আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঁচাতে হবে পাহাড়ের ভাষা....

বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার...

অস্তিত্ব একেবারেই বিপন্ন হয়ে পড়ার আগেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বসমূহের ভাষাগুলোর প্রয়োজনীয় সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং পৃষ্টপোষকতার দাবী জানাচ্ছেন বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মানুষেরা। পাশাপাশি তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ দেশের যেসব স্থানে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীসমূহ বসবাস করে সেইসব স্থানে শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদানের জন্য সরকারী উদ্যোগ এবং পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিও গুরুত্বারোপে করেছেন। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। কেউ কেউ মনে করেন এখনো সবগুলো জাতিগোষ্ঠীর বর্ণমালা সর্বসম্মত লেখ্য রূপ পায়নি। সংখ্যাগুরু চাকমাদের ক্ষেত্রে বর্ণমালা ৪০ টি,৩৯টি,নাকি ৩৪ টি,বা ৪৫টি হবে তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।

চাকমা ভাষা কাউন্সিল এর সদস্য প্রসন্ন কান্তি চাকমা বলেন-আমাদের বর্ণমালা বিতর্কের অবসান হয়েছে। এখন আমাদের বর্ণমালা ৩৯টি। কেউ নতুন বর্ণমালা আবিষ্কার করলে তো আমাদের কিছু করার নেই। অন্যদিকে চাকমা ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জুনোপহর একাডেমির অধ্যক্ষ স্মৃতি প্রকাশ চাকমা বলেন-চাকমা বর্ণমালা ৪০টি। কেউ খেয়াল খুশি মতো বানালে তো চলবেনা।

আর চাকমা ভাষা গবেষক এবং লেখক ডাঃ এসএন চাকমার দাবি চাকমা বর্ণমালা হলো ৩৪টি। এই বর্ণমালা বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। এমনকি চাকমা ভাষার বানানরীতি নিয়েও রয়েছে নানামূখী বিতর্ক। তবে ভাষা গবেষক বিজ্ঞান্তর চাকমা বলেন- এক্ষেত্রে বিকল্প ভাবতে হবে। হয় প্রাথমিক স্তরে প্রতি শ্রেণীতে নিজ ভাষার একটি বইকে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে পড়তে দেয়া যেতে পারে নতুবা এমএলই(মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ এডুকেশন সিস্টেম) চালু করা যেত পারে।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ এডুকেশন সিস্টেমে একটি শিশু প্রাথমিক স্তরে ক্লাস ওয়ানে মাতৃভাষা ৮০ ভাগ এবং জাতীয় ভাষা ২০ ভাগ,দ্বিতীয় শ্রেণীতে মাতৃভাষা ৭০ ভাগ জাতীয় ভাষা ৩০ ভাগ,তৃতীয় শ্রেণীতে মাতৃভাষা ৫০ ভাগ এবং জাতীয় ভাষা ৫০ ভাগ,চতুর্থ শ্রেণীতে নিজ ভাষা ৩০ ভাগ জাতীয় ভাষা ৭০ ভাগ এবং পঞ্চম শ্রেণীতে মাতৃভাষা ১০ ভাগ এবং জাতীয় ভাষা ৯০ ভাগ হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং ষষ্ঠ শ্রেনীতে যাওয়ার পর সে আর নিজস্ব ভাষায় নয় কেবলমাত্র জাতীয় ভাষা বা আন্তর্জাতিক ভাষায় শিক্ষা লাভ করতে পারবে। কিন্তু প্রতি শ্রেণীতে ভাষা শিক্ষার একটি অতিরিক্ত বই থাকার বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেন তিনি। অন্যদিকে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে জেলা পরিষদকে কর্তৃত্ব প্রদান করা হলেও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে বেশিদূর এগোতে পারেনি। এ পর্যন্ত জেলা পরিষদগুলোর উদোগের মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এর মাধ্যমে আগ্রহী শিক্ষকদের চাকমা বর্ণমালা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ এর সহযোগিতায় একটি বই তৈরি করেছে,যা এখনো মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়নি আর বান্দরবান জেলা পরিষদ হাস্যকর ভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এবং মন্ত্রনালয়ের কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই সরাসরি প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের সবগুলো বই বম এবং মারমা ভাষায় অনুবাদ করে ফেলে রেখেছে। এই বইগুলোর কাজ সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ম্যামাচিং এর আমলে শুরু হলেও থানজামা লুসাই চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর তা উদ্বোধন করার কথা ছিলো পররাষ্ট্র (এবং সেই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকা) উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর।

নানা আয়োজন করা হলেও তিনি সেই সময় না আসায় এই বই গুলোর মোড়ক উম্মোচন করা সম্ভব হয়নি। এই বই গুলোর অনুবাদের জন্য যেমন কোন অনুমতি নেয়া হয়নি আবার কিছু কিছু অংশে আপত্তিকরভাবে সংশোধন এবং পরিবর্তন করা হয়েছে, ফলে সরকারের সংশ্লিস্ট বিভাগও ক্ষুদ্ধ হয়েছিলো। আর এই কারণেই হয়ত এই বইগুলো আলোর মুখ দেখেনি। সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজ্ঞুলিকা খীসা মনে করেন- আগে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার ভাষাকে রক্ষা করতে হবে,তারপর আসবে শেখার বিষয়টি। তিনি বলেন-আমি এত বছর শিক্ষকতা করেছি,চাকরী জীবন থেকে অবসর নিয়েছি কিন্তু আমিও নিজের মাতৃভাষার বর্ণমালা চিনিনা,জানিনা,এটা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার।

এই শিক্ষাবিদ মনে করেন- পাহাড়ের শিশুরা জন্মের পর কথা বলার শুরুতেই যে ভাষায় তার মাকে ডাকে সে ভাষাটি তার শিক্ষা কারিকুলামে থাকা উচিত,তবে অবশ্যই পাশাপাশি বাংলা এবং অন্যান্য সব কিছুই থাকতে হবে। ’ তবে পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার ভাষার প্রাথমিক স্তরে প্রয়োগে সরকারকে কোন বাধা মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবী আগে সবগুলো ভাষার বিতর্কহীন স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে হবে, পূর্ণাঙ্গ ভাষা গোষ্ঠিভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ণ নাকি প্রতি শ্রেণীতে একটি বই অথবা এমএলই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে সেই বিতর্কের অবসান করতে হবে,আদৌ পাহাড়ী শিশুরা তিন তিনটি ভাষার চাপ সহ্য করতে পারবে কিনা সেই বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকার এগিয়ে এলেই সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি সম্ভাব্য সুন্দর সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন রাঙামাটি উপজাতীয় সাং®কৃতিক ইন্সটিটিউট এর পরিচালক রুনেল চাকমা।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.