আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশু নির্যাতনের এক নতুন ক্ষেত্র

মাতৃগর্ভে শিশুর প্রথম পদাঘাত মাতৃত্বের প্রথম স্বাদ

মা-বাবা যেভাবে নিজের শিশু সন্তানদের নির্যাতন করছেন (প্রিয় পাঠক : কষ্ট হলেও একটুখানি পড়ে দেখুন) .......................... ইদানিং প্রাথিমক শিক্ষা শিশু নির্যাতনের এক নতুন ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভর্তি পরীক্ষা ও তার প্রস্তুতি শিশু নির্যাতনের অত্যাধুনিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। শিশুদের বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যক্রম শিশুদের জন্য এক দুঃসহ কর্ম তালিকা। কিজি স্কুল ও কোচিং সেন্টারগুলো শিশুদের রিমান্ডের সেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিশুকে ঘিরে মা-বাবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাতে রসদ যোগাচ্ছে।

ওদের খেলার সময় কেড়ে নেয়া হয়েছে। বাসা-স্কুল-আর কোচিং সেন্টারের দিনের প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা শিক্ষার নামে চলছে নীরব নির্যাতন। প্রকৃত পক্ষে ঘটনা যা ঘটছে ......................................... মানুষ প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতে চায়। সেটা অর্থ-সম্পদেই হোক অথবা খ্যাতি বা সম্মানেই হোক তাকে ফার্স্ট হতে হবে। সেরা হতে হবে।

এটা মানুষের শাশ্বত চরিত্র। প্রতিযোগিতা । প্রতিযোগিতা আজ এক অসুভ প্রতিযোগিতা হয়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতে কঠোর থেকে কঠোরতর পরিশ্রম করতে হয় এ কথা অনস্বীকার্য। আর ফার্স্ট বা প্রথম হওয়ার জন্য কোন মানুষ যদি নিজ থেকে স্বেচ্ছায় কঠোর পরিশ্রম বা সাধনা করে তখন কোন বিপত্তি নেই।

কারণ নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকলে অতি কঠিন পরিশ্রমও মানুষের হেও মনের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠে না। কিন্তু ক্লাসের বা কোন প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হওয়ার জন্য মাতা-পিতা অবুঝ শিশু সন্তানের উপর সীমাহীন, অসহনীয় চাপ প্রয়োগ করে থাকে তখন এটাকে শিশু নির্যাতন ছাড়া কিছু বলা যায় না। শিশুর একটা ক্ষমতা আছে। সে ক্ষমতাকে পরিমাপ বা অনুধাবন না করে তার উপর সহ্যসীমার বাইরে অতিরিক্ত কর্মযজ্ঞ চাপালে সে বড্ড অসহায় বোধ করে। আর এ কর্ম সম্পাদনে তাকে বাধ্য করা হলে তা শিশুর মানসিক বিকাশে চরমভাবে বাধা সৃষ্টি করে।

ওরা শিশু হয়ত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। প্রতিবাদ করতে পারছে না। তাই বলে তাদের উপর এতটা চাপ প্রয়োগ করা মোটেও উচিত নয়। কোন কাজে তাদের ইচ্ছাশক্তি কাজ না করলে তা বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে।

এ কাজে শিশুর ইচ্ছাশতিক্ত কতটা কাজ করছে তা বুঝার চেষ্টা করা হচ্ছে না মাতা-পিতার পক্ষ থেকে। একই কাজে শিশুর ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত হয় নাই। অথচ মাতা-পিতার মধ্যে চরম ইচ্ছা ও আকাঙ্খা কাজ করছে। মাতা-পিতার এ প্রবল আকাঙ্খার সাথে শিশুর পক্ষে নিজেকে অভিজোযিত করা সম্ভব নয়। ফলশ্র“তিতে, শিশু দারুণ মনকষ্টে যন্ত্রণা বোধ করে।

তার ভাষা নেই। ও অত কিছু বুঝে না। মাতা-পিতাকে তার কষ্টের কথা বুঝানোর মত জ্ঞান তার তখনও হয় নাই। সে জন্য সে শুধু সহ্যই করে যায়। কাঁদে।

শুধু কাঁদারই ক্ষমতা আছে তার। আর মাতা-পিতা তার কাঁন্নার মূল্য দিতে ইচ্ছুক নয়। পাড়তেই হবে। সেজন্য যত ধরনের কৌশল আছে শিশুকে বুঝানোর তাই করবে। তবুও তাকে ক্লাসে ফার্স্ট হতেই হবে।

