আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃত্রিম প্রাণ



কৃত্রিম প্রাণ তৈরি হল বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে কৃত্রিম প্রাণ তৈরি করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স এক্সপ্রেসের ২০ মে সংখ্যায় কৃত্রিম জোনোম (genome)সৃষ্টির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিন্থেটিক বায়োলজিস্ট ক্রেইগ ভেন্টার ও তার দল ১০ বছরের গবেষণার পর ল্যাবরেটরিতে স্ক্রাচ (রাসায়নিক উপাদান) থেকে কৃত্তিমভাবে জোনোম তৈরি করেছেন। মূলত এর পর পরই সারা পৃথিবী ব্যাপী এটা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়েছে। এটাকে বিজ্ঞানের তাবৎ কালের তাৎপর্য্যপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে।

"Artificial life" break through announced by scientist" শিরোনামে ব্রেকিং নিউজ করে বিবিসি। বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো নানান প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে। মূলতঃ জৈব প্রযুক্তি আর জীববিজ্ঞানের বহু অজানা রহস্যের উন্মোচন আর নতুন নতুন গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করবে এই আবিষ্কার। প্রায় ২০ জন বিজ্ঞানী ১০ বছর সময় গবেষণায় এই কৃত্রিম জেনোম সৃষ্টি করেছেন। এটাই বিশ্বের প্রথম আবিষ্কৃত সম্পূর্ণ কৃত্রিম জোনোম।

জেনোমের মধ্যেই সকল প্রাণী বা উদ্ভিদ এর সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে। জেনোমকে সহজভাবে ডিএনএ (DNA) বলা যায়। জেনোম তৈরি হয় চারটি বর্ণ দিয়ে A(অ্যায়োনিন), T(থায়মিন), C(সাইটোসিন) ও G(গুয়ানিন)। সকল প্রাণীর জেনোমই এই বেস (Base) তৈরি। বেসগুলো একটার সাথে আরেকটা যুক্ত হয়ে বিশাল জেনোম তৈরি করে।

যেমন- মানুষের জেনোম প্রায় ৩ বিলিয়ন বেস দিয়ে তৈরি। এক প্রাণীর সাথে অন্য প্রাণীর পার্থক্য বা একই প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর যে পার্থক্য তা আসলে নির্ভর করে এই বেসগুলো কোনটার পর কোনটা সাজানো আছে এবং কিভাবে সাজানো আছে তার উপরে। বিজ্ঞানীরা যে কৃত্রিম জেনোমটি তৈরি করেছেন সেটা একটি মাইকোপ্লাজমা মাইকোয়েড ব্যাক্টেরিয়ার জেনোম। এটার দৈর্ঘ্য মানুষের জেনোমের তুলনায় কম। তবে এই পরিমাণ দীর্ঘ জেনোম তৈরি করাটাও প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

কারণ এই এক দশমিক শূন্য আট মিলিয়ন বেসের মধ্যে মাত্র যদি একটা বেসও ভুল বা উল্টোভাবে সজ্জ্বিত হয়, তাহলে পুরো জেনোমটাই বাতিল হয়ে যেতে পারে। ফলে বিজ্ঞানীদের আসল মাইকোপ্লাজমা মাইকোয়েড ব্যাকটেরিয়ার জেনোমের হুবুহু কপি তৈরি করতে হয়েছে। এরপর তাঁরা ব্যাক্টেরিয়া থেকে মূল জেনোমটা সরিয়ে নিয়েছেন এক বিশেষ প্রক্রিয়ায়। তারপর তাঁরা সেই ফাঁফা ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে প্রতিস্থাপন করেছেন রাসায়নিক দিয়ে তৈরি সেই কৃত্রিম জেনোম। অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে সেই ব্যাকটেরিয়ার (প্রাকৃতিক কোষ+প্রাকৃতিক জেনোম) আর দশটা স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়া (প্রাকৃতিক কোষ+প্রাকৃতিক জেনোম) মতো বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

