর্শীরা সংবাদপত্রকে জানান, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সমাবেশ শেষ হলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক বেলায়েত হোসেন বলেছেন ভিন্নকথা।

তার মতে, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই একটি ট্রেনের গতি কমিয়ে আনতে হয়। এক্ষেত্রে চলন্ত ট্রেনের সামনে কোন কিছু দেখা গেলে চালকের করার কিছুই থাকে না। সিরাজগঞ্জে বিএনপির পথসভা চলাকালে সয়দাবাদে মর্মান্তিক ঘটনায় তিনি একথা বলেন। একটি ট্রেন যে স্থানে থামবে তার ৪শ’ ৪০ গজ পূর্ব থেকে ব্রেক ধরতে হবে। এটি কমপক্ষে সাড়ে ৩শ’ গজ পূর্বে হলে ঝুঁকি নিয়ে ব্রেক ধরা সম্ভব।

কিন্তু সিরাজগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছে তাতে ট্রেন চালক বা গার্ডের করার কিছুই ছিল না। ট্রেন লাইন দিয়ে কখনই মানুষ চলাচল করবে না। অথচ লাইনের ওপর গণজমায়েত করার সময় মনে রাখা উচিত ছিল যেকোন সময় ট্রেন চলে আসতে পারে। চালক রেললাইনের ওপর মানুষ দেখার পর ক্রমান্বয়ে হুইসেল বাজিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষ রেললাইন থেকে সরে যায়নি।

এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মানুষের প্রাণহানিতো হলোই তার ওপর ১০ বগিসহ ট্রেনটি জ্বালিয়ে দেয়ায় রেলওয়ের প্রায় ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হলো। এছাড়া প্রায় ৬শ’ যাত্রীর লাগেজ পুড়ে যাওয়ায় তাদেরও অপূরণীয় ক্ষতি হলো। ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে সহকারী কমার্শিয়াল ম্যানেজার আবু সাইদ আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ট্রেনের অপূরনিয় ক্ষতি হয়েছে। লাভ ক্ষতির অংক কষতে কষতে আমাদেও জীবন এখন স্থবির হয়ে যাচ্ছে। একদিকে ক্ষমতার যুদ্ধ অন্যদিকে ব্যবসায়ী- বেনিয়াদের লাগামহীন দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি।

এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আর চলা যায় না... সধযধফরফঁ@ুসধরষ.পড়স মোমিন মেহেদী: কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।