আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আস্তিকতা ও নাস্তিকতার মেরুকরণ

কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস

খাঁটি আস্তিক ও খাঁটি নাস্তিকদের নিয়ে আজকাল কথা হচ্ছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে দুই দলেরই অতি-উৎসাহীদের দৌরাত্ন বেশ হাস্যরসের যোগান দিচ্ছে । কিন্তু সত্যিকার অর্থে ১০০ ভাগ আস্তিক বা ১০০ ভাগ নাস্তিক হওয়ার যৌক্তিকতা এবং অসুবিধাগুলো নিয়ে আমার এ আলোচনা প্রফেসর ডকিন্স (http://en.wikipedia.org/wiki/Richard_Dawkins) আস্তিকতা এবং নাস্তিকতাকে দুই মেরু ধরে নিয়ে মোট সাতটি স্তরে বিভক্ত করেছেন এই দুই বিশ্বাসের মাঝের মানুষকে । আমি যদিও এখানে অতটা সূক্ষ বিন্যাসে যাবো না তবু জ্ঞানপিপাসু পাঠকের জন্য বিষয়টি উল্লেখ করলাম । এখন আসা যাক আস্তিকতা কি এই প্রশ্নে । এই আলোচনায় আমি আস্তিকতা শব্দটিকে ব্যবহার করব ইংরেজি theist শব্দের অর্থরুপে ।

এটা বলে নেওয়া দরকার এইজন্য যে ইংরেজি আরো একটি শব্দ deist এর বাংলাও অনেক ক্ষেত্রে আস্তিক বলে ধরা হয় । theist হচ্ছে সেই আস্তিক যে মনে করে, বিশ্বের এক/একাধিক সৃষ্টিকর্তা আছেন, যে বা যারা মানুষের এবং প্রকৃতির উপর সময়ে সময়ে হস্তক্ষেপ করে থাকেন । deist এর বিশ্বাস হচ্ছে স্রষ্টা/স্রষ্টাগণ আছেন ঠিকাছে ,কিন্তু তারা মানুষ বা প্রকৃতির উপর কোনো হস্তক্ষেপ করেন না । এই আলোচনায় আমি যেহেতু ব্যাপকভাবে স্রষ্টার অস্তিত্বের পাত্র-নিরপেক্ষ প্রমাণ সন্ক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব সেহেতু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার আলোচনা হয়ত deist দের বিষয়কেও কভার করবে, কিন্তু সেটিকে কাকতাল মাত্র ধরে নিয়ে আমার মূল আলোচনা theist আস্তিক এবং এদের কাউন্টারপার্ট নাস্তিকদের নিয়ে । পরবর্তী আলোচনায় লেখার সুবিধার্থে, আমি একে একে উল্লেখ না করে, স্রষ্টা বলতে স্রষ্টা/স্রষ্টাগণ বুঝাবো ।

বিশ্বাস সংজ্ঞাগতভাবেই অনিশ্চয়তাকে ধারণ করে । যে জিনিস ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের মাধ্যমে যাচাই করা যায় তা বিশ্বাস করতে হয় না । সূর্য আছে এটা বিশ্বাস নয়, জ্ঞান । কিন্তু জ্বিন আছে , এটা বিশ্বাস । বিশ্বাস যেহেতু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের দিক থেকে ভিত্তিহীন, সেহেতু বিশ্বাসে দরকার হয় প্রতিনিয়ত মেরামত ।

কারণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান সাধারণভাবে বাইনারি প্রকৃতির হয়ে থাকে, অর্থাৎ মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে যে জিনিস দেখা যায়নি তা নেই, যে আওয়াজ শোনা যায়নি সে আওয়াজ কখোনই হয়নি বলে ধরে নেওয়া । এটা মানুষের প্রাণীগত উত্তরাধিকার । মানুষ ইন্দ্রিয়ের এই বাইনারি স্বভাবকে অতিক্রম করেছে , পরোক্ষ প্রমাণ ব্যবস্থা দিয়ে । কিন্তু সেই পরোক্ষ প্রমাণ ব্যবস্থাও শেষ পর্যন্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার উপর নির্ভরশীল । কারণ পরোক্ষ প্রমাণেও সর্বশেষ ফলাফল বিবেচনা, যাচাই করতে হয় ইন্দ্রিয় দিয়েই ।

আস্তিক বা বিশ্বাসীরা যদিও প্রত্যক্ষ্ প্রমাণে তাদের অক্ষমতাকে মোটামুটি অকপটে স্বীকার নেন, কিন্তু হাল আমলে একটি নতুন ধারার আধুনিক আস্তিক শ্রেনীর জন্ম হয়েছে যারা তাদের বিশ্বাসের পক্ষে পরোক্ষ প্রমাণ আছে বলে দাবী করে থাকেন । প্রত্যক্ষ পরোক্ষ কোনো প্রকার প্রমাণের তোয়াক্কা না করে যারা আস্তিক বা বিশ্বাসী, বলাই বাহুল্য, তাদের এ বিশ্বাসকে অনবরত মেরামত করে যেতে হয় । এই মেরামত প্রক্রিয়ায় তারা তাদের বিশ্বাসকে কখনোই ১০০ ভাগ সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না । কারণ ১০০ ভাগ সত্য বলে একবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে , সেই বিশ্বাসের স্বপক্ষে প্রমাণ পেয়ে যাওয়া । যা এই শ্রেণীর সংজ্ঞারই বিরোধী এরপর আসে যারা পরোক্ষ প্রমাণের মাধ্যমে তাদের আস্তিকতাকে যুক্তিসিদ্ধ করতে চায় তাদের কথা ।

এটি একটি ভ্রান্তিবিলাস । পরোক্ষ প্রমাণ ব্যবস্থাটির স্বরুপ খেয়াল করে দেখলেই এই ভ্রান্তির দিকগুলো পরিস্কার হবে । পরোক্ষ প্রমাণের একটি চমৎকার ও ধ্রুপদী উদাহরণ হচ্ছে, জন্তু বা মানুষের পায়ের চিহ্ন দেখে গতিপথ আন্দাজ করা । যেমন বাঘের পদচিহ্ন দেখে বিপদ অনুমান করা । কিন্তু এইক্ষেত্রে একটি ব্যপার অতি-উৎসাহী পরোক্ষ-প্রমাণিকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় ।

সেটা হল, বাঘের পদচিহ্নকে চিনতে হলে প্রথমে বাঘ চিনতে হয়, এবং বাঘের পদচিহ্ন কেমন হয় সেটা সম্পর্কে প্রমাণিত অভিজ্ঞতা থাকতে হয় । অর্থাৎ জীবনে কমপক্ষে একবার বাঘ হেঁটে যাওয়ার সাথে সাথে কেমন পদচিহ্ন হল তা নিশ্চিতভাবে দেখার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অথবা বাঘের পদচিহ্ন বলে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত কোনো ছবি বা রেপ্লিকা দেখা থাকতে হয় । মোটকথা , পরোক্ষ প্রমাণের ভিত্তি হতে হয় পূর্বে একই ঘটনার একটি নিশ্চিত অভিজ্ঞতা, তথা একটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ । এখন যেসব অতি-উৎসাহী আস্তিক বলে থাকেন, কোরানে ১৪০০ বছর আগে পরম জ্ঞানের কথা বলা আছে বা কোরাণে সংখ্যাভিত্তিক মিরাকল্‌ আছে , অতএব কোরাণ স্রষ্টার বাণী না হয়ে যায় না ।

স্রষ্টার বাণীর যে এইজাতীয় বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় , সেটা আপনি জানলেন কিভাবে । আপনে কি এরআগে নিশ্চিতভাবে দেখেছেন ঈশ্বরকে বাণী দিতে । তখনকার বাণীর এই বৈশিষ্ট্গুলা ছিল, এখনকার বাণীতেও যেহেতু একই বৈশিষ্টগুলা আছে অতএব.... সুতরাং দেখা যাচ্ছে আস্তিকের বিশ্বাসের স্বপক্ষে যেহেতু কোনো প্রমাণ নাই, সেহেতু সে বিশ্বাস কখনোই জ্ঞাণ হয়ে উঠতে পারবে না । অর্থাৎ তার বিশ্বাস কখনোই ১০০ ভাগ নিশ্চিত হবে না । অনিশ্চিত বিশ্বাস নিজ মনে পোষণ করা যায়, কিন্তু অন্যের কাছে প্রচারের কোনো যৌক্তিকতা থাকে না ।

অর্থাৎ আস্তিক কখনোই আস্তিকতার মেরুতে চলে যেতে পারে না । উপরোক্ত যুক্তিগুলো হুবহু একইভাবে প্রযোজ্য হয়, যখন নাস্তিক ১০০ ভাগ নিশ্চিতি দাবী করে । অর্থাৎ যখন সে বলতে চায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব কোনোভাবেই সম্ভব নয় । কারণ হিসাবে দেখানো যায়, এই মহাবিশ্বের সীমানা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা । আমরা যতটুকু জায়গা জানি ততটুকুর ভিতারে কোনো একটি জিনিসের থাকা বা না থাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া যায়, কিন্তু যে জায়গা চিনি না সেখানে একটি জিনিসের না থাকা নিয়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া ও যৌক্তিক বোকামী ছাড়া আর কিছু নয় ।

আরেকটি ব্যাপার, স্রষ্টা বা ঈশ্বর যেহেতু সংজ্ঞানুসারেই মানুষের ক্ষমতাকে অতিক্রম করে যায়, সেহেতু, মানুষের পক্ষে তার অনস্তিত্বকে প্রমাণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় । তাই নাস্তিকের ১০০ ভাগ নিশ্চয়তাও বোকামি । তবে একটি ব্যাপারে প্রচলিত ধর্মগুলোতে বিশ্বাসীদের দুর্বলতা থেকে যায় । সেটা হচ্ছে মানুষের বোধগম্যতার উর্ধে যে জিনিস, তার পক্ষে মানুষর বোধগম্যতাকে প্রতারণা করাও সম্ভব । ঈশ্বর যদি মানুষের বোধগম্যতার উর্ধে হন, শয়তানওতো মানুষের বোধগম্যতার উর্ধে ।

তাহলে আপনার পরিশীলিত বিশ্বাসগুলো যে শয়তানের কারসাজিও হতে পারে সে সম্ভাবনার খাঁড়া কিন্তু সবসময়ই ঝুলে থাকবে মাথার উপর ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.