এই বংশ বৃদ্ধি (self replication) করতে পারাটাই হলো অনন্য এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এছাড়া এই ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিও হচ্ছে প্রাকৃতিক গতিতে। (capable of logarithmic growth)। ভেন্টার ফাইনান্সিয়াল টাইম পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এই আবিষ্কারে প্রাণ এবং প্রাণ কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আমার নিজের ধারনাকেও আমূল বদলে দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক উভয় অর্থেই আমার এই চিন্তার বদল।

এই কৃত্রিম প্রাণ আবিষ্কারের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত তীব্র ভাষায় এ আবিষ্কারের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। ভ্যাটিক্যান এবং ইটালির চার্চ অফিসিয়ালগণও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বিজ্ঞানীদের নৈতিক দায়-দায়িত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা এটাও জানিয়েছেন যে, বিজ্ঞানীরা খখনই সৃষ্টিকর্তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন না। তারা বলেন, আমরা বিজ্ঞানকে গভীর আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করি।

আমরা মনে করি বিজ্ঞানের দায়িত্ব জীবনকে অর্থপূর্ণ করা। এবং আমাদের অবশ্যই এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, আমাদের জীবনের জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজন। পদমর্যাদায় পোপের পরপরই অবস্থান, চার্চের এমন এক উচ্চপদস্থ ব্যক্ত্বি এঞ্জলো বেনাস্কো আবিষ্কারটিকে মানবজাতির বুদ্ধিমত্তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন এই আবিষ্কার সৃষ্টিকর্তার দিক থেকে মানবজাতির জন্য এক আশির্বাদ। তিনি আরো বলেন, কোন বুদ্ধিমত্তাই দায়িত্ববোধের ঊর্ধ্বে নয়।

সকল আবিষ্কারকে অবশ্যই নীতি ও নৈতিকতার মানদন্ডে যাচাই বাছাই করে গ্রহণ করা কর্তব্য। প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা বায়োএথিক্যাল ইসু্যগুলো তদারক করার জন্য একটা প্রেসিডেন্সিয়াল কমিশন গঠন করেছেন। এই আবিষ্কার প্রচারের পরপরই কৃত্তিম প্রাণ আবিষ্কারের ব্যাপারটাকে মনিটর করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেই কমিশনকে। কমিশনের প্রধানকে লেখা এক চিঠিতে ওবামা এই আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞান, পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় কিভাবে উপকারে আসতে পারে তা তদারক করতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এই আবিষ্কার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় কোন হুমকি হয়ে উঠতে পারে কি না তাও খতিয়ে দেখতে কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই আবিষ্কার কি্এটাই জানান দিচ্ছে যে ভবিষ্যতে প্রাণ সৃষ্টি ও পরিবর্তনের মৌল উপায়গুলো কি এখন মানুষের আয়ত্ত্বে এলো? খুব শীঘ্রই কি গবেষকগণ এমন ধরণের কোষ তৈরি করতে শুরু করবেন যেগুলো মেডিসিন বা জ্বালানী তৈরিতে কিংবা গ্রীনহাউস গ্যাস শোষণে কার্যকর হবে? অনেকেই ভাবছেন যে, এটা প্রকৃতিজগতের জন্যও এক যুগান্তকারী ঘটনা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবহারিক নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক জুলিয়ান স্যালভেজ বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে এই আবিষ্কারকে সঠিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন। এইসঙ্গে তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, এই আবিষ্কারের ঝুঁকির মাত্রাটাও অকল্পনীয়। তিনি বলেন, এই ধরণের রেডিক্যাল গবেষণার জন্য আমাদের নতুন ধরণের নিরাপত্তা কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে যাতে করে সামরিক বা জঙ্গীবাদের হাতে এটার কোন ভুল বা অপপ্রয়োগ না ঘটে। জেনেটিক টেকনোলজি মনিটরকারী সংস্থা গ্রীণওয়াচ ইউকে এর ড. হেলেন ওয়ালেস নিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়া বিপদ জনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

