আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুরত্ব মাত্র ৩৫ কিমি, ঘুরে এলাম শতাধিক বছর পেছন থেকে - শেষ পর্ব



আগের পর্ব : Click This Link ৫. প্রায় সোয়া এক ঘন্টা পর এই আধ ঘন্টা শেষ হল। আমরা নেমেই যাকে তাকে জিজ্ঞাসা করে দ্রুতগামী সিএনজিতে চড়া দামে উঠলাম। সিএনজি চালক লাইটের কথা চিন্তা করে বলল, চিন্তা কইরেননা এমন টান দেব। পনের মিনিটে স্পটে। অবাক করা বিষয়।

সে পনের মিনিটেই পৌঁছাল। কিন্তু এটা সেই জায়গা না। এখানে কোনও বৌদ্ধ পদ্মমন্দির তো নেই, এমনকি কোনও পদ্ম ফুলও নেই। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম এটা কই নিয়ে এলেন? ড্রাইভার এমন একটা ভাব করলেন, কই মানে? বললাম, এটা তো না। সে আকাশ থেকে না পড়লেও এভারেস্ট থেকে পড়ল।

তকে আবার বোঝালাম। বলল, ও! ওইটা? ওইটা তো আরও চার কিলোমিটার। আমরা আবার সূর্যের দিকে তাকিয়ে দৌড়। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে এক জায়গায় পৌঁছলাম। ওয়ারী বটেশ্বর।

একটা জাদুঘর আছে। জাদুঘরে ঢুকে কিছু ছবি নিয়ে নিলাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম একজন শিক্ষক আসবেন। হাবীবুল্লাহ পাঠান। তিনি এর রক্ষণাবেণ করেন।

তিনি পদ্ম বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে নিয়ে যাবেন। এক সময় শুভ্র চুলের এক শিক্ষক এলেন। তাকে দেখে যারপর নাই আনন্দে বিগলীত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, স্যার সম্প্রতি সন্ধান মেলা পদ্ম মন্দিরটা কোথায়? তিনি কোনও রূপ এক্সপ্রেশন ছাড়া জবাব দিলেন, ওটা তো এখান থেকে চার কিমি দুর। শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। মনে হয় দুই দুইটা আকাশ।

আকাশের ওপারের আকাশও। ড্রাইভারকে বললাম, ভাই স্যারের কাছে জেনে চলেন। শিক্ষক মহোদয় স্নেহাশিষ ছাত্রের মতো ড্রাইবারকে লোকেশন জানালেন। আমরা আবার দৌড়। একবার ঘড়ি দেখি, আরেকবার সূর্য।

একবার সূর্য, আবার ঘড়ি। মনে মনে সূর্যকে জোড় রিকোয়েস্ট, ভাই আরেকটু। এইত এসে পড়েছি। পরে যাও। একদিন একটু দেরীতে অস্ত গেলে ক্ষতি হবেনা।

সূর্যের পাশাপশি সিএনজি ড্রাইভারকেও রিকোয়েস্টও কম না, ভাই একটু জোড়ে চালান। আরেকটু জোরে। অবশেষে পৌছলাম। ৬. মুগ্ধ নয়ণে দেখার কিছু না থাকলেও ধ্বংসাবশেষ দেখে উপলদ্ধি করলাম এখানকার মন্দিরের অবস্থান। জানলাম, ১০.৬ মিটার গুন ১০.৬ মিটার বর্গাকার বৌদ্ধ মন্দিরটির দেয়াল ৮০ সেমি প্রশস্ত এবং ভিত্তিমূল এক মিটার।

কাঁদামাটির গাথুনির দেয়াল তিন ধাপে প্রপ্তি। মূল দেয়ালের উত্তর, দণি ও পশ্চিমে ৭০ সেমি দুরুত্বে সমান্তরাল ৭০ সেমি প্রশস্ত দেয়াল রয়েছে। মূল দেয়ালের চারদিকে ইট বিছানো ৭০ মি প্রশস্ত প্রদণি পথ রয়েছে। তবে পূর্ব দিকে মূল দেয়াল ও বর্হিদেয়ালের দুরুত্বে ৩ দশমিক ৫ মি। পূর্বদিকে প্রদণি পথ ও বারান্দা রয়েছে।

আট পাপড়ি যুক্ত একটি পদ্মও পাওয়া গেছে যার উপস্থিতিই মন্দিরটিকে পদ্মমন্দির বা লোটাস টেম্পলের মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধ ধর্মে পদ্ম খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মের আটটি শুভ লক্ষণ প্রতীকের মধ্যে পদ্ম অন্যতম। আমরা মাটি নেড়ে চেড়ে দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। তার চেয়ে মুগ্ধ হলাম এলাকাবাসীর সচেতনতা দেখে।

আমরা বাঁশের তৈরি বেড়া ডিঙ্গিয়ে যখন মন্দিরের সীমানায় প্রবেশ করলাম কোত্থেকে এক পিচ্ছি ছেলে হই হই করে আসল, ওই এইখানে যাওয়া নিষেধ। আমরা তাকে বোঝালাম। কাজে এসেছি। সে বুঝল। অতঃপর কিছু কাঙ্খিত ছবি নিয়ে ফেরত যাত্রায় অবতীর্ন হলাম।

যেতে এতক্ষণের মুগ্ধতা কটিয়ে কিছুটা রাগও হল। কোন রাজা যে এই মন্দির বানিয়েছে? যদি বানালোই রাস্তায় পাশে বানালনা কেন? এত ভেতরে বানানোর কী দরকার ছিল? সিএনসি দিয়েই আসতে কত সময় লেগে যায়। ঘোড়ার গাড়িতে আসতে তো তার কম সময় লাগতো না। বোকা রাজা কোথাকার! ছবি : ১. ওয়ারী বটেশ্বর জাদুঘরের ভেতরের প্রাচীন তৈজসপত্র ২. মন্দিরের ধ্বংসাবেশষ ৩. সচেতন পিচ্ছি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।