আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাস্তিকতার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রচারের মাধ্যমে প্রদীপের শেষ মুহুর্তে দপ করে জ্বলে ওঠার প্রচেষ্টা এবং এ প্রেক্ষিতে ব্লগ কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

আপনারা যারা শহুরে জীবনে বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তাঁদের হয়তো কেরোসিনের বাতির আচরণ সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা নেই। কিংবা একসময়ে ব্যবহার করলেও এখন সময়ের পরিক্রমায় ঐ বাতির আচরণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কিন্তু আমরা যারা একসময়ে গ্রামে ছিলাম বা এখনো যাই, যাদের সঙ্গে গ্রামজীবনের সম্পর্কটা অত্যন্ত নিবিড় তাঁদের কাছে কেরাসিনের বাতির আচরণ সম্পর্কে নতুনভাবে বলার কোন প্রয়োজন নেই। বাতিটার তেল যখন ফুরিয়ে আসে বা এর অস্তিত্ব যখন মুমূর্ষু পর্যায়ে চলে যায় তখন সে হঠাৎ অনেক আলো নিয়ে আওয়াজ সহকারে জ্বলে ওঠে। বাতিটির আচরণ সম্পর্কে যার পূর্ব ধারণা নেই, তিনি হয়তো এতে উৎকন্ঠিত হবেন না।

কিন্তু যারা কোরোসিনের বাতির আচরণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাঁরা নিশ্চিতভাবেই জানবেন যে এই অবস্থায় এটিই বাতিটির শেষ আলো। ঠিক এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমাদের পূর্বজরা একটি প্রবচনের সৃষ্টি করেছেন যা লেখাটার শিরোনামে উল্লেখ আছে। বস্তুত এ প্রবচনের দ্বারা আমাদের পূর্বজরা এটাই বুঝাতে চেয়েছেন ব্যক্তির, সমাজ বা প্রতিষ্ঠানের অতিমাত্রায় বা মাত্রাতিরিক্ত মাতামাতি তাঁর বা তাদের আসন্ন সমাপ্তিরই ইঙ্গিত দেয়। উচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন। শুধু বাতিলই করেননি এই পঞ্চম সংশোধনী সংযোজনে যারা নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছেন তাঁদের শাস্তিরও সুপারিশ করেছেন।

সরকার ইতোমধ্যেই আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও অন্যান্য খুটিনাটি দিকসমূহ পর্যালোচনার জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করেছে। সার্বিক অবস্থায় এটা পরিস্কার যে, আনুষ্ঠানীকভাবে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে বর্তমানে প্রচলিত সংবিধানে অনেক মৌলিক পরিবর্তন আসবে। তবে যে পরিবর্তনটির জন্য আমাদের সুধীসমাজ এতোদিন অপেক্ষা করে আছেন অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ- তা এই পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হলে কার্যকর হবে। সংগত কারণেই প্রগতিশীল চিন্তা করেন এমন সম্প্রদায় তথা দেশের অধিকাংশ মানুষ এতে খুশি।

তবে একেবারে যে, এর বিপরীত চিন্তা নেই তা বলা যায়না। ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করেন, ধর্মকে আশ্রয় করে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চান এমন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীটি এর বিরোধীতা করবেন বা এ প্রচেষ্টাটি থামিয়ে দিতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। খুশির খবর হচ্ছে যে, সরকার এদের বিষয়ে এবার অত্যন্ত সজাগ। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সরকার যে ভুল করেছিল, এবার তাঁরা তা করবেনা তা তাঁদের প্রাথমিক আচরণেই বুঝা যাচ্ছে। সরকার প্রাথমিক অবস্থায়ই এ সমস্ত হায়েনাদের টুটি চেপে ধরার সমস্ত আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে।

দেশের প্রগতিশীল ও বুদ্ধিজীবী সমাজও সরকারের এবারকার আচরণে তুষ্ট। গুটিকয়েক পত্রিকা আর বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিক্রিয়াশীল মানুষ ছাড়া তাঁদের পক্ষে এ অবধি কেউ কথা বলেননি। ভবিষ্যতেও বলবেননা, এমনটাই আশা করা যায়। অর্থাৎ ঘরে-বাইরে সবখানে এই ধর্মভিত্তিক ব্যবাসায়ী শ্রেণীটি বিপর্যস্ত। সোজাবাংলায় বা খোলাভাবে বললে বলা যায়, পুরা দৌড়ের উপরে।

এখন দৌড়াতে দৌড়াতে কোন কিনারা না পেয়ে আশ্রয় নিচ্ছে ব্লগ বা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেওয়ার্কগুলোতে, চালিয়ে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রচার। আপনি যদি আজকে ব্লগের পাতাগুলো মনোযোগের সাথে পড়েন তাহলে এই সংঘবদ্ধ প্রচারের কিছুটা নমুনা পাবেন। আর এই প্রচার কাজে তাঁরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন নাস্তিকতার বিরোধীতাকে। নাস্তিকতার বিরোধীতা করতে গিয়ে তাঁরা আদৌতে সবখানে বিতারিত ধর্মব্যবসা এই ব্লগে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন এবং ব্লগকে অবলম্বন করে একটি প্রচার মাধ্যম গড়ে তুলতে চাইছে। দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা আশা করতে পারি ব্লগ কর্তৃপক্ষ এ ধরণের হীন উদ্দেশ্যের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না তথা এদেরকে সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধ করবেন।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব শুধু সরকারের একার নয়। এ দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম, প্রগতিশীল শ্রেণী, ছাত্র-শিক্ষক, সিভিল সার্ভেন্ট সহ বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহুল জনপ্রিয় সোশাল নেওয়ার্ক সাইটগুলোর উপরও বর্তায়। সে হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সন্মান দেখানো এবং তাঁর নির্দেশনাকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব জনপ্রিয় ব্লগসাইটগুলোরও। সে প্রেক্ষিত বিবেচনায় ধর্মান্ধ শ্রেণীটি যাতে ব্লগসাইটগুলোকে মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করে, নাস্তিকতার বিরোধীতার নামে ধর্মভিত্তিক কোন সংঘবদ্ধ প্রচার না চালাতে তার প্রতি খেয়াল রাখা ব্লগ সাইটগুলোর আবশ্যিক দায়িত্ব। আমরা আশা করতে পারি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সন্মান জানানোর স্বার্থেই তাঁরা তা করবেন।

পাদটিকাঃ ধর্মভিত্তিক একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী বর্তমান ক্ষমতাসীন দলেও আছেন। গত নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য সরকার এদের সঙ্গে আতাত করেছিল। আশা করব নৈতিকতার স্বার্থে সরকার এ গোষ্ঠীকে তাদের জোট হতে শুধু বিতারণই করবেনা বরং অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নিষিদ্ধও করবেন। সরকারের যে কোন দ্বৈতাচরণ এ মুহুর্তে তাদের মহৎ উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি নিঃসেন্দহে ব্যাহতও করবে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.