আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেলসন ম্যান্ডেলা - বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রামী - ১ম পর্ব

জাদুনগরের কড়চা
গত কয়েকদিন ধরে বাংলা উইকিপিডিয়ার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনী অনুবাদ করছি। এই অনুবাদের প্রথম অংশটি নিচে তুলে দিলাম। নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (জুলাই ১৮, ১৯১৮) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৯৪ হতে ১৯৯৯ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ম্যান্ডেলা আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৬২ সালে তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে এবং অন্তর্ঘাত সহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারাবাস করেন, যার অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপের কারাগারে। ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন। এর পর তিনি তাঁর দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তাঁর গোত্রের দেয়া মাদিবা নামেও পরিচিত। গত চার দশকে ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার। ১ জীবনের প্রাথমিকভাগ নেলসন ম্যান্ডেলা থেম্বু রাজবংশের ক্যাডেট শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। থেম্বু রাজবংশ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের ট্রান্সকেই অঞ্চলের শাসক।

[২] তাঁর জন্ম হয় ট্রান্সকেই এর রাজধানী উমতাতার নিকটবর্তী ম্‌ভেজো গ্রামে। [২] তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন নগুবেংচুকা (মৃত্যু ১৮৩২), যিনি ছিলেন থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর ইনকোসি এনখুলু অর্থাৎ রাজা। [৩] এই রাজার পুত্র ম্যান্ডেলা হলেন নেলসন ম্যান্ডেলার পিতামহ। নেলসনের বংশগত নাম ম্যান্ডেলাই এই পিতামহ থেকেই পাওয়া। তবে নেলসনের পিতামহী ইক্সহিবা গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁর শাখার কেউ থেম্বু রাজবংশে আরোহন করার অধিকার রাখেন না [৪]।

ম্যান্ডেলার বাবা গাদলা হেনরি মপাকানইসা ম্‌ভেজো গ্রামের মোড়ল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [৫] তবে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরাগভাজন হবার পরে তারা ম্যান্ডেলার পিতাকে পদচ্যুত করে। তিনি তখন তার পরিবারসহ কুনু গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তবে তা সত্ত্বেও ম্‌পাকানইসা ইনকোসিদের প্রিভি কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন এবং থেম্বুর শাসনকর্তা হিসাবে জোঙ্গিন্তাবা দালিন্দ্যেবোকে নির্বাচিত করায় ভূমিকা রাখেন। ম্‌পাকানইসার মৃত্যুর পর দালিন্দ্যেবো ম্যান্ডেলাকে পোষ্যপূত্র হিসাবে গ্রহণ করেন।

[৬] ম্যান্ডেলার পিতা ম্‌পাকানইসার ছিলো চারজন স্ত্রী, ও সর্বমোট ১৩টি সন্তান (৪ পুত্র, ৯ কন্যা)। [৬] ম্যান্ডেলার মা ছিলেন ম্‌পাকানইসার ৩য় স্ত্রী নোসেকেনি ফ্যানি। ফ্যানি ছিলেন ম্‌পেম্ভু হোসা গোত্রের ন্‌কেদামার কন্যা। নানার বাড়িতেই ম্যান্ডেলার শৈশব কাটে। [৭] তাঁর ডাক নাম "রোলিহ্লাহ্লা"র অর্থ হলো "গাছের ডাল ভাঙে যে", অর্থাৎ দুষ্ট ছেলে।

[৮][৯] ম্যান্ডেলা তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর শিক্ষিকা ম্‌দিঙ্গানে তাঁর ইংরেজি নাম রাখেন "নেলসন"। [১০] ম্যান্ডেলার বয়স যখন ৯ বছর, তখন তাঁর পিতা যক্ষা রোগে মারা যান। শাসক জোঙ্গিন্তাবা তখন তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন। [৬] ম্যান্ডেলা রাজপ্রাসাদের কাছের একটি মিশনারী স্কুলে পড়াশোনা করেন।

থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর গোত্রে বরণ করে নেয়া হয়। এর পর তিনি ক্লার্কবারি বোর্ডিং ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করেন। [১১] সেখানে ম্যান্ডেলা ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাস করেন। [১১] ১৯৩৭ সালে ম্যান্ডেলা প্রিভি কাউন্সিলে তাঁর পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। এরপর তিনি ফোর্ট বোফোর্ট শহরের মিশনারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হেল্ডটাউন স্কুলে ভর্তি হন।