অথবা উমুক নামকরা বা বিখ্যাত স্কুলে তাকে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেতেই হবে। মাতা-পিতা যদি বুঝত যে এ প্রতিযোগিতা কেমন প্রতিযোগিতা ? ওনারা তাদের জীবদ্দশায় এমন কোন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা তা অন্ততঃ একবার ভেবে দেখেন না। কোন স্কুলে ভর্তির আসন সংখ্যা ৫০। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে অন্ততঃ ৫০০০ শিশু পরীক্ষার্থী। হিসেব করলে দেখা যায় প্রতি ১০০ জনে ১ জন চান্স পাবে।

প্রতিযোগিতা কাকে বলে একটু অনুধাবন করা যাক। বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ১৩টি দল অংশ গ্রহন করে। ১ টি দল হয় চাম্পিয়ন। অর্থাৎ, ১৩ জনের মধ্যে ১ জনকে প্রথম বা ফার্স্ট হতে হয়।

এটুকু করতে পারলেই বিশ্বকে জয় করে। তারা হয় বিশ্বজয়ী। আর ওই ছোট্ট শিশুটিকে নেমে দেয় হচ্ছে ১০০ বা ২০০ টি দলের একটি টুনামেন্ট যেখানে তাকে চাম্পিয়ন হতেই হবে। এটাকে প্রতিযোগিতা বলা যায় না। এটা যথারীতি শিশু নির্যাতন।

কোন মা কি বলতে পারবেন আপনি আপনার জীবনে এরকম কোন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করেছেন। বোধ করি পৃথিবীতে একজন মা-ও নেই যে বলবেন- হ্যাঁ। কারণ আপনি যখন শিশু ছিলেন তখন কোন স্কুলে ভর্তি হতে এমন কোন প্রতিযোগিতা ছিল না। আর বাংলাদেশের মতো এমন জনবহুল দেশ বিশ্বের কোথাও নেই যে সেখানে কোন শিশুকে কোন ¯কুলে ভর্তি হতে এতটা প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। আপনি কোন বিবেকে আপনার আদরের শিশু সন্তানটিকে ওই আগুনের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন ? ওরা অবুঝ বলে কিছু বলতে পারছে না।

আপনার কি উচিত হচ্ছে এভাবে তাকে নির্যাতন করা ? আপনার নিজের সন্তান বলে আপনি ভাবছেন,আপনার আধিকার আছে। আপনি ভাবছেন আপনার সন্তানকে আপনার চেয়ে আর কেউ বেশি ভালোবাসে না। ঠিক। মাতা-পিতার চেয়ে সন্তানকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারে না। কিন্তু আপনি যে আকাঙ্খা পূরণের উন্মাদনায় স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি হারিয়েছেন- তা কি একবার বিচার বিবেচনা করে দেখেছেন ? দেখুন।

বিচার করে দেখুন আপনার শিশুকাল। আপনার শিশু কালের সাথে তুলনা করে দেখুন। আপনি শিশুকালে কী করেছেন আর আপনি শিশুকে কী করাচ্ছেন ? ভাবছেন সময় বদলে গেছে। সত্য। কিন্তু স্রষ্টা যে শিশুটিকে পৃথিবীতে জন্ম দিচ্ছেন তার মস্তিস্ক কি আগের চেয়ে আলাদা কোন উপাদান দিয়ে বানাচ্ছেন, নাকি আপনার বা আপনার বাবা দাদার মস্তি¯ক যেভাবে গঠিত সেভাবেই গঠন করছেন আপনার শিশুটির মস্তিস্ক।

বংশগতির নিয়ম মতে সন্তানের গঠন প্রায় মাতা-পিতার অনুরূপ। খুব কাছাকাছি। আপনার মস্তিস্ক মোম দিয়ে তৈরি আর আপনার সন্তানের মস্তিস্ক লোহা দিয়ে তৈরি- এরূপ ভাবার কোন কারণ নেই। শিশু সন্তান। ওদের মস্তিস্ক বড়ই কোমল।

