আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রত্ব কি সব দায়ের উর্দ্ধে? এই যদি নাগরিকত্বের চর্চা হয় তবে দেশের ভবিষ্যৎ কোন পথে?



গত শুক্রবারের কথা। সন্ধায় একটি প্রাইভেট চ্যানেলে সাবেক কলিগদের আমন্ত্রণে তাদের তেজগাঁওস্থ অফিসে যাচ্ছি প্রতিষ্ঠানটির জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। সিএনজি-র দাম হাঁকানো শুনে রক্ত টগবগ করলেও মনটাকে শান্ত করলাম কোন রকমে। গরীব মানুষ, সূতরাং বাসই একমাত্র ভরসা। রাজধানীর কাউন্টার বাসগুলি-র সেবা মন্দের ভাল টাইপের হলেও শৃঙ্খলা খুব খারাপ নয়।

জ্যামের সুযোগ নিয়ে এক ছাত্র হঠাৎ এক ছাত্র বাসে উঠল, সাত রাস্তার পর উড়ালসেতুর মুখে। যাবে গুলশান। তার কাছে টিকেট নাই। হেলপার জিজ্ঞাসা করাতেই যেন তার মাথায় বাজ পড়ল। -এই ব্যাটা দেখিস না স্টুডেন্ট..? -ভাই, আমরা তো ফ্রি নেই না।

চেকিং হয়, আমাদের বেতন কাটা যায়। -তোর বাপে নেবে। রাস্তায় গাড়ি চালানোর ইচ্ছা আছে? -এমনে কথা বলেন ক্যান? আপনেরে খারাপ কি কইছি? পাশ থেকে আর একজন ছাত্র ততক্ষণে নাক গলিয়েছে। তার ভাষ্য, -এই ব্যাটা হেলপার, স্টুডেন্ট বলার পরও এত কথা বলিস ক্যান? -ভাই, টিকেট ছাড়া বাসে উঠবেন আর কিছু কওন যাইব না? -লাথ্থি দিয়া তোরে বাস থাইক্কা ফালাইয়া দিমু। আর একটা কথা বলবি না।

-আপনে চেতেন ক্যান, আপনেরে তো কিছু কই নাই? -শুয়োরের বাচ্চা, চুপ করবি? আমার নাকও একটু বেশিই লম্বা বোধ হয়। গলিয়ে ফেললাম। -এই যে ভাই, আপনার কার্ড দেখি। কোন কলেজে পড়েন? এখন কি আপনার ক্লাস ছিল? -আপনে কে? আপনাকে কার্ড দেখাতে হবে কেন? -আমি যে-ই হই, স্টুডেন্টদের জন্য ছাড় কখন দেয়া হয় জানেন? (যদিও ছাড়ের নিয়ম এখন আসলে আর নেই। ) -কখন? আর আপনি এত প্যাচাল পাড়েন ক্যান? -ভদ্রভাবে কথা বলুন।

যখন ক্লাসে যাবেন তখন হয়তো হাফ ভাড়া দিতে পারেন। আজ শুক্রবার, এখন সন্ধা। আপনারা ছাত্রত্ব দেখাচ্ছেন কেন? -এই মিয়া বেশি কথা বইলেন না। -কি করবেন? মারামারি? ছাত্র হয়ে দেশ কিনে ফেলেছেন? -ওই মিয়া আপনি কিন্তু বেশি কথা বলছেন। -আমি বেশি কথা বলছি না।

আপনি ভাড়া দেন, নাহলে টিকেট কাটেন। -ভাড়া না দিলে কিছুই কি করবেন? -কিছুই বলব না। যদি ভাড়া না থাকে ভদ্রভাবে হেলপারকে বলুন। ততক্ষণে দু'জনে এক হয়ে গেছে। আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে দিল।

-মিয়া বেশি কথা বলতেছ কিন্তু। (আপনি থেকে তুমিতে!) -তাই? তো এখন কি করবেন? আর ভদ্রভাবে কথা বলুন। ভাষা ঠিক করুন। -ওই মিয়া তোমার কাছ থেইক্কা ভাষা শিখতে অইব? -হ্যাঁ, স্কুলের মাস্টার আর ফ্যামিলিতে যদি না শেখায় তাহলে তো শিখতেই হবে। --ওই মিয়া, চুপ কর কইতাছি।

