আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শহুরে মানুষ

কি করি আজ ভেবে না পাই, পথ হারিয়ে কোন কোনায় যাই,,,.।

প্রথম দিকের কথা শেষের দিকের কথা আমি যে আসলে বিয়েতে যাচ্ছি না জাহাঙ্গির ভাইকে এটা বলা যাবে না। বললেই গত এক বছরে আমি তার কি কি কথা রাখি নাই এবং তিনি আমার কি কি কথা রেখেছেন তা নিয়ে টানাটানি শুরু করবেন। তাই আমি মনে মনে ঠিক করলাম নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গেই উল্টা দিকে দৌড় দিব। বেড় হওয়াড় আগে সান্ধিয়ার দেয়া একটা পারফিউমও গায়ে একটু স্প্রে করে নিলাম।

জাহাঙ্গির ভাই আর আমি হেটে হেটে ফার্ম গেটের দিকে যাচ্ছি ওখান থেকেই মেক্সিতে করে সোজা সেনাকুঞ্জে। আমি যেকোন সময় উল্টা দিকে দৌড় দেয়ার জন্য মোটামটি প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। হঠাৎ জাহাঙ্গির ভাই বল্ল, অনেক দিন পর ভাল খাবার খাব কি বলিস? মেসের খাবার খেতে খেতে তো আমাদের মুখটা একেবারে পচে যাচ্ছেরে। তুই না গেলে কিন্তু আমি যেতাম না। আবার একটু পর বল্ল, সান্ধিয়াকে নিশ্চই আজকে খুব সুন্দর লাগবে।

জাহাঙ্গির ভাইকে আমার আর নিরাশ করতে ইচ্ছে হল না। আমি জাহাঙ্গির ভাইকে নিয়ে মেক্সিতে করে সেলাকুঞ্জে চলে আসলাম। সেনাকুঞ্জের বিশাল বিল্ডিং এর সামনে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। আমাদের পাস দিয়ে বিরাট বড় বড় গাড়ি গেট দিয়ে ঢুকছে আমরাও ঢুকলাম। অলরেডি অনেক মানুশ জন চলে এসেছে।

জাহাঙ্গির ভাই বল্ল, চল সান্ধিয়ার সাথে দেখা করে আসি। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কি মনে করে যেন বল্ল, থাক তুই এখানে দাড়া আমিই দেখা করে আসি। আমি অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ চোখে পড়লো সান্ধিয়া স্টেজে বসে আছে। তাকে রাজকন্নার মতই লাগছে।

ওর পাশেই বড় বসে আছে। এবং একটু পর পর সান্ধিয়াকে দেখার চেস্টা করছে। আমি ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। জাহাঙ্গির ভাই সান্ধিয়াকে কি যেন বলছে, হঠাৎ সান্ধিয়ার চোখ দুটো কি যেন খুজতে লাগলো। আমি ভিরের মাঝে ঢুকে গেলাম।

আর সাথে সাথেই আমি সান্ধিয়াক প্রায় ক্ষমা করে দিলাম। আসলেই তো সান্ধিয়ার মতো মেয়ে আমাকে এতো দিন নিখাদ ভালবাসা দিয়ে গেছে এই তো অনেক, এতো কি পাওয়ার উচিত ছিল আমার? প্রকৃতি কি আমার প্রতি একটু বেশিই করুনা করলোনা? আমি শুধু সান্ধিয়াকে ক্ষমা করেই শেষ করলাম না তার মহত্যও আমাকে কিছুটা উদাসিন করে দিল। আমি পাশের একটা খাবার টেবিল এ বসে গেলাম। একটূ পর জাহাঙ্গির ভাই এসে আমার পাশে বসতে বসতে বল্ল, তুই কই ছিলি সান্ধিয়াতো তোকে দেখলো না? আমি আরো বললাম মনে হয় চলে গেছে। আমি কিছু বললাম না।

খাবার চলে আসছে জাহাঙ্গির ভাই গ্রগ্রাসে খাচ্ছে। কে বলবে তার মার টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। এখনো জাহাঙ্গির ভাই এর মা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে তার ছেলে একসাথে দুবছরের বেতন নিয়ে আসবে তাকে বড় ডাক্তার দেখাবে। আর জাহাঙ্গির ভাই প্রতি সকালে ইন্টারভিঊ এর জন্য আবেদন পাঠায় পোস্ট অফিসে গিয়ে। এতো কস্ট নিয়েও তো মানুষ বেচে থাকে।

আমি জাহাঙ্গির ভাই এর পিঠে হাত দিয়ে বললাম, ভাই আর এক গ্লাস বোরহানি নেন এরা বোরহানি টা ভাল বানিয়েছে। জাহাঙ্গির ভাই বল্ল, তাহলে দে আরেক গ্লাস। খাওয়া শেষ হলে আমি বললাম, চলেন যাই। দাড়া শেষে কি হয় দেখে যাই। আমি অবাক হয়ে জাহাঙ্গির ভাই এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

আমি বল্লাম, শেষে আবার কি হবে বিয়ে তো শেষ। তবুও আমরা কি মনে করে যেন শেষ অবদি থেকে গেলাম। সান্ধিয়া শেষের দিকে গাড়িতে উঠার আগে খুব কান্নাকাটি জুরে দিলো। ওর কান্নাকাটি দেখে মনে হতেই পারে ওকে যোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি জাহাঙ্গির ভাইকে বললাম, আপনার শেষ দেখা হয়েছে? জাহাঙ্গির ভাই বল্ল, চল।

পরিশেষ, রাত সারে এগারটা। ক্যান্টন্মেন্টের পুরো রাস্তা খালি। মাঝে মাঝে পাশ দিয়ে গর্জন করে গাড়ি যাচ্ছে। জাহাঙ্গির ও নির্ঝর ফুটপাত দিয়ে হাটতে লাগলো। তাদের দুজনের মাঝেই আছে কস্ট।

তবে কস্টকে সরিয়ে ফেলার মত তাদের সামর্থ নেই। তাই তারা কস্ট নিয়েই হাটে কস্ট নিয়েই হাসে। এরাই শহুরে মানুষ। ঢাকার হাজারো অলি গলিতে হাজারো মানুষ হাজারো কস্ট নিয়ে রাত যাপন করে নির্দিধায়। (শেষ)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।