আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশু চরিত্র গঠনে মহানবীর আদর্শ

আমি একজন প্রবাসী

মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন বিশ্ববাসী আজ একবিংশ শতাব্দির প্রথম সোপানে। পেরিয়ে আসছে মানব সভ্যতার অনেক ধাপ। অতিক্রম করছে জ্ঞান বিজ্ঞানের নতুন নতুন অধ্যায়। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় আজকে দুনিয়ার মানুষ তাদের আসলকে (মূল)ম্লান করে পিছনে ফেলে নকলকে বিকশিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাতে প্রতিটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি আজ বাতিল প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত মহা ব্যস্ত ও প্রাণ ওষ্ঠাগত।

আমরা জানি আমাদের মূল হলো “আল-কুরআন ও আল-হাদীস”-এর আদর্শ ও মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা তা না করে আমরা তাগুত, শয়তান ও মানব রচিত মতবাদ তথা অন্যান্য অপক্ত রচিত মতবাদ প্রতিষ্ঠায় পঞ্চমুখ। যার ফলে আমাদের চরিত্র, তাহযীব, তামাদ্দুন, আদর্শ, কৃষ্টি সব হারিয়ে নৈতিক অবক্ষয়ের মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে অশ্লীলতা ও বেহায়াপণার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছি। তাই আমরা সেই জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগের আদর্শ নামের অনাদর্শের ভুষণ বেছে নিয়েছি। একজন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সুশিক্ষিত মুমেন বান্দা যদি তার সুস্থ চিন্তাধারার নিরিখে “জাহেলী যুগ, আলোর যুগ, আর বর্তমান যুগ” এ তিন যুগের বাস্তবচিত্র তুলনা মূলক পর্যলোচনা করেন, তাহলে আমাদের বর্তমান অবস্থানের চিত্র সত্যই বিকশিত হয়ে উঠবে। আমাদের বিপরীত মুখী পদচারণার অভাবনীয় ক্ষতিকর ছোঁবল থেকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা জাতিকে বাঁচাতে মূল চাবি-কাঠি হাতে নিতে হবে, আর তা হলো আমাদের কচি-কাঁচা “শিশু-কিশোর।

” প্রবাদ আছে; কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ * পাকলে করে ট্যাস ট্যাস। আমাদের শিশু-কিশোররাই কাঙ্খিত সমাজ গঠনের মূল ক্ষেত্র। যদি আমরা শিশুদের আদর্শ-চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণ দিতে চাই, তা হলে মহানবীর (সাঃ) আদর্শ অনুসরণ করা ব্যতীত কোন গত্যন্তর নেই। স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন; নিঃসন্দেহে তুমি নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন। (সূরা: কলম- ৪) অন্যত্র আল্লাহ বলেন: আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।

(সূরা: আহযাব ২১) তাই আসুন শিশু-কিশেঅরদের প্রতি মহনবীর আদর্শ কোন ধরণের ছিল তা আমরা পর্যালোচনা করি। শিশু-কিশোরদের মন অত্যন্ত কোমল ও পবিত্র। তাদরে মনে যদি কোন বস্তু (ভাল-মন্দ) স্থান করে নেয়, তা তাদের ভবিষ্যত জীবনেও থেকে যায়। তাই শিশু-কিশোরদের সাথে কখনো খেলার ছলেও মিথ্যা বলা প্রতারণা করা ঠিক নয়। রাসূল (সাঃ) শিশু-কিশোরদের সাথে সরল-সত্য ও øেহময় ব্যবহার করেছেন এবং আমাদেরকেও করার নির্দেশ দিয়েছেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন: আমার মা আমাকে ডাক দিয়েছেন, এমতবাস্থায় যে, রাসূল (সাঃ) আমাদের ঘরে বসা ছিলেন। মা বললেন এদিকে এস আমি তোমাকে একটি জিনিস দেব। তখন রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কী দিতে চাও? আম্মা বললেন, আমি তাকে খেজুর দিতে চাই। রাসূল (সাঃ) বললেন: তুমি ওকে কিছু দেবার জন্য ডেকে যদি না দিতে তাহলে তোমার নামায় তিনটি মিথ্যে হয়ে যেত। মানুষের মহৎ ও উন্নত জীবন গড়ে ওঠে তার শৈশব ও কৈশোর জীবনের উপর ভিত্তি করে।