আমরা জানি না ঐ ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রকৃতিতে কি ধরণের আচরণ করবে? পরিবেশে নতুন জীবানুর অনুপ্রবেশের ফলে মঙ্গলের চেয়ে হয়তো অমঙ্গলই বেশি হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য আমরা পরিবেশে যে কোষগুলো ছড়িয়ে দেব; সেই কোষগুলোই হয়তো নতুন ধরণের পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করবে। ক্রেইগ ভেন্টারদের রিপোর্ট অনুযায়ী, সিন্থিয়া (ল্যাবে তৈরি কৃত্রিম প্রাণকে তারা এই নামকে দিয়েছেন) হয়ে উঠতে পারে দ্বিতীয় প্রজন্মের এগ্রাফুয়েল এই কৃত্রিম প্রাণ হয়ে উঠতে পারে এমন ধরণের জৈব জ্বালানী, যেটা অন্তঃ তাত্ত্বিকভাবে, মানুষ এবং যানবাহন উভয়েরই চাহিদা পূরণ করতে পারে। সায়েন্সে প্রকাশিত নিবন্ধে আরো বলা হয়, সিন্থিয়া, অথবা এই সিন্থেটিক বায়োলজি, সুনির্দিষ্টভাবে পরিবেশ দূষণ, ঋতু পরিবর্তণ এবং খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্ত এ ধরণের আশাবাদের বিপরীতে ইটিসি গ্রুপের (কানাডা ভিত্তিক একটি সংস্থা) এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর প্যাট মনি বলেন, এই আবিষ।

কার কার্যত একরাশ নতুন সমস্যা আমাদের সামনে আনবে, যেগুলো মোকাবলো করার প্রস্তুতি রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পর্যায়ে খুব একটা বেশি নেই। সিন্থেটিক বায়োলজির সকল গবেষণাই লাভজনক, কিন্তু একইসঙ্গে এটি উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। কারণ, সামগ্রিকভাবে বিষয়গুলোর উপর মানুষের জ্ঞান এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের। ইটিসি গ্রুপের আরেক গবেষখ জিম থমাস বলেন, আমরা জানি যে, পরীক্ষাগারে থৈরি কৃত্রিম প্রাণ প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। , জীবাণু অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং সর্বোপরি পরীক্ষাগারে প্রস্তুত কৃত্রিম প্রাণ পরিবেশের সর্ব, এই ।

দু এগ্রাফুয়েল। এই কৃত্রিম এগ্রাসর্বপরি, এই কৃত্রিম প্রাণ আবিষ্কারের ঘোসণাদানকারী বিজ্ঞানী ক্রেইগ ভেন্টার নিজেই সিন্থেটিক বায়োলজি বিষয়ক প্রাইভেট কম্পানী সিন্থেটিক জেনোমিক্স এর মালিক। এই সিন্থেটিক জেনোমিক্স এর সাথে বিপি এবং এক্সন এর আর্থিক ও ব্যবসায়িক সমঝোতা আছে। ইসন্থেটিক জেনোমেক্স সম্প্রতি এক্সন কোম্পানীর সাথে ৬০০ মার্কিন মিলিয়ন ডলারের একটি ব্যবসায়িক চুক্তি করেছে। এছাড়া এই সিন্থেটিক জেনোমেক্স কোপআনী ২০০৭ সালে বিপির সাথেও ব্যবসায়িক চুক্তি করে।

তথ্যসূত্র ও অতিরিক্ত পাঠঃ 1. লিঙ্ক(Click This Link) 2. ক্রেইগ ভেন্টার ও তাঁর দলের মূল প্রবন্ধ "Creation of a Bacterial Cell Controlled a Chemically Synthesized Genome"-এর ডাউন রোড লিঙ্ক। (Click This Link) 3. চার্চ বিজ্ঞানীদের ঈশ্বরের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হতে সতর্ক করেছেন, এসাসিয়েটেড প্রেস। লিঙ্ক(Click This Link) 4. Click This Link ইটিসি গ্রুপের নিউজ রিলিজ। লিঙ্ক: (http://www.atcgroup.org/en/node/5142) .

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।