এখানেই থেম্বু রাজবংশের ছাত্ররা পড়াশোনা করতো। [১২] এই স্কুলে পড়ার সময়েই ১৯ বছর বয়সে ম্যান্ডেলা দৌড় ও মুষ্টিযুদ্ধের মতো খেলাধুলায় নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন। [৭] স্কুল থেকে পাস করার পর ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অফ আর্টস কোর্সে ভর্তি হন। এখানেই অলিভার টাম্বোর সাথে তাঁর পরিচয় হয়। টাম্বো আর ম্যান্ডেলা সারাজীবন ধরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

ম্যান্ডেলার আরেক বন্ধু ছিলেন ট্রান্সকেই এর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী কাইজার (কে ডি) মাটানজিমা [৪]। এই বন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই পরবর্তীতে ম্যান্ডেলা বান্টুস্থানের রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণে জড়িত হন। তবে এসব নীতিমালার ক্ষেত্রে ম্যান্ডেলা ও মাটানজিমার মতবিরোধ হয়। [৭] বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষের শেষে ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের ডাকা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। এর ফলে তাঁকে ফোর্ট হেয়ার থেকে চলে যেতে বলা হয়।

শর্ত দেয়া হয়, কেবল ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সদস্য হতে পারলেই তিনি সেখানে ফেরত আসতে পারবেন। [১৩] জীবনের পরবর্তী সময়ে কারাগারে বন্দী থাকার সময়ে ম্যান্ডেলা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অধীনে আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ম্যান্ডেলা ফোর্ট হেয়ার ছাড়ার অল্প পরেই জানতে পারেন, জোঙ্গিন্তাবা তাঁর সন্তান জাস্টিস (যুবরাজ ও সিংহাসনের উত্তরাধিকারী)এবং ম্যান্ডেলার বিয়ে ঠিক করার ঘোষণা দিয়েছেন। ম্যান্ডেলা ও জাস্টিস এভাবে বিয়ে করতে রাজি ছিলেন না। তাই তাঁরা দুজনে জোহানেসবার্গে চলে যান।

[১৪] সেখানে যাবার পর ম্যান্ডেলা শুরুতে একটি খনিতে প্রহরী হিসাবে কাজ নেন। [১৫] তবে অল্পদিন পরেই খনির মালিক জেনে যান যে, ম্যান্ডেলা বিয়ে এড়াতে জোঙ্গিন্তাবার কাছ থেকে পালিয়ে এসেছেন। এটা জানার পর খনির কর্তৃপক্ষ ম্যান্ডেলাকে ছাঁটাই করেন। পরবর্তীতে ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের আইনী প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেলস্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসাবে যোগ দেন। ম্যান্ডেলার বন্ধু ও শুভাকাঙক্ষী ওয়াল্টার সিসুলু এই চাকুরি পেতে ম্যান্ডেলাকে সহায়তা করেন।

[১৫] এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময়ে ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আফ্রিকার দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অধীনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরে ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অফ উইটওয়াটার্সরান্ডে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। এখানে তাঁর সাথে জো স্লোভো, হ্যারি শোয়ার্জ এবং রুথ ফার্স্টের পরিচয় হয়। পরবর্তিতে এই বন্ধুরা বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী হিসাবে অংশ নেন। এসময় ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের উত্তরের দিকের শহর আলেক্সান্ড্রিয়াতে বাস করতেন।

[১৬] ২ রাজনৈতিক জীবনের শুরু দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৪৮ এর নির্বাচনে আফ্রিকানারদের দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিলো, এবং বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার পক্ষপাতি ছিলো। [১৭] ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৫ সালের জনগণের সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এই সম্মেলনে মুক্তি সনদ প্রণয়ন করা হয়, যা ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি। [১৮][১৯] এই সময় ম্যান্ডেলা ও তাঁর বন্ধু আইনজীবী অলিভার টাম্বো মিলে ম্যান্ডেলা অ্যান্ড টাম্বো নামের আইনী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। এই প্রতিষ্ঠানটি উকিল নিয়োগ করার মতো টাকা নেই, এমন দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের স্বল্প মূল্যে আইনগত সাহায্য প্রদান করতো। [২০] ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে তিনি মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিলো।

