আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ যুগের লালসালু



সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর লালসালু উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ জঙ্গলের ভেতরে থাকা বহু প্রাচীন একটি কবরকে ‘মোদাচ্ছের পীরের মাজার’ বলে শুরু করেছিল জমজমাট ব্যবসা। তাতে খুলে গিয়েছিল ভণ্ড মজিদের ভাগ্য। এ যুগেও থেমে নেই মজিদদের ব্যবসা। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া চা-বাগান এলাকায় আরেকটি লালসালুর জন্ম হতে যাচ্ছিল। কিন্তু প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা হতে পারেনি।

মাটি খুঁড়তে গিয়ে গত মঙ্গলবার একটি পুরোনো স্থাপনার সন্ধান মেলে। এলাকার একটি চক্র এটিকে ‘পীরের মাজার’ বলে প্রচারণা চালিয়ে দানবাক্স বসিয়ে ব্যবসা করছে। তবে সেটি আসলেই কোনো পীরের মাজার কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন। দানের টাকা সংগ্রহকারী চক্রটিকে হটিয়ে দিয়ে প্রশাসন স্থাপনাটি ঘিরে রেখেছে। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মতিউল ইসলাম জানান, ‘এটি শত বছরের পুরোনো কোনো স্থাপনা হতে পারে।

আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানাব। আগে ওই এলাকা খাসিয়া জনগোষ্ঠীর অধীনে ছিল। ’ সীমান্তবর্তী রানীটিলায় গত মঙ্গলবার চা-শ্রমিকেরা মাটি খোঁড়ার সময় স্থাপনাটির সন্ধান পান। এটি ইট-পাথরের তৈরি। অনেকটা কবর আকৃতির।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বড়গ্রামের এবাদুর রহমান, সেলিম আহমদ, খালেদ হোসেন, আবদুস শুকুর ও সুলেমান মিয়া প্রথমে এটিকে ‘পীরের মাজার’ বলে প্রচারণা শুরু করেন। তাঁরা দাবি করেন, বড়গ্রাম মসজিদের ইমাম জালাল উদ্দিন স্থাপনাটি দেখে ‘ধ্যানে’ বসেন। তিনি জানান, এটি কোনো পীরের মাজার হতে পারে। ইমামের কথার ভিত্তিতে মাজার সংরক্ষণের নামে তাঁরা একটি কমিটি গঠন করেন বলে জানান। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্থাপনাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়।

স্থাপনা সংরক্ষণের জন্য তাঁরা সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেন। তবে এ ব্যাপারে ইমাম জালাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পীরের মাজার বলে কারও কাছে তিনি কিছু বলেননি। তাঁর নাম দিয়ে কেউ কোনো ব্যবসা করে থাকলে তিনি এর জন্য দায়ী নন। মাজার সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা শুক্রবারকে (গতকাল) সামনে রেখে স্থাপনাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেন এবং একটি ফটক তৈরি করেন। গতকাল সকাল থেকে সেখানে লোকজনের সমাগম বাড়তে থাকে।

লোকজন দেখে সেখানে দোকানপাটও বসতে থাকে। একপর্যায়ে বসানো হয় মাজার সংরক্ষণের নামে দানবাক্স। আগত মানুষের অনেকেই এই বাক্সে টাকা দেন। মাজার সংরক্ষণ কমিটির সদস্য এবাদুর রহমান জানান, ইমাম জালাল উদ্দিনের কথামতো তাঁরা মাজার সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখন তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, ‘না জেনে এমনটা করা ঠিক হয়নি। ’ সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ লোকসমাগমের খবর পেয়ে দুপুরের দিকে ২১ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল কাদিরের নেতৃত্বে বিডিআরের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। তারা ‘পীরের মাজার’ বলে প্রচারের সঙ্গে জড়িত লোকজনকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয় এবং বেড়া ও ফটক ভেঙে ফেলে। বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিডিআর অধিনায়ক বলেছেন, ‘এটি কোনো কবর বা সমাধি হতে পারে।

’ কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান খান বলেন, পীরের মাজার বা অন্য কোনো নামে কেউ যাতে কোনো ধরনের ব্যবসা করতে না পারে, সে জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।