আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সামরিকতন্ত্রের নষ্টগ্রহ



গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সামরিকতন্ত্রের নষ্টগ্রহ ফকির ইলিয়াস ======================================== বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গেছেন। পবিত্র রমজান মাসে তার এ সফর নিয়ে দেশে শুরু হয়েছে নানা কথা। সরকার পক্ষের কোন কোন নেতা বলছেন, প্রধান বিরোধীদলের নেত্রী দেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করছেন। খালেদা জিয়া তার দুই অসুস্থ ছেলেকে দেখার জন্য লন্ডন কিংবা ব্যাংককে কেন যাচ্ছেন না, সে প্রশ্নও তুলেছে সরকার পক্ষ। আর বিএনপি বলছে, দেখতে যাওয়া না যাওয়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত বিষয়।

প্রশ্নটি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করেছেন। 'একজন মা হয়ে নিজ সন্তানদের কেন তিনি দেখতে যান না?' খালেদা জিয়া ওমরাহ পালনে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে বর্তমান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে গেছেন। বর্তমান সরকারকে চরম স্বৈরাচারী বলেও আখ্যায়িত করেছেন। একটি কথা খুবই স্পষ্ট আজ থেকে মাত্র চার বছর আগেও দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া। তার সহযোগী ছিল সেই একাত্তরের পরাজিত রাজাকার-আলবদর শক্তি।

সে সময়ের প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগ বিশেষ করে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেও, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এসব আলোচনা-সমালোচনা শুনতে ছিলেন সম্পূর্ণ নারাজ। এবং বলে বেড়াচ্ছিলেন, দেশে কোন মৌলবাদী জঙ্গি নেই। এটি ছিল একটি জাতির চরম দুঃখবোধ, স্বয়ং একজন প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের মদত দিয়েছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে খালেদা জিয়া এখনো তাদের পোষ্য 'বাংলা ভাই' এবং 'শায়খ রহমান'-এর একযোগে দেশব্যাপী বোমা হামলা বিষয়ে অনুতপ্ত নন। বরং প্রকাশ্যে জঙ্গিবাদের পক্ষে সাফাই গেয়েই যাচ্ছেন।

সেই চারদলীয় জোট সরকারের কৃতকর্মের সূত্র ধরেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন। তারই পরবর্তী ধাপে সপ্তম সংশোধনীও বাতিল হয়ে গেছে। দেশে সামরিক শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের অভিলাষে চুনকালি দিয়ে এই যে ঐতিহাসিক রায়, তা মূলত জনগণেরই বিজয়। একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন কালো শক্তির উত্থান গণমানুষের জন্য কোন সময়ই কল্যাণকর হয় না। তা সামরিক জান্তা হোক আর জঙ্গিবাদ হোক।

প্রকারান্তরে এ দুটি শক্তিকেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী শক্তি। তারা শুধু নিজেদের ভোগের জন্য জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে বারবার। খালেদা জিয়ার বোনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউককে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার পক্ষের আইনজীবীর ভাষ্যমতে ডিউক অনেক গোপন তথ্য দিয়েছেন। ২১ আগস্টের সেই নির্মম বোমা হামলার সঙ্গে হাওয়া ভবন তথা তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতী হান্নান প্রমুখের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল বলে ডিউক নাকি গোয়েন্দাদের তথ্য দিয়েছেন।

অন্যদিকে ডিউকের পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, ডিউক এমন তথ্য দেননি। ২০০৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দেশে একযোগে বোমা হামলা, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পেছনে কোন কোন শক্তিধরের হাত ছিল, তা রাষ্ট্রের মানুষের কাছে খোলাসা হওয়া খুবই জরুরি। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আহসান উল্লাহ মাস্টার, আইভি রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়ার মতো জাতীয় নেতাদের নির্মমভাবে হত্যার পরও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর হননি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শোক পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। কই, সে সময় তো বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতা এমনভাবে আক্রান্ত হননি।

তাহলে তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগকে ২০০১-২০০৬ সালে নেতৃত্বশূন্য, নির্মূল করার জন্য কারা নেপথ্যে কাজ করছিল? দুই প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশে রাতারাতি কেউ সোনার জিয়নকাঠির স্পর্শ লাগাতে পারবে, এমন কোন সম্ভাবনা নেই। চারদলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে রাষ্ট্রের অবকাঠামোকে পঙ্গু করার জন্য তৎপর ছিল। তাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ভেঙে পড়েছিল গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। নাম-জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রের মানুষ এসব জঘন্য হীনকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।

তারা জানিয়ে দিয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করা, শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন সাধনে সচেষ্ট হওয়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে নিজ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষা করে চুক্তি করাসহ উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে সমর্থ হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী ক্রিমিনালদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনই ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সামরিকতন্ত্রের বেনিফিসিয়ারিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে। আগেই বলেছি, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এ দেশে তাৎক্ষণিক সব সমস্যা সমাধান করা খুব সহজ কাজ নয়।

এছাড়া একটি পরাজিত শক্তি যখন কোন গণতান্ত্রিক সরকারকে পদে পদে বাধা দেওয়ার জন্য মরিয়া থাকে তখন এ কাজগুলো আরও কঠিন হয়ে পড়ে সরকারের জন্য। খালেদা জিয়া এবং তার দোসররা মনে করেছিল তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবেই ভোগ করবে। তারা তা পারেনি। ফলে সেই আগের মতোই 'বিসমিল্লাহ' এবং 'ভারত' জুজুর ভয় দেখিয়ে তারা মানুষের আইওয়াশ করছে বারবার। অথচ পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট বেরুচ্ছে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অন্যতম কারিগর হারিছ চৌধুরী নাকি সেই ভারতের করিমগঞ্জে তার মামা বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ভারতকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে বিএনপি যতটা ব্যবহার করেছে, আওয়ামী লীগ তার সিকি ভাগও করেনি। তারপরও সব দোষ আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে তথাকথিত তমদ্দুনপন্থি রাজনীতি করার খায়েশ বিএনপির ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে কর্নেল তাহের হত্যাকা-ের সামরিক নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফাঁসির নামে কর্নেল তাহেরকে তড়িঘড়ি হত্যার ব্যবস্থা করেছিল জিয়াউর রহমান। এবং তার সব নথিপত্রও কি তাহলে সেই সামরিক জান্তারা গায়েব করে গেছে? যে কোন রাষ্ট্রের সামরিক শাসকরা শুধু স্টিম রোলারই চালায় না, বুলডোজার দিয়ে জাতির ভবিষ্যৎ যাত্রাপথের সড়ককে গুঁড়িয়ে দিয়ে যায়।

জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে তেমনি একটি নষ্টগ্রহের স্থপতি। ছাত্ররাজনীতির সৃজনশীলতাও চরমভাবে বিনষ্ট হয়েছে এই জিয়াউর রহমানের হাতেই। তার দল সে উত্তরাধিকারই বহন করে চলেছে। ১ সেপ্টেবর ২০১০ ---------------------------------------------------------------------- দৈনিক সংবাদ । ঢাকা।

৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ শুক্রবার প্রকাশিত ছবি - ভেরা বীন


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.