[২১][২২] ম্যান্ডেলাও প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ই ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলা সহ ১৫০ জন বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামী নির্দোষ প্রমাণিত হন। [২৩] ৩ বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রাম ১৯৬১ সালে ম্যান্ডেলা এএনসির সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ে (অর্থাৎ "দেশের বল্লম", সংক্ষিপ্ত নাম MK) এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

[২৫] তিনি বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলা পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাবার জন্যও ম্যান্ডেলা পরিকল্পনা করেন। [২৬] এছাড়া ম্যান্ডেলা বিদেশে এমকে-র জন্য অর্থ জোগাড় ও সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ শুরু করেন। [২৬] ম্যান্ডেলার সহকর্মী উলফি কাদেশ ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র আন্দোলনের ব্যাপারে বলেন, "When we knew that we [sic] going to start on 16 December 1961, to blast the symbolic places of apartheid, like pass offices, native magistrates courts, and things like that ... post offices and ... the government offices. But we were to do it in such a way that nobody would be hurt, nobody would get killed."[২৭] উলফির ব্যাপারে ম্যান্ডেলা বলেন, "His knowledge of warfare and his first hand battle experience were extremely helpful to me."[৯] ম্যান্ডেলা নিজে তাঁর এই সশস্ত্র আন্দোলনকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিতান্তই শেষ চেষ্টা বলে অভিহিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন সফল হবে না বলে তিনি উপলব্ধি করেন এবং এ জন্যই সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নেন।

[৯][২৮] পরবর্তীতে ১৯৮০র দশকে এমকে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। এতে অনেক বেসামরিক লোক হতাহত হন। [২৬] ম্যান্ডেলা পরে স্বীকার করেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে গিয়ে এএনসি অনেক সময় মানবাধিকার লংঘন করেছে। বর্ণবাদের অবসানের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (সত্য ও আপোষ কমিশন) এর রিপোর্ট থেকে এএনসির অনেক নেতা এই বিষয়ের তথ্য অপসারণ করতে চেয়েছিলো -- ম্যান্ডেলা এর তীব্র সমালোচনা করেন। [২৯] ২০০৮ এর জুলাই পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ও এএনসি কর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা থেকে নিষিদ্ধ ছিলো।

কেবল মাত্র নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে তাঁদের আসার অনুমতি ছিলো। এর কারণ ছিলো ম্যান্ডেলার ষাটের দশকের সশস্ত্র আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন সরকার ম্যান্ডেলা ও এএনসিকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করেছিলো। ২০০৮ এর জুলাইতে এসেই কেবল ম্যান্ডেলাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারে প্রণীত সন্ত্রাসবাদীদের তালিকা হতে সরিয়ে নেয়া হয়। [৩০][৩১] ৪ গ্রেপ্তার ও রিভোনিয়ার মামলা প্রায় ১৭ মাস ধরে ফেরারি থাকার পর ১৯৬২ সালের ৫ই আগস্ট ম্যান্ডেলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জোহানেসবার্গের দূর্গে আটক রাখা হয়।

[৩২] মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ম্যান্ডেলার গতিবিধি ও ছদ্মবেশ সম্পর্কে দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা পুলিশকে জানিয়ে দেয়, ফলে ম্যান্ডেলা ধরা পড়েন। [৩৩][৩৪][৩৫] তিন দিন পরে তাঁকে ১৯৬১ সালে শ্রমিক ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেয়া এবং বেআইনীভাবে দেশের বাইরে যাবার অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৯৬২ সালের ২৫শে অক্টোবর ম্যান্ডেলাকে এই দুই অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর দুই বছর পর ১৯৬৪ সালের ১১ই জুন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে এএনসির সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্বদানের অভিযোগ আনা হয় ও শাস্তি দেয়া হয়। [৩৬] ম্যান্ডেলা কারাগারে বন্দী থাকার সময়ে পুলিশ এএনসির প্রথমসারির নেতাদের ১৯৬৩ সালের ১১ই জুলাই জোহানেসবার্গের কাছের রিভোনিয়ার লিলেসলিফ ফার্ম থেকে গ্রেপ্তার করে।

রিভোনিয়ার মামলা নামে খ্যাত এই মামলায় ম্যান্ডেলাকেও অভিযুক্ত করা হয়। সরকারের প্রধান আইনজীবী ডক্টর পারসি ইউটার ম্যান্ডেলাসহ এএনসির নেতাদের অন্তর্ঘাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। এ ছাড়াও তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। [৩৭] ম্যান্ডেলা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ স্বীকার করে নেন। কিন্তু বিদেশী রাষ্ট্রের দালাল হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য আনা দেশদ্রোহিতার অভিযোগটি ম্যান্ডেলা অস্বীকার করেন।