একটি আদর্শ সমাজের ভিত্তি নির্ভর করে আদর্শ “মা” তার সন্তানকে পবিত্র ও নৈতিক শিক্ষাদান ও সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশে লালন-পালনের উপর। কেননা পরিবেশ হলো শিশু-কিশোরদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষাঙ্গন। অনেক সময় শিশুরা শিশুসুলভ চপলতার কারণে বাবা-মা, ভাই-বোন পরিবারস্থ বড়দের ডাকে সাড়া দেয়না বিধায়, বড়রা তাদেরকে কাছে নিয়ে যাবার জন্য কিছু দেবার লোভ দেখালে তাতে ওরা সাড়া দেয়। বড়রা যদি তাদের ওয়াদা পূরণ করেন তাতে শিশুরা অত্যন্ত খুশি হয়। কিন্তু দেবার বাহানা করে কিছু না দিলে কচি মনে প্রতারণার দাগ পয়দা হয়।

তামাশাচ্ছলে এ ধরনের ব্যবহার বা ওয়াদা মিথ্যা বলে বিবেচিত। এমন ব্যবহারে শিশু-কিশোররা অতি শৈশবেই মিথ্যা ও প্রতারণার অনুশীলন করার সবক পেয়ে ভবিষ্যত জীবনেও তারা মিথ্যা ও প্রতারণার অনুশীলন করার সুযোগ পায়। রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন; কোন অবস্থাতে না স্বাভাবিক অবস্থায়, না তামাশাচ্ছলে। আর তোমাদের কারো জন্য নিজ সন্তানকে কিছু দেবার ওয়াদা করে না দেয়া জায়েয নয়। অতএব যারা শিশুদের সাথে তামাশাচ্ছলে মিথ্যা বলাকে খারাপ মনে করে না তাদের সতর্ক হওয়া উচিত।

কেননা এতে বড়দের আমল নামায় মিথ্যা পাপ লেখা হয়, আর ছোটদের মনে মিথ্যা ও অন্যায় বোধ স্বাভাবিক বলে স্থান পায়। ফলে বাবা-মা যেমন পাপী হয়, তেমনি শিশুদের ভবিষ্যত ক্রমে অকল্যাণকর হয়ে উঠে। তাই বলে, হাসি-কৌতুক নিষিদ্ধ নয়। রাসূল (সাঃ) ও হাসি-কৌতুক করতেন, কিন্তু আনন্দ ফূর্তির জন্য তিনি অসত্য কোন কিছু বলতেন না। একবার হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর এক প্রশ্নের জবাবে রাসূল (সাঃ) বললেন: অসত্য বা প্রকৃত ঘটনার বিপরীত কিছু বল না।

রসিকতার ব্যাপারে হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন: নবী করীম (সাঃ) এক বৃদ্ধাকে বলেছিলেন, বৃদ্ধারা জান্নাতে যাবে না। বৃদ্ধা পেরেশান হয়ে আরয করলো, তাদের অপরাধটা কী? নবী করীম (সাঃ) বললেন: তুমি কী কুরআনের এ আয়াত পড়নি? “আমরা তাদেরকে (নারীদেরকে) পূণরায় এমনভাবে সৃষ্টি করবো যে তারা হবে কুমারী, সমবয়স্কা” (সূরা: ওয়াকিয়া ৩৫-৩৭) এই ছোট্ট ঘটনা থেকে বুঝা যায়, রাসূল (সাঃ) রসিকতার মধ্যেও কেমন সত্য কথাটি প্রকাশ করেছেন। তাই প্রত্যেক মা-বাবার উচিত শিশুদেরকে সত্য ও আদর্শ শিক্ষা প্রদানের জন্য জীবনের শুরু থেকেই তাদের সাথে সাবধানে কথা বার্ত বলা। অন্যথায় শিশু চরিত্র অংকুরেই বিনষ্ট করার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রকট। শিশু যখন একটু বড় হয়, তখন তার হাতেই বই-খাতা দিয়ে স্কুলে মকতবে পাঠিয়ে দেয়া হয়, তাতে মা-বাবার সাথে শিক্ষকেরও দায়িত্ব চলে আসে শিশুর আদর্শ জীবন, উন্নত চরিত্র ও নৈতিক মূল্যবোধের যথাযথ ধারণা ও প্রশিক্ষণ দেয়ার।