আমার পক্ষেও জনাকয়েক জুটে গেছে। তাদের একজনের ভাষ্য, -এই ছেলে, উনি তো ঠিকই বলেছেন। তোমরা অভদ্রভাবে কথা বলছ কেন? -আপনে আবার কথা কন ক্যান? -এই হেলপার, ওদেরকে বাস থেকে নামিয়ে দাও। দেখি কি করে..!(আমার থেকেও তিন ডিগ্রি ওপরে..!) -ওই মিয়া বেশি ফাল পাইরেন না। -চুপ বেআদব কোথাকার! আমার মেজাজ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ল।

কারণ যে ভদ্রলোক কথা বলছিলেন, তার বয়স চল্লিশের-র বেশি। কিন্তু মারামারি করতেও ইচ্ছে করছিল না। যদিও ওই দু'জনকে একটা করে পাঞ্চ করলে খুঁজে পাওয়া যাবে না কিন্তু পরদিন ওই রাস্তায় মহা দুর্গতিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। সুশীল আর আমরা মিডিয়াও একঢালা বলে বসব, 'ছাত্রদের লঞ্ছিত করল বাস হেলপার। ' আশেপাশের ছাত্র নামধারীরা বেড়িয়ে পড়বে বাস আর গাড়ি ভাঙচুরের মহোৎসবে।

তাই আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম এই ঘটনাটাকে। তারপরও রাগ সামলানো দায়। ভদ্রলোককে বললাম, ভাই বাদ দেন। আমিও হার মানার সুর ধরলাম। ওদেরকে বললাম, -ঠিক আছে, যান আপনারা।

ভাড়া দিবার দরকার নাই। -আপনে বলার কে? -বেআদবদের শিক্ষা দেবার মত কেউ একজন। তবে শিক্ষা আসে পরিবার থেকে, আপনাদেরটা হয় নাই। আচরণ শেখেন। আর হুমকি দেবেন না।

আপনারা দু'জন মিলে আমার একটা চুল টেনে তুলতে পারবেন না। কিন্তু কাল রাস্তায় নেমে জংলি কুকুরের মত বাস ভাংচুর করবেন। -ভয় তাইলে ঠিকই পাইছেন..! -আমি ভয় পাই নাই। রাস্তার পাগলা কুকুর থেকে সাবধান থাকা দরকার। -যান যান, দেখা আছে।

আমার গন্তব্য এসে গেছে। নেমে পড়লাম। হেলপার বলছে, মামা এদের জ্বালা আর সহ্য করতে পারি না। শুধু এখানে না, কিছু ছাত্রের বাড়াবাড়ি আর বেআদবি মাঝেমধ্যেই সীমা ছাড়িয়ে যায়। ঢাকা কলেজের সামনে থেকে ছাত্ররা বাসে উঠেই তুমুল হৈ-হুল্লোর শুরু করে দেয়।

বাড়া চাইলেই চোখ রাঙানি। যাত্রীদেরও হেনস্থা করার কথা শুনি মাঝেমধ্যেই। আমার এক বড় ভাইকে না-কি এক ছাত্র বলেছে- এই যে ভাই, আপনি অনেকক্ষণ থেকে বসে ছিলেন। এবার একটু ওঠেন, আমরা বসি। চিন্তা করা যায়! এরা কি ছাত্র? এদের হাতেই কি জাতির ভবিষ্যত? আমি জানি এদের সংখ্যা হয়ত খুব বেশি নয়, তবে নেহাত কমও নয়।

এখন আবার এদের সাথে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়। আমরা ম্যাঙ্গো পাবলিক কই যাই? যেখানে যখন বেআদবি করবে তখনই দু-চারটা থাপ্পর দেয়া হয়ত যায়। কিন্তু পরবর্তী হ্যাসেল সহ্য করতে হবে সাধারণ মানুষকে কিংবা নিজেকেও। তাই চুপ করে থাকতে হয়। শিক্ষার নামে এসব কি শিখছে এরা? এদেরকে সুশিক্ষা দেবে কে? স্কুল-কলেজ না-কি পরিবার?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.