[৩৭] প্রিটোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ম্যান্ডেলা ১৯৬৪ সালের ২০শে এপ্রিল তারিখে তাঁর জবানবন্দী দেন। ম্যান্ডেলা ব্যাখ্যা করেন, কেনো এএনসি সশস্ত্র আন্দোলন বেছে নিয়েছে। [৩৮] ম্যান্ডেলা বলেন যে, বহু বছর ধরে এএনসি অহিংস আন্দোলন চালিয়ে এসেছিলো। কিন্তু শার্পভিলের গণহত্যার পর তাঁরা অহিংস আন্দোলনের পথ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। [৩৯] এই গণহত্যা, কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারকে অবজ্ঞা করে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ঘোষণা দেয়া, জরুরি অবস্থার ঘোষণা এবং এএনসিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে ম্যান্ডেলা ও তাঁর সহযোদ্ধারা অন্তর্ঘাতমূলক সশস্ত্র সংগ্রামকেই বেছে নেন।

তাঁদের মতে সশস্ত্র আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো কিছুই হতো বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের নামান্তর। [৩৯] ম্যান্ডেলা আদালতে আরো বলেন, ১৯৬১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তারিখে তাঁরা উমখোন্তো উই সিযওয়ে অর্থাৎ এমকে-এর ম্যানিফেস্টো লিখেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য হিসাবে তাঁরা বেছে নেন সশস্ত্র সংগ্রাম। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিলো, অন্তর্ঘাতের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশী বিনিয়োগকে তাঁরা নিরুৎসাহিত করবেন, আর এর মাধ্যমে বর্ণবাদী ন্যাশনাল পার্টির সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করবেন। [৪০] জবানবন্দীর শেষে ম্যান্ডেলা বলেন, During my lifetime I have dedicated myself to the struggle of the African people. I have fought against white domination, and I have fought against black domination. I have cherished the ideal of a democratic and free society in which all persons live together in harmony and with equal opportunities. It is an ideal which I hope to live for and to achieve. But if needs be, it is an ideal for which I am prepared to die. [২৮] ম্যান্ডেলার পক্ষে ব্র্যাম ফিশার, ভার্নন বেরাঞ্জ, হ্যারি শোয়ার্জ, জোয়েল জফ, আর্থার চাসকালসন, এবং জর্জ বিজোস ওকালতি করেন।

[৪১] মামলার শেষভাগে হ্যারল্ড হ্যানসন আইনী সহায়তার জন্য যোগ দেন। [৪২] কিন্তু মামলায় রাস্টি বার্নস্টেইন ছাড়া অন্য সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে ১৯৬৪ সালের ১২ই জুন দেয়া রায়ে ফাঁসীর বদলে তাঁদের সবাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। [৪২] ৫ তথ্যসূত্র 1. ↑ Mandela 1996, pp. 16, 17 2. ↑ ২.০ ২.১ South Africa: Celebrating Mandela At 90। AllAfrica.com (17 July 2008)।

28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 3. ↑ Kopkind, Andrew (16 March 1990)। Book Review - Higher than Hope। Entertainment Weekly। Time Inc.।

28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 4. ↑ ৪.০ ৪.১ Mafela, Munzhedzi James (October 2008)। The revelation of African culture in Long Walk to Freedom। Indigenous Biography and Autobiography। Australian National University।

18 July 2009 তারিখে সংগৃহীত। 5. ↑ Guiloineau, Jean (2002)। Nelson Mandela: the early life of Rolihlahla Mandiba। North Atlantic Books প্রকাশিত। 13।

ISBN 1556434170। 6. ↑ ৬.০ ৬.১ ৬.২ Aikman (2003), pp 70–71 7. ↑ ৭.০ ৭.১ ৭.২ Mandela, Nelson (2006)। Mandela: The Authorized Portrait। Kansas City, Mo., Andrews McMeel Pub প্রকাশিত। 13।

ISBN 0-7407-5572-2। Retrieved on 26 May 2008। 8. ↑ Mandela 1996, p.7 9. ↑ ৯.০ ৯.১ ৯.২ Mandela, Nelson (1994)। Long Walk to Freedom। Little, Brown and Company প্রকাশিত।