বই পত্রে যেসব কিচ্ছা কাহিনী থাকে, তার ভাল-মন্দের উভয় দিকের স্পষ্ট ধারণা প্রদান করা শিক্ষক ও মা-বাবার এমনই একটি দায়িত্ব যাতে শিশু সত্যের প্রতি আগ্রহ এবং মিথ্যার প্রতি ঘৃণা জন্মা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক/দার্শনিক ইবনে খালদুন বলেন, “শৈশব কালীন শিক্ষা অধিকতর দৃঢ় হয় এবং তার পরবর্তী শিক্ষার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। ” কেননা অন্তরে প্রথম অনু প্রবিষ্ট বিষয়ই যোগ্য দক্ষতার ভিত্তি স্বরূপ। এ ভিত্তির দৃঢ়তা ও উহার প্রক্রিয়া অনুসারেই ছোটদের অবস্থা বিকশিত হয়ে থাকে। (আল মুকাদ্দিমা) রাসূলে কারীম (সাঃ) এরশাদ করেন: “লোকদের নিজস্ব পরিবার সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রশ্ন করা হবে।

” (মুসনাদে আহমদ) এ হাদীসের আলোকে পরিবারের প্রধানের দায়িত্ব তার অভিভাবকত্বের অধীনে যারা থাকে তাদেরকে দীনী শিক্ষা ও জ্ঞান প্রদান এবং সচ্চরিত্র আল্লাহ ভীরু মানুষ তৈরী করা। আমরা বিশ্বে শ্রেষ্ঠ মনিষীদের জীবনের প্রতি যদি তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো, তারা কিভাবে তাদের সন্তানদেরকে আল্লাহভীরু ও খাঁটি মুমেন হিসাবে গড়ে তুলতে কত তৎপর ছিলেন। দেখুন পবিত্র কুরআনে হযরত লোকমান তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছেন- “ হে বৎস! নামায কায়েম করো, সৎ কাজে আদেশ করো, এবং খারাপ কাজে নিষেধ করো, এবং যে কোন বিপদই আসুক না কেন, সে জন্য ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় এ কথাগুলোগুরুত্বপূর্ণ কাজের অন্যতম। (সূরা: লোকমান ১৭) হযরত লোকমান (আঃ) তাঁর মৃত্যুকালীন সময়ে তাঁর সন্তানদেরকে যে উপদেশ দিয়ে ছিলেন, তা শিশু-কিশোরদের তারবিয়্যাতের জন্য কতইনা সুন্দর উদাহরণ।

আল-কুরআনে এরশাদ হচ্ছে; যখন ইয়াকুবের মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন কি তোমরা উপস্থিত ছিলে? তখন সে নিজ পুত্রগণকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন জিনিসের ইবাদত করবে? তারা বলেছিল আমরা তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্য সে অদ্বিতীয় উপাস্যের ইবাদত করবো, এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকবো। (সূরা: বাকারা ১৩৩) নিজ পরিবারের সবাইকে ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার শিক্ষা রয়েছে এ আয়াতে। এ আয়াত আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা আমাদের পরিবার-পরিজন ও ছেলে মেয়েদেরকে দ্বীন সম্পর্কিত জ্ঞান, ঈমান ও চরিত্র উত্তম করে গড়ে তুলতে পারি। ইসলাম দুনিয়াবী শিক্ষা-দীক্ষার বিরুদ্ধে নয়। পার্থিব জীবনে লাভবান হবার উদ্দেশ্যে সন্তান-সন্ততিদের শিক্ষিত করার পাশা-পাশি দ্বীনী ও ঈমানী শিক্ষা থেকে যে দূরে না থাকে এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

এখানে খেয়াল করা অত্যন্ত প্রয়োজন যে, ঈমান, আকীদা বিশ্বাসের মূল তত্ব জীবন যাত্রা প্রণালী, নৈতিকতা মূল্যবোধ, কুরআন-হাদীস জ্ঞানার্জন ও তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, ইতিহাস দর্শন, সামাজিক রীতি-নীতি, সরকার গঠনের উপায়-পন্থা, রাজনীতির মৌলিক সূত্র ইত্যাদির উপযুক্ত শিক্ষা দ্বীনদার ঈমানদার আল্লাহভীরু যোগ্য শিক্ষক থেকে গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। আমরা সন্তান-সন্ততিকে শিক্ষা দিতে গিয়ে অনেক সময় ভূল করে বসি। তাই আমাদের প্রচেষ্টার ফল দাঁড়ায় হিতে বিপরীত। আরও খেয়াল রাখতে হবে যে, নেতিবাচক দিক মানুষকে দুর্বল করে। তাই শিশুদেরকে ভাল কাজের প্রতি উৎসাহ এবং মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা জন্মানোর চেষ্টা করতে হবে।

তারা কোন ভুল করলে তাদেরকে তিরস্কার না করে ওসব খারাপ দিক থেকে ক্রমশ ভালোর দিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যতœবান হতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ “তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর, এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুনাময়। (সূরা: তাগাবুন ১৪) অর্থাৎ ক্ষমাশীল দৃষ্টি ও øেহ ভালবাসার মাধ্যমে তাদেরকে সংশোধন করতে হবে, উত্তম হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

নীতিগতভাবে শিশুকে যত বেশি øেহ ও ভালবাসার বাঁধনে আটকে রাখা যায় সে ততবেশি বাধ্য, অনুগত, আজ্ঞাবহ, নিবেদিত প্রাণ ও প্রীতিভাজন হয়ে উঠে এবং তারবিয়্যাতের আহাল হয়ে উঠে এবং অকাতরে গ্রহণ করতে থাকে, আমাদের দেয় শিক্ষা, যে শিক্ষা গ্রহণে শিশুর মধ্যে কোন প্রকারের অনিহা পরিলক্ষিত হয় না। আর এ আদর্শ ও নমুনা আমরা মহানবী (সাঃ) এর জীবন দর্শন থেকে পেয়ে থাকি। তিনি শিশু কিশোরদের অত্যন্ত øেহ করতেন, মনে প্রাণে ভালবাসতেন। তিনিইতো মানবজাতির জন্য সর্বকালের সর্বযুগের আদর্শ। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন: একবার এক বেদুইন রাসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়।

রাসূল (সাঃ) তখন একটি ছোট্ট ছেলেকে আদর করছিলেন। বেদুইন রাসূল (সাঃ)-কে বললো; আপনারা নিজেদের সন্তানদের আদর করেন! আমরা কিন্তু করি না। উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন: আল্লাহ তা’আলা যদি তোমার হৃদয় থেকে ভালবাসা উদয়ের প্রবণতাকে কেড়ে তাহলে আমি কী করতে পারি। মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে শিশু কিশোরদের প্রতি øেহ ভালবাসার অনেক ইতিহাস রয়েছে: তন্মধ্যে হযরত যাদে বিন হারেছার ভালবাসার ইতিহাসই শীর্ষে। তিনি ছিলেন হযরত খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রাঃ)-এর ক্রীতদাস, অথচ রাসূল (সাঃ)-এর ভালবাসার বদৌলতে হয়েগেলেন হিব্বু রাসূল্লিাহ বা রাসূলুল্লাহর প্রীতিভাজন, পেয়ে গেলেন তাঁর সন্তানের মর্যাদা।

এ যায়েদের পুত্র হযরত উসামার প্রতিও ছিল রাসূল (সাঃ)-এর গভীর ভালবাসা। শিশু হযরত উসামা একবার দরজার চৌকাঠে ধাক্কা লেগে তার কপাল থেকে রক্ত ঝড়তে লাগল। রাসূল (সাঃ) হযরত আয়েশাকে রক্ত মুছে দিতে বললেন, কিন্তু তাতেও তিনি স্বস্তি পেলেন না। তিনি নিজেই উঠে গিয়ে পবিত্র হাতে রক্ত মুছে ক্ষত স্থানে চুমু দিতে লাগলেন এবং মিষ্টি-মধুর কথা বলে তাকে শান্তনা দিতে লাগলেন। রাসূল (সাঃ) যেমন নিজে শিশু কিশোরদের ভালবাসতেন তেমনি তাঁর পরিবারের সকল শিশুদের অত্যন্ত ভালবাসতেন।

রাসূল (সাঃ)-এর শিশুপ্রীতি ফুটে উঠে নিুোক্ত হাদীসে “ একবার রাসূল (সাঃ)-এর নিকট এক শিশুকে আনা হলে তিনি তাকে চুম্বন করলেন এবং বললন: এরা মানুষকে ভীরু ও কৃপণ করে দেয়, অথচ এরা হলো আল্লাহর ফুল। ” আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে আমাদের সন্তান-সন্ততির প্রতি ভালবাসার দোয়া শিখাতে এরশাদ করেন: “রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াজিনা ওয়াযুররিয়্যাতিনা কুররতা আ’ইউনিওঁ ওয়াজআ’লনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা” অথ্যাৎ “ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ¯¦রূপ কর। ” (সূরা ফুরকান: ৭৪) একটি পরিবারের শান্তি ও শ্রীবৃদ্ধির মূলে রয়েছে কোমলতা ও পরস্পরে ভালবাসা। এ ব্যাপারটি বুঝাতে রাসূল (সাঃ) হযরত আয়েশাকে নির্দেশ দেন; হে আয়েশা! কোমলতাকে নিজের জন্য অনিবার্য করে নাও এবং কঠোরতা ও লজ্জাহীনতা থেকে নিজেকে রক্ষা করো, কেননা যার মধ্যে নম্রতা ও কোমলতা আছে সে নম্রতাই তার শ্রীবৃদ্ধির কারণ হয়। আর যার থেকে নম্রতা ও কোমলতা উধাও হয়ে যায় তা ত্র“টিপূর্ণ হয়ে যায়।

(মেশকাত) আমাদের মনে রাখতে হবে সন্তান-সন্ততির প্রতি সীমাহীন ভালবাসার অনুসঙ্গ প্রয়োজনীয় শাসন। কারণ প্রত্যেক সঠিক অনুশাসন বেদনা ও শাস্তিক্রুদ্ধ প্রতিহিসংসার ফল নয় বরং যৌক্তিক প্রেমেরই বিকাশ। সমাজে নষ্ট সন্তান এরাই যাদের শাস্তি দেয়া হয় না কারণ তাদের পিতা-মাতার øেহ হলো অন্ধ এবং তাদের øেহের বস্তুর পরিপন্থি। রাসূলের (সাঃ) আদর্শে সন্তান-সন্ততির প্রতি সদাচরণের মাধ্যমে যে পরিবার গড়ে ওঠে তার সীমা পৃথিবীতেই শেষ হয়ে যায় না, বরং আখেরাতের অসীমকাল পর্যন্ত তা বি¯তৃত। এ ব্যাপারে আল্লাহর ওয়াদা “যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং তাদের সন্তানরা স্বঈমানে তাদের পদাঙ্ক অনসরণ করেছে আমি তাদের সে সব সন্তানকে তাদের সাথে (জান্নাতে) একত্রিত করে দেব।

আর তাদের আমলে কোন প্রকার ঘাটতি ঘটাবো না। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী। (সূরা তূর: ২১) আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। আমরা যদি আমাদের শিশুদেরকে রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শ অনুসরণে সৎচরিত্রবান করে গড়ে তুলি তাহলে পরবর্তী প্রজন্মকে তারা তাদের মতই করে গতে তুলার প্রয়াস পাবে। এ ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠতে শুরু করবে সুন্দর, শান্তিময় পরিবার আর ক্রমান্নয়ে সমাজ-জাতি ও দেশ।

যার ফলে আমরা আবার ফিরে পাবো আমাদের হারানো নৈতিক মূল্যবোধ আদর্শ, তাহযীব, তামাদ্দুন, কৃষ্টি, আদর্শ ব্যক্তি তথা সব কিছু। মুক্তি পাবো পাপ-পঙ্কিলতা, অশান্তি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুন্ঠন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, হানাহানি-কাটাকাটি, মারামারি ইত্যাদি জাহিলিয়াতের অন্ধকার যুগের ঘৃণ্যরীতি নীতির বিষধর ছোঁবল থেকে। আল্লাহ আমাদের চরিত্র গঠনের পবিত্র সাধনায় ব্রত থাকার তাওফীক দান কুরন। আমীন \

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.