ওই কোমল মস্তিস্ককে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সময়ের সাপেক্ষে পারিপার্শ্বীক অবস্থার সাথে তাল রেখে তার কোষের জীনগত চরিত্র প্রকাশিত হয়। এখানে তিনটি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে । এক : সময় বা শিশুর বয়স, দুই : পারিপার্শ্বীক অবস্থা এবং তিন : জীনগত গঠন বা চরিত্র। সন্তানের জীনমের গঠন উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সময়ের সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।

সেই বিকশিত অবস্থাই প্রকাশ পায়। পৃথিবীতে এমন কোন যন্ত্র বা মেকানিজম উদ্ভাবিত হয়নি যা দ্বারাশিশুর ৪ বা ৫ বছর বয়সে ২০ বছর বয়সের দৈহিক ও মানসিক অবস্থা ঠিক ওইভাবে বিকাশ ঘটনো সম্ভব। আর তাই যদি না হয় তবে কিভাবে ৩য় বা ৪র্থ শ্রেণীর শিশুদের ৭ম বা ৮ম শ্রেণীর অংক কষতে দেন। আর কোন্ বিবেক বিবেচনায় বিভিন্ন নামী দামী স্কুলগুলোর ৩য় শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় ৭ম / ৮ম শ্রেণী মানের দু'একটি প্রশ্ন করা হয় ! যে শিক্ষক ওই প্রশ্ন করেন তিনি কি তাঁর শিশুকাল কখনো এমন প্রশ্নের মুখমুখী হয়েছিলেন ? গোলাপ ফুল সুগন্ধ ছড়ায়। এটা তার প্রজাতি ও জাতগত চরিত্র।

একটা গোলাপের কুঁড়িকে স্বেচ্ছায় পরিস্ফুটিত হওয়ার বা ফোটার সময় না দিয়ে কেউ যদি জোর পূবর্ক হাত দিয়ে কচি কুঁড়ির পাপড়িগুলো মেলে দেয় তবে কি গোলাপটি ওই সুগন্ধ ছড়াতে পারবে? গোলাপের কুঁড়ি দু’এক দিনের মধ্যেই ফুটে যায়। এই দু’এক দিন আগে কৃত্রিমভাবে পাপড়ি মেলে দিলেই সুগন্ধ ছড়াতে ব্যথ হয়। নষ্ট হয়ে যায়। আর মানব সন্তানের বিকাশের বিষটি তো আরো জটিল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ১০ মাস ১০ দিনে শিশু মাতৃ গর্ভ হতে পৃথিবীতে ভুমিষ্ট হয়।

নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়ের গর্ভে তাকে থাকতে হয়। তার চেয়ে মাস খানেক কম বয়সের শিশু ভূমিষ্ট হলেই তার স্বাভাবিক বিকাশের পথে অনেক বাধার সৃষ্টি হয়। এবং অত্যন্ত সর্তকতার সাথে তার সঠিক বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। আর কী করে একজন শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব ৫ম বা ৬ষ্ট, ৭ম শ্রেণীর বই পুস্তকের পাঠ উদ্ধার করা বা অংকগুলো সমাধান করা। আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না।

বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই। কোন স্কুলের ২য় শ্রেণীতে ভর্তি করানোর জন্য ওই ১ম শ্রেণীর শিশুকে ৭ম শ্রেণীর অংক শিখতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোচিং সেন্টার গুলো এই কাজে খর্গ হস্তে অবতীর্ণ হয়েছে এই দেশে। বিভিন্ন স্কুল ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর পাঠ্যসূচি এক নজর দেখলেই বিষয়টি সত্যতা যে কেউ নিঃশ্চিত হতে পারবেন। আর যে কোচিং সেন্টার যতটা উচ্চতর পর্যায়ের বিষয় পাঠ শিখাবে উচ্চাকাঙ্খী মাতা-পিতা সেই কোচিং সেন্টারের তত্ত্ববধানে সন্তানকে তুলে দিয়ে প্রশান্তি লাভ করেন।

এর অন্তরালে শিশুটির যে কী অপূরণীয় ক্ষতি করছেন তা অনুধাবণ করতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমনই পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে শিশুর মানসিক অবস্থা নিয়ে ভাববার সময়ও যেন মাতা-পিতার নেই। চোখ তাদের এতটাই সানের দিকে যে নিজের পায়ে সামনে হোঁচট খাওয়ার মত কোন খরকুঁটো রাস্তায় পড়ে আছে কিনা তার দেখার মত চোখ নিচু করার ধর্য্য তাদের নেই অথবা ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.