। 10. ↑ Mandela 1996, p. 9. "No one in my family had ever attended school [...] On the first day of school my teacher, Miss Mdingane, gave each of us an English name. This was the custom among Africans in those days and was undoubtedly due to the British bias of our education. That day, Miss Mdingane told me that my new name was Nelson. Why this particular name I have no idea." 11. ↑ ১১.০ ১১.১ Mandela celebrates 90th birthday। BBC (17 July 2008)। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 12. ↑ Healdtown Comprehensive School।

Historic Schools Project: South Africa। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 13. ↑ Mandela 1996, pp. 18-19. 14. ↑ Mandela 1996, pp. 10, 20. 15. ↑ ১৫.০ ১৫.১ Nelson Mandela Biography - Early Years। Nelson Mandela Foundation। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত।

16. ↑ Nelson Mandela Children's Fund - Organise। Nelson Mandela Children's Fund। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 17. ↑ The 1948 election and the National Party Victory। South African History Online।

28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 18. ↑ The Defiance Campaign। African National Congress। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 19. ↑ Congress of the People, 1955।

African National Congress। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 20. ↑ Callinicos, Luli (2004)। Oliver Tambo: Beyond the Engeli Mountains। New Africa Books প্রকাশিত।

173। ISBN 0864866666। 21. ↑ Mandela, Nelson (3 January 2000)। The Sacred Warrior। Time 100: The Most Important People of the Century।

26 May 2008 তারিখে সংগৃহীত। 22. ↑ Bhana, Surendra; Vahed, Goolam (2005)। The Making of a Political Reformer: Gandhi in South Africa, 1893–1914 149। 23. ↑ Nelson Mandela's Testimony at the Treason Trial 1956-60। African National Congress।

28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 24. ↑ ২৪.০ ২৪.১ ANC - Statement to the Truth and Reconciliation Commission। African National Congress (August 1996)। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 25. ↑ Umkhonto is Born।

African National Congress। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 26. ↑ ২৬.০ ২৬.১ ২৬.২ Whittaker, David J. (2003)। The Terrorism Reader; Updated; Routledge প্রকাশিত। 244।

ISBN 0415301017। 27. ↑ Tell me about the bomb at the brickworks - Frontline The Long Walk of Nelson Mandela। PBS। 28. ↑ ২৮.০ ২৮.১ Mandela, Nelson (20 April 1964)। "I am Prepared to Die" — Nelson Mandela's statement from the dock at the opening of the defence case in the Rivonia Trial।

African National Congress। 26 May 2008 তারিখে সংগৃহীত। 29. ↑ 2 November 1998, “Mandela admits ANC violated rights, too”, Financial Times 30. ↑ BBC News: US shamed by Mandela terror link (10 April 2008)। 31. ↑ Mandela taken off US terror list। BBC News (1 July 2008)।

1 July 2008 তারিখে সংগৃহীত। 32. ↑ 5 August - This day in history। The History Channel। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 33. ↑ Blum, William।

How the CIA sent Nelson Mandela to prison for 28 years। Third World Traveller। 26 May 2008 তারিখে সংগৃহীত। 34. ↑ Stein, Jeff (14 November 1996)। Our Man in South Africa।

Salon.com। 26 May 2008 তারিখে সংগৃহীত। 35. ↑ Weiner, Tim (2007)। Legacy of Ashes। Penguin Group প্রকাশিত।

362। ISBN 978-1-846-14046-4। 36. ↑ Katwala, Sunder (11 February 2001)। The Rivonia Trial। The Guardian।

28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 37. ↑ ৩৭.০ ৩৭.১ ANC Lilliesleaf Farm arrests। South African History Online (11 July 1963)। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 38. ↑ Mandela, Nelson (20 April 1964)।

An ideal for which I am prepared to die। The Guardian। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 39. ↑ ৩৯.০ ৩৯.১ 4 April 1960, “The Sharpeville Massacre”, TIME। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত।

40. ↑ Manifesto of Umkhonto we Sizwe। African National Congress (16 December 1961)। 26 May 2008 তারিখে সংগৃহীত। 41. ↑ Rivonia Trial Papers। Aluka।

28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত। 42. ↑ ৪২.০ ৪২.১ Toward Robben Island: The Rivonia Trial। African National Congress। 28 October 2008 তারিখে সংগৃহীত।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।