আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃত্রিম রক্ত



মানব দেহে রক্তের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের কল্যাণে অন্যান্য অনেক জিনিসের মতো এই অতি প্রয়োজনীয় জিনিস রক্তও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আর জনৈক জাপানি ডাক্তার জরুরি অপারেশনের সময় ঐ কৃত্রিম রক্ত কাজে লাগিয়েছেন এবং ফলও পেয়েছেন। কৃত্রিম রক্ত আসলে এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ। এই যৌগ স্বাভাবিক রক্তের মতোই শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা রাখে।

এর রাসায়নিক নাম ‘এফডিএ’। বিজ্ঞানীরা দুটি রাসায়নিক যৌগের সাহায্যে এফডিএ তৈরি করেছেন। এ দুম্বটি যৌগ হচ্ছে পারফ্লুরোডেকটিন এবং পারফ্লুরোট্রাই প্রয়ল্যামাইন। জাপানের একটি মেডিকেল কলেজের শল্য চিকিৎসক ডক্টর কেনজি হোন্ডা অপারেশনের সময় মোট দেড়শো রোগীর দেহে এই কৃত্রিম রক্ত ঢুকিয়েছেন এবং প্রত্যেকটিতে সফল হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওষুধ যাকে বলে এফডিএ ঠিক তা নয়।

ড. হোন্ডার মতে একে বলা যেতে পারে অক্সিজেন পরিবাহী। এই কৃত্রিম রক্ত বা এফডিএ প্রথম তৈরি করেছেন ওসাকার ড. জে. নাতিও। আর তিনিই এর নাম দিয়েছেন এফডিএ। এই রক্ত শরীরের স্বাভাবিক রক্তের মতোই অক্সিজেন বহন করতে পারে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, থ্রম্বসিস প্রভৃতির সময় শরীরে রক্ত দেয়া প্রয়োজন হলে এই রক্ত ব্যবহার করা যায়।

এক নাগাড়ে তিন দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেও শরীরে এখনো পর্যন্ত কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এই রক্ত দেখতে দুধের মত। দুধের মতোই তরল। এই রক্ত যকৃতের কোন ক্ষতি করে না। তবে কিছু অসুবিধাও আছে।

সাধারণ রক্ত অক্সিজেন ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টির সামগ্রী, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন ইত্যাদি পৌঁছে দেয়। কিন্তু কৃত্রিম রক্তের সে ধরনের কোন ক্ষমতা নেই। আর এখানেই সাধারণ রক্তের সঙ্গে এফডিএ-র পার্থক্য। উল্লেখ্য, দেহ কোষের বৃদ্ধি, বিভাজন এবং শারীর বৃত্তীয় কাজকর্মের জন্য রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশে উপরোক্ত দ্রব্যাদি পৌঁছে দেয়া জরুরি। সাধারণ ক্ষেত্রে কারোর শরীরে রক্ত দিতে গেলে ডাক্তাররা কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

প্রথমেই দেখতে হয় রক্ত কোন গ্রুপের। কেননা একেক জনের রক্ত একেক গ্রুপের হয়ে থাকে। ফলে কোন একজনের রক্ত অপর একজনের শরীরে ইচ্ছেমত ঢুকানো যায় না। যার শরীর থেকে রক্ত নেয়া হয়ে থাকে বা ব্লাড ব্যাংক থেকে যে গ্রুপের রক্ত নেয়া হোক সেই রক্ত ও রোগীর রক্ত একই গ্রুপের না হলে হিতে বিপরীত ফল হতে পারে। ক্ষতি হবার আশংকা বেশি থাকে।

কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত এই কৃত্রিম রক্ত যে কোন মানুষের শরীরে দেয়া যায়। এই রক্তে তেমন কোন বাদ বিচার নেই। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, কারোর দেহে যে কোন গ্রুপের রক্তই থাকুক না কেন রক্তের প্রয়োজনে সকলের দেহে এফডিএ দেয়া যেতে পারে। এতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটে না। এদিক থেকে এফডিএ একটি মস্ত বড় অসুবিধা দূর করেছে।

কারণ অনেক সময় রোগীর জন্য ঠিক যে গ্রুপের রক্ত দরকার সেই গ্রুপের রক্ত দেয়ার মত দাতা পাওয়া যায় না- এমনকি ব্লাড ব্যাংকেও না থাকতে পারে। চিকিৎসার সময় রোগীর দেহে এফডিএ দেয়া হয় দু’থেকে তিন হাজার মিলিলিটার। আর এজন্য সময় লাগে ঘণ্টা দু’য়েক। শরীরে ঢোকার পর এর প্রতিক্রিয়া থাকে তিন ঘণ্টার মত। কাজ সারার পর এই যৌগ ফুসফুসের ভেতর দিয়ে এসে নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়।

এভাবে শরীর থেকে এটি তিন থেকে ছয় মাসে পুরোপুরি বের হয়ে যায়। পৃথিবীর দেশে দেশে হাসপাতালের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। অপারেশনের জন্য চাই প্রচুর রক্ত। জনসাধারণের পক্ষে অত রক্তের যোগান দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।

এছাড়া আছে গ্রুপের প্রশ্ন। ঠিক যে গ্রুপের রক্ত দরকার সেই গ্রুপের রক্ত বা রক্তদাতাই হয়তো পাওয়া গেল না সময়মত। হয়তো রক্তদাতা পাওয়া গেল, কিন্তু রক্ত দেয়ার মত সামর্থই তার নেই। এরপর আবার দেখতে হবে, যিনি রক্ত দিচ্ছেন তিনি রোগমুক্ত কি না। কারোর সংক্রামক রোগ বা রক্তে অনাকাঙিক্ষত বস্তু থাকলে তার রক্ত অন্যের শরীরে ঢোকানো রীতিমত বিপজ্জনক।

কৃত্রিম রক্তের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন বাধাই থাকবে না। এছাড়া কৃত্রিম রক্ত দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। অদূর ভবিষ্যতে চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যাপক রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যদি এফডিএ-র ভূমিকা নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত হয় অপারেশনের কাজ তখন আরো অনেক সহজ হবে বলাই বাহুল্য।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।