আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিসরের রোজা হচ্ছে একটা উৎসবের মাস!!

চলার পথ অনেক, সত্য পথ একটাই

মিসরে রমজান (ওরা বলে রমাদান) হচ্ছে একটা উৎসবের মাস। রাস্তাঘাট, দোকান পাঠ, বাড়িঘর - সবখানে জ্বলে রঙিন কাঁচের লন্ঠন, ওরা বলে ফানুস। মহল্লায় মহল্লায় রঙ্গিন কাগজ কেটে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ওরা পরিচিতজনের সাথে দেখে হলে ঈদ, নববর্ষ - ইত্যাদির মত সম্ভাষণ জানায়। সন্ধায় মাগরিবের আযান দেয়ার সাথে সাথে রকমারী ইফতারের গন্ধে বাতাস মৌ মৌ করে - সব মিলিয়ে পুরো মাস জুড়ে একটা উৎসব উৎসব ভাব।

ফানুস জ্বালানো দেখেই বোঝা যায় মিসরে রোজা এসেছে। ফানুসের আকৃতি বিভিন্ন রকমের হলেও বেশীরভাগের আকার হচ্ছে আগের যুগের রাস্তায় জ্বালানো বাতির শেডের মত, ৫,৬,৭ কোনার কাচ দিয়ে ঘেরা, উপরে নীচে ধাতব আবরণ। ফানুসের কাচগুলো থাকে রঙিন। তাতে বিভিন্ন নকসা করা থাকে, মসজিদের ছবি, আল্লাহু আকবর, কোরআন শরীফের আয়াত ইত্যাদিও লেখা থাকে। ফানুসের উপরের অংশেও থাকে নানা কারুকাজ।

কোনো কোনো ফানুসের উপরটা থাকে মসজিদের মিনারের আকারের। রোজা শুরুর আগে থেকেই বিভিন্ন সম্ভাষণ শুরু হয়। আমারা যেমন ঈদের আগে পরে পরিচিত কাউকে দেখেলেই বা কারো সাথে কথা হলেই ঈদ মোবারক বলি, ওরা তেমনি সারাটা রোজা ধরে চালিয়ে যায় বিভিন্ন ধরণের সম্ভাষণ। তার মধ্যে রয়েছে, - "রমাদান করীম" এর উত্তরে বলা হয়, "আল্লাহু আকরাম" - "কুল্লু সানা ওয়া আনতুম তাইয়্যিব" বা "কুল্লু সানা ওয়া আনতুম তাইয়্যিব" (সারা বছর তুমি ভালো থেকো) ওরা সেহরীতে সাধারণ খাবার যেমন রুটি, ফুল - এসবই সাধারণত: খেয়ে থাকে। সাথে থাকে টক দই, ওরা বলে জাবাদি।

খাবার উৎসবটা হয় ইফতারে। ইফতার শুরু হয় খেজুরের শরবত দিয়ে। সারাদিন খেজুর ভিজিয়ে রাখার পর সেই পানির স্বাদই আলাদা। সাথে থাকে হরকে রকম খেজুর। ইফতারীতে মিষ্টিটা ওরা বেশী খায়।

তবে অন্যান্য সুস্বাদু খাবার যেমন মাহসি, মুরগীর রোস্ট, ফ্রাইড রাইস - এসবও বাদ যায় না। রোজার সময় খাবার দাবারের দিকে ওরা একটু বেশীই নযর দেয়। অবশ্য, তাতে আমাদের মত খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবার ঘটনা ঘটে না। আমাদের মত ইফতার পার্টির প্রচলন আছে মিসরে। তবে দীর্ঘদিন ধরে জরুরী অবস্থা থাকায় ইফতার পার্টিগুলো হয় ঘরোয়া পরিবেশে, ছোট আকারে।

গরীব কিংবা পথচারীদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। উৎসবের আমেজটা ওদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও দেখা যায়। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো যেমন ঈদ উপলক্ষ্যে বিনোদনমূলক প্রচূর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, ওরা তেমন পুরো রোজা ধরে ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত উপভোগ্য অনুষ্ঠান প্রচার করে। রমজানে ওদের কোরআন চর্চা অনেক বেড়ে যায়। তরুনদের বুক পকেটে দেখা যায় ছোট পকেট কোরআন শরীফ।

বাসের জন্য অপেক্ষা করছে, ইউনিভর্সিটিতে দুটো ক্লাসের মধ্যে একটু গ্যাপ - তার মধ্যে একটু কোরআন শরীফ পড়ে নিলো। ইফতারের পর কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পাড়ায় পাড়ায় কোরআন তেলাওয়াতের আসর বসে। লাল তুর্কী টুপি পরে ক্বারী সাহেব কোরআন শরীফ পড়েন। সারিবদ্ধ ভাবে লোকেরা বসে তেলাওয়াত শোনে মন্ত্রমুগ্ধের মত আর মাঝে মাঝে আল্লাহু আকবর বলে বাহবা দেয়। সেই তেলাওয়াত আমাদের দেশের কোরান খানির তেলাওয়াৎ নয়।

হৃদয়ের সবটুকু আবেগ আর গলার সবটুকু মাধুর্য্য ঢেলে ক্বারী সাহেব কোরআন আবৃতি করেন। কোনো কোনো আয়াত বার বার পড়েন। ওরা তারাবীহ পড়ে মসজিদে, কোথায় আট রাকায়াত কোথাও বিশ রাকায়াত। কিছু কিছু মসজিদে খতম তারাবীহ পড়া হয়। আমাদের দেশে যেমন হাফেজ সাহেব অতিদ্রুত আওড়ে যান, ওরা সে রকম পড়ে না।

বরং প্রত্যেকটা শব্দ আবেগ দিয়ে আবৃতি করা হয়। মুসলমানেরা প্রায় সকলেই রোজা থাকে। সহপাঠী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কাউকে দেখিনি রোজা না থাকতে। মেয়েরা তো অন্য সময়ে সাজগোজ করে আসে, অনেকে মিনি স্কার্ট পরে। রোজায় সব পাল্টে যায়।

মুখের লিপস্টিক মুছে যায়, স্কার্ট লম্বা হয়ে যায়, এই একটা মাস যেন সকলে ধর্ম পালনের দিক থেকে কোন ত্রুটি রাখতে চায় না। ধন্যবাদ: আমিনূল মোহায়মেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.