আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবহনে চাঁদাবাজি রোধে নীতিমালা



পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি একটি ভয়াবহ ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর প্রত্যক্ষ শিকার যেমন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা, তেমনই এর পরোক্ষ ভুক্তভোগী গোটা দেশবাসী। চাঁদাবাজির কারণে বাড়ছে পরিবহন ভাড়া। তার চাপ সরাসরি পড়ছে যাত্রীদের ওপর। অন্যদিকে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে পণ্যমূল্যও।

এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাজারে। আর এ চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে পরিবহন সেক্টরে মাঝে মাঝেই সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিতিশীলতা-উত্তেজনা, সংঘাত-সহিংসতা। সড়ক পরিবহন সেক্টরের এ চাঁদাবাজি রোধে এবার উদ্যোগী হয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে আজ সোমবার সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতিনিধিদের mgš^‡q বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এটি একটি ভালো উদ্যোগ সন্দেহ নেই। সড়ক পরিবহনে বিশেষ করে বাসটার্মিনালগুলোতে ওপেন-সিক্রেট হিসেবেই চলে চাঁদাবাজি। এ চাঁদাবাজির সুযোগ থাকার কারণে টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সহিংসতায় রূপ নেয়। অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে পরিবহন সেক্টর। এরকমটাই হয়ে আসছে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটাই ¯^vfvweK যে, যখন যে দল বা জোট ক্ষমতায় থাকে, পরিবহন সেক্টরও তাদের সমর্থিত লোকজনেরই নিয়ন্ত্রণ থাকে। সরকারি দলের শ্রমিক সংগঠনের নামে চলে টার্মিনালগুলোতেও দখলদারত্ব। জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন কয়েক দফায় টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি করছে। টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় এবং টার্মিনালের বাইরেও অনেকে বাস-ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি করছে। ফলে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পরিবহন সেক্টরে।

চাঁদাবাজির ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নানা রকমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সম্প্রতি এ চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনেও যানবাহন সেক্টরে চাঁদাবাজি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় এ সেক্টরে চাঁদাবাজির পথ রুদ্ধ করা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। সড়ক পরিবহন সেক্টরে বাস ও ট্রাক টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়া যানবাহনের কাছ থেকে রসিদের মাধ্যমে আদায় করার ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়।

যাতে করে কোনো বিশেষ সংগঠনের নামে কেউ ইচ্ছেমাফিক চাঁদা আদায় করতে না পারে। যদি সরকার থেকে টার্মিনাল উন্নয়ন বাবদ নির্দিষ্ট হারে টাকা জমা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে, কোনোমতেই কেউ রসিদ ছাড়া যানবাহনের মালিক বা শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারছে না, তাহলে একটা কাজের কাজ হতে পারে। সরকার এ রকম ব্যবস্থা রেখে যে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সেটাও একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু কথা হলো নীতিমালা তো অপরাধ প্রতিরোধ করতে পারবে না। আমাদের দেশে বিভিন্ন সেক্টরে অনেক ভালো ভালো নীতিমালা আছে, আইন আছে।

কিন্তু প্রয়োগের অভাবে এগুলো কাঙ্ক্ষিত ফল দিচ্ছে না। আসলে নীতিমালা হচ্ছে অপরাধ প্রতিরোধের একটা হাতিয়ার। এ হাতিয়ারকে কার্যকরভাবে ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করছে সাফল্য। তবে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হলে নীতিমালার বাস্তবায়ন নিশ্চয়ই সম্ভব। পরিবহনে চাঁদাবাজি করে একটা ক্ষুদ্র শ্রেণী পকেট ভারী করছে, কিন্তু ক্ষতি করছে গোটা দেশবাসীর।

ক্ষতি করছে সরকারের ভাবমূর্তিরও। এটা নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টরা বোঝেন, কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে উদ্যোগী হন না। এবার সরকার উদ্যোগী হয়েছে- এটা ভালো লক্ষণ। আজ যোগাযোগমন্ত্রীর সাথে পরিবহন সেক্টরের সংশ্লিষ্টদের যে বৈঠক হচ্ছে আমরা আশা করছি সেখানে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার পথ রুদ্ধ করার কার্যকর উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.