আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্প : নূরানী খুনি

পাখি এক্সপ্রেস

"মিষ্টি এতো কম ক্যা? ঘটনা কি ছোটখাটো ঘটছে? পুরা পঞ্চাশেক মুরতাদের জান কবচ হৈলো, আর তুমরা মিয়ারা দুই কেজি মিষ্টি আইন্যাই খালাস! তুমগোরে দিয়া ঘোড়ার ডিম ভাজির কাম হইবো বৈলাও মনে হয় না। টেকার কোন অভাব নাই। কিন্তুক, মিষ্টির অভাব ক্যান! ঘরে সুগন্ধি মাইরা আগরবাত্তি জ্বালাও। পুরা ঘরে একখানা মিষ্টির পাহাড় আর একখানা শরবতের দরিয়া বানাইয়া দেও। ... আপনেগো আবার কি হৈলো, অই মিয়ারা বসেন না ক্যান?" – নেতা বেশ উত্তেজিত হয়েই কথাগুলো ছাড়লেন।

আয়েশ করে বসতে বসতে শীর্ষ নেতার উদ্দেশ্যে মকবুল আখন্দ বললেন – "হুজুর আমার হাতে কতল হওয়া শেষ পিসরে মনে হয় জ্যন্ত দাফন হয়েছে। তার গায়ের উপর মাটি দেয়ার সময় মাটি নড়তে দেখা গেছে। এটা সত্য হলেতো আমি পুরো সওয়াব পাবো না। এ বিষয়ক কোন হাদিস আছে? পুরো মেরে দাফন করার হুকুম, নাকি দাফনের পর মারা গেলেও হবে"? মকবুল সাহেবের টেনশনের কথা শুনে শীর্ষ নেতা ঈষৎ নড়েচড়ে উঠলেন। গড়গড় করে বলতে থাকলেন- "আমি কিন্তুক কৈলাম এ বিষয়ে কিলিয়ার না।

ঘটনা দুইটাই ঘটেত পারে। তয়, সন্দেহ হৈতাছে... মনে হয় যেমনেই হোক মারা গেলেই হৈবো। আর কাফেরের মুশরিকের আবার কিসের দাফন কাফন! মাটি চাপায় মারা গেলেও হৈবো, কল্লা আলাদা করলেও হৈবো। তয়, তুমি মিয়া একখান জিনিস। নাচতে নাচতে বেবাক কিছু ম্যাচাকার কইরা দিলা।

চোক্ষের পলকে কতগুলান মুরতাদের আসমানের টিকিট ধরাইয়া দিলা"! "... হ, আখইন্দাতো মোট ১৭টারে শ্যাষ কর্চে" –নেতার কথার সাথে এ পরিসংখ্যান যোগ করলেন মোহাম্মদ আলী আজম। মুখভুর্তি পানের পিক কোন মতে সামলে নিয়ে থুতনীটারে উপরের দিকে তুলে ধরে আজকের এ খুশির দিনে ঘরের মেঝতে পিক ফেলার অনুমতি নিয়ে দেলু মিয়া পুত করে পিক খালাস করলেন। আর জোরে জোরে বলতে থাকলেন- "আমিতো খালি শালাগো তামশা দেখছিলাম। যাই কন্না কেন, শালারা বহুত জ্ঞানী আছিলো। কিন্তু একটা জ্ঞানের বহুত অভাব আছিলো।

এসব জ্ঞান বিজ্ঞানের মীমাংসা কোরআন হাদিসে কৈরা দেওনের পর এডি নিয়া বাড়াবাড়ি করার কোন মানে হয়। মূর্খের দল মিছামিছিই জানটা হারাইলো। সুরেশরে শ্যাষ করার আগে ব্যাটার অন্ডকোষে কইষা লাত্থি মারছিলাম। কি সুন্দর বৌটার লগে এতোদিন বে-শরিয়তী সহবাস করছিলো। শালার অন্ডকোষ থেতলিয়ে তারপর ইন্নালিল্লাহ করছি"।

কতল করা ৫০জন মুরতাদের মধ্যে ১২ জন বিবাহিত। তাদের স্ত্রী কন্যা ১৬ জন, ৫০ জনের নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি, চলমান ব্যবসা বাণিজ্য, খেতের ফসল – সবকিছু বায়তুল মালে জমা দেয়া হবে। ১৬জন বিপদগ্রস্থ মহিলার ঝামেলা সুরাহা করার জন্য প্রস্তাব আহবান করলে দলিল মিয়া তার মেজো পোলার জন্য আজাদ মুরতাদ আর আলম মুরতাদের মেয়ে দু’টোকে চাইলেন। মকবুল সাহেব তার ভাইয়ের ছেলের জন্য চাইলেন রহমান মুরতাদের ছোট মেয়েকে। সুশীল কর্মকারের বৌকে চাইলেন কামারু মিয়া, তার বিপত্নীক বড় ভাইয়ের জন্য।

এভাবে করে ১৪ জন মহিলার বন্দোবস্ত হলেও দেলু মিয়া কোন কথা বললেন না এবং বাকি ২জন বিপদগ্রস্থেরও কোন সুরাহা হলো না। শীর্ষনেতার খোঁচা খেয়ে মাথা থেকে টুপি নামিয়ে দেলু মিয়া বললেন- "হুজুর আপনিতো জানেন, আপনার ভাবীর ডায়াবেটিস ব্যারাম। আগের মতো সার্ভিস দিতে পারে না। মেশিন চলে না। বাকি দুই বিপদগ্রস্থাতো সুরেশের স্ত্রী আর কন্যা।

আমার দ্বিতীয় বিবির জন্য সুরেশের কন্যাকে প্রস্তাব করছি। আর সুরেশের বৌ আমার বাসায় গতরে খাইটা খাইবো। এই দুইজনের দ্বায়িত্ব আমিই নিলাম। আর ব্যাটা সন্তানগো বিষয়ে ভাবতেছি। তাদেরকে সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা কইরা দিমুনে।

তয় সৌদি পাঠানোর আগে কয়েকটা কচি আইটেম হয়তো গেলমান কোটায় রাইখ্যা দিতে পারি। কেউতো আর আগায়া আইলো না। শেষ মীমাংসা আমারেই করতে হৈলো"। "মইজ্জা জালিমের তামশাটা দেখছ? অহনও মিষ্টি নিয়া আইলো না। বাইনচোতের সোগা বরাবর একটা লাত্থি মারমু আইজকা"।

- শীর্ষ নেতার মুখে গালি শুনে পাতি নেতারা খিক করে হেসে উঠলো। টের পেয়ে শীর্ষ নেতা বললেন- "ধুর মিয়ারা! হাসির কি হৈলো! খুশির ঠ্যালায় কি কৈতে কি কৈতাছি, কৈতারুম না। তয় একটা কথা খেয়াল রাখবা, যারা সাহস কইরা নিজেরে নাস্তিক বৈলা প্রকাশ করছে, আমরাতো খালি তাগোরে কতল করছি। এরকম বহুত চুপা নাস্তিক আশেপাশে ঘুরঘুর করতাছে। আবার বজ্জাতগো যুক্তির ঠ্যালায় টলটলে ঈমানদাররা আমাদের সমাজ ছাইড়া চইলা যাইতাছে।

এইটারে কিন্তুক আল্লার নালত বৈলা চুপমাইরা থাইকো না। চোখে ধরা পড়া মাত্রই কতল কইরা দিবা। আর গণিমতের মাল বন্টনকালে ইনসাফের সহিত করবা। খোদায় ডাক দিলে একদিন আমারে চৈলা যাইতে হইবো। তখন তুমরা এসব বিষয়ে ঠিকমতো খেয়াল রাখবা।

৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কুফরী, শিরকীতো দূরে থাক, কোন বেদাতী কামও করতে দিবা না। " "হুজুর মিষ্টি আর শরবত আইসা পড়ছে"! - কথাটি শুনে পুরো ঘরের মধ্যে উৎসবের মোচ্ছব লাগলো। শীর্ষনেতা সবাইকে ধীর সুস্থ হয়ে বসতে বললেন। সর্বপ্রথম মিষ্টিটা আখন্দকে খাওয়াতে চান শীর্ষনেতা। কারণ র‌্যাংকিংয়ে আখন্দই শীর্ষে আছে।

কতলকৃত মুরতাদের ৩৪শতাংশের সওয়াব এখন আখন্দের পাঞ্জাবীর পকেটে। খুশি হয়ে আখন্দকে দাড়ি রং করা বাবদ আগামী এক মাসের খরচ দেয়ার ঘোষনা দিয়ে শীর্ষনেতা বিসমিল্লাহ পড়ে আখন্দের মুখে মিষ্টি তুলে দিলেন। ইসলাম ত্যাগকারী মুরতাদকে হত্যা করা হবে কেন? তিনশ্রেণীর ব্যক্তিকে হত্যা করা ইসলামে জায়েজ আছে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।