আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুরত্ব মাত্র ৩৫ কিমি, ঘুরে এলাম শতাধিক বছর পেছন থেকে



খুব কাছে বলেই খুব দ্বিধায় আছি। নরসিংদী যাওয়াটা কী ভ্রমণের আওতায় পড়ে? নরসিংদী ঘুরে এসে কিছু লিখলে কী তা ভ্রমণ কাহিনী বলা যাবে? এইসব ব্যাকারণগত দুশ্চিন্তার কারণে নরসিংদী ঘুরে আসা নিয়ে কিছু লেখা হয়নি। অবশেষে একটি ভ্রমণকে এবং তার কাহিনীকে অপমৃত্যর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অবশেষে সেই কাহিনী লিখতে বসলাম। ২. কোনও একদিন সকালে পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম নরসিংদীর ওয়ারী বটেশ্বরের একশ বছর পূর্বের ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বৌদ্ধ পদ্মমন্দিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভাবলাম এত কাছের পুরাকীর্তি, না দেখলেই নয়।

তাই এক ভরদুপুরে নরসিংদীর দিকে রওনা হলাম পূর্বজীবনে মাত্র একবার নরসিংদী যাবার অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে। ৩. ঢাকা থেকে নরসিংদী যাবার বাহন অনেক। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসকেই বেছে নিতে হল। এক ধরণের প্রশান্তি নিয়ে টিকেট কেটে উঠতেই ধাক্কা খেলাম। মনে হল, কোনও গুহায় ঢুকলাম।

চিন্তা করতে লাগলাম এটাও কোনও প্রত্মতাত্মিক বাস নাকি? সুপারভাইজার জিজ্ঞাসাও করে বসলাম, ভাই এটা এমন গুহার মত কেন? প্রত্মতাত্মিক বাস নাকি? সে আমার রসিকতা কী বুঝল কে জানে? অদ্ভুতভাবে নিজের মুখায়বব সে এমন করে ফেলল যে দেখে মনে হল, এ নিজেই এক পুরাকীর্তি। যা হোক, পুরাকীর্তি নিজেই নেমে গেল। আমরা এক কীর্তিমান চালকের পেছনে রওনা হলাম নরসিংদীর উদ্দেশ্যে। মজার বিষয় ড্রাইভার মহোদয় নিজের সিটের পেছনে বেশ বড় অরে লিখে রেখেছেন ‌'চালক'। শঙ্কায় পড়ে গেলাম নরসিংদীর যাত্রী সাধারণদের নিয়ে।

ঘটনা কি? তারা সিট না পেলে কী চালকের সিটেও বসে পড়ে নাকি? নাহলে কেন চালকের এই সতর্কীকরণ ব্যবস্থা? যাই হোক, আমাদের সামনে কেউ সিট না পেয়ে সেখানে বসল না। চালক নিজের জায়গাতেই বসে আমাদের নিয়ে চলল নরসিংদীর দিকে। ওয়ারী বটেশ্বর আর শতাধিক বছর আগের সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের দিকে। ৪. বাস থামলো নরসিংদী সদরে। আরেকটা ভাল কথা উল্লেখ করা হয়নি আমি এবং আমার ভাই আমরা অনেকটা না জেনেই এখানে এসেছি।

কারণ কাছের শহর, জিজ্ঞেস করে করে যাওয়া যাবে ভেবে নরসিংদীতে এসে মোটামুটি হতভম্ব। কেউ চেনেনা। না কোনও মানুষ। না কোনও গাড়ীর ড্রাইভার। অনেকে অন্য এক নাম বলে চেনার ভাব নেয়।

ও ওইটা? ওইটা তো অনেক দুর। আবার কেউ বলে, ওইটাতো সামনেই। বিশ টাকা ভাড়া নিব। যা হোক সব শুনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম কেউ আসলে জায়গাটা চেনেনা। কি আর করা? চিন্তা করলাম নরসিংদী ভ্রমনকেই সার্থক করে যেতে হবে।

তাই আশেপাশে কিছু না পেয়ে নরসিংদী মোড়ের স্বাধীনতা ভাস্কর্যেরই কিছু ছবি তুলে নিলাম। হঠাৎ একজন দিক জানালো। জানালো কিভাবে যেতে পারি সেখানে। আবার আমাদের পেছনে যেতে হবে। যেতে হবে ময়মনসিং রোডে।

মরজাল নামে একটা স্থান আছে। সেখান থেকে ভেতরে গেলেই ওয়ারী বটেশ্বর। আমরা আবার দৌড়। কারণ সূর্য ডুবে যাচ্ছে, লাইট চলে যাচ্ছে। এমন একটা জায়গায় এসে যদি ছবি না পাই তাহলে মিশনই ব্যার্থ।

ঢাকা সিলেটের মূল সড়কে এসে ময়মনসিংগামী একটা বাসে চেপে বসলাম। একবার সূর্যের দিকে তাকাই, আবার তাকাই বাসের ড্রাইভার আর হেলপারের দিকে। সূর্যের কাছে যেহেতু প্রশ্ন করা যায়না আপনি কতক্ষণ আছেন? তাই হেলপারকেই জিজ্ঞাসা করলাম ভাই, কতক্ষণ লাগবে? সে জানালো এইতো আধাঘন্টা। এরপর থেকে যতবারই জিজ্ঞাসা করি, কতণ? তার একই কথা। ভদ্রলোকের এক কথা টাইপ উত্তর, আধঘন্টা।

এই আধ ঘন্টা শেষ হবে কখন কে জানে? আমরা চলছিই। (চলবে) ছবি : ১. চালক লেখা চালকের সেই সিট ২. নরসিংদী সদরের স্বাধীনতা ভাস্কর্য, যেখানে ভুল করে নেমে গিয়েছিলাম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।