আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শহুরে বৃষ্টি~

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আমাদের ঢাকা শহরে আজ বৃষ্টি নেমেছে। দুপুর চারটার পরই প্রকৃতি মেঘ টেনে সূর্য ঢেকে দিল। ধেয়ে এল বাতাস। বাতাসে ছুটোছুটি করছে রেন্ডি গাছের লাল, হলুদ, কমলা রঙের পাকা পাতাগুলো। ওগুলোর সাথেই পাল্লা দিচ্ছে শহরের ধুলোবালি।

এই বাতাস একটা কোমল শীতল ছোঁয়া দিয়ে আমাদের শহুরে জীবনে কাল বৈশাখির আগমন বার্তা দিয়ে যায়। ঘরের খুব কাছে থাকলে এ পরিবেশ যে ভাবে উপভোগ করা যায়, দূরে কর্মস্থল হতে সেটা যায় না। ব্যস্ত, ঘিঞ্জি এ শহরে এই পরিবেশ বৃষ্টির আতঙ্ক সৃষ্টি করে মনে। ভেজা শরীরে বাসে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় ঘন্টা ব্যপি যাত্রা কারই বা ভাল লাগে। মূমুর্ষরোগীর কাছে আসি আসি করে মৃত্যু যেমন সব সয়মই আসে না, তেমনি এমন পরিবেশে বৃষ্টি আসি আসি করে প্রায়ই আসে না।

আজ এসেছিল ধোঁকা দেয়নি। জানালা দিয়ে চেয়ে রইলাম। বাসার সামনের পিচ ঢালা রাস্তা বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটায় ধীরে ধীরে গাঁঢ় হয়ে উঠল। বাতাসে ধুলোবালির আর খবর পাওয়া যাচ্ছে না। রেন্ডি গাছের পাতাগুলোও বিশ্রাম নিচ্ছে রাস্তার দুধারে।

দোকান গুলোর সামনে পথচারীরা ভিজবার ভয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ, এদের কেউ কেউ বাসায় পৌছে গোসল করবে হয়ত। বৃষ্টিতে ভেজাটা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি বৃষ্টি হতে গাঁ বাঁচিয়েও বৃষ্টিকে অন্য এক রূপে অনুভব করা যায়। এই রূপটিও আবার নানা ধরণের। যেমন ছাতা নিয়ে বৃষ্টিতে হাটার যেমন এক ধরনের আনন্দ আছে, ঠিক তেমনি রিক্সায় পর্দা ধরে ভ্রমনের অন্য এক আনন্দ।

তবে, একমাত্র বাস ছাড়া অন্য কোন গাড়িতে বৃষ্টিকে কোন ভাবেই অনুভব করা যায় না বলে আমার বিশ্বাস। ঘরের জানালা বন্ধ করে বৃষ্টি হতে দূরে থাকা যায় না। আমাদের পাকা দালানে বৃষ্টির প্রবেশাধিকার না রইলেও বৃষ্টির শীতল ছোঁয়া ঘরের প্রতি কোনাতেই রাজত্ব করছে। তবে রিম ঝিম বৃষ্টি বা মুশলধারের বৃষ্টি বলতে যা বুঝি সেটা একমাত্র টিনের ঘরেই মনকে নাচায়। যদি টিনের ঘর না থাকত তবে সাহিত্য কবিতার বৃষ্টি অংশ অনেকটাই হয়ত ম্লান হত।

উন্নয়নের জোয়াড়ে কোন এক কালে হয়ত আর ঘরের চালে টিন থাকবে না; কিন্তু হায়! বৃষ্টিতে মনও যে আর নাচবে না। ইংরেজীতে “mimic” বলে একটা শব্দ আছে। যার অর্থ এমন ভাবে অণুকরণ করা যে ধোকা খেতে হয়। বৃষ্টিও মাঝে মাঝে এই শহরে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেয়। একটু বৃষ্টি হলেই টিকাটুলির রাস্তা পানিতে ডুবে যায়।

নিশ্চুপ রাতে যখন সেই পানি কেটে দ্রুত বেগে গাড়ি চলে আমরা চমকে উঠি হঠাৎ মুসলঅধারে বৃষ্টি এল বলে। বৃষ্টি দেখতে গিয়ে দুটি ঘটনা খালি চোখে দেখবার বড্ড শখ আমার। একটা হল, বৃষ্টির ফোটা গুলো যখন একের পেছনে এক একটি নেমে আসে; তখন চেষ্টা করি দুটি ফোঁটাকে আলাদা আলাদা পাশাপাশি দেখতে। দ্বিতীয়টা হল পানির ফোঁটা পৃথিবীরে ফেটে পড়বার মুহূর্তটি দেখবার। পানির মাঝেই পানি দিয়ে একটা গর্ত সৃষ্টি হয়।

আজ পর্যন্ত মনের মত করে কখনও দেখি নাই। তবুও, চেষ্টা করি দেখতে মনের মত করে। এ কারনেই, বৃষ্টি দেখবার আশা কখনও ফুরায় না। রবীন্দ্রনাথের গানের ভাষায় আমিও গেয়ে যাই মনে মনে, এমনি করে যায় যদি দিন যাক না মন উড়েছে উড়ুক নারে মেলে দিয়ে গানের